-->

আল-কোরআনে বিজ্ঞান অন্বেষণ

(১) 
     
     গোটা বিশ্ব জাহানের একমাত্র লা-শরীক মহান প্রভু আল্লাহ্‌ পাকের তরফ থেকে তাঁর শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষের প্রতি প্রদত্ত শ্রেষ্ঠতম দান নিঃসন্দেহে ‘আল-কুরআনুল কারীম’। মহান ও অতুলনীয় এই গ্রন্থের সংস্পর্শে যারা না এসেছে তারা অন্তহীন দুর্ভাগ্যের অধিকারী। মহাপবিত্র এই গ্রন্থের অগণিত বৈশিষ্টের মধ্যে একটি এই যে, “ ইহা সব ধরণের জ্ঞানের আঁধার।” কিন্তু এই জ্ঞান আহরণ করা কি এতই সহজ ?



     বর্তমান যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগ। তাত্ত্বিক এবং প্রায়োগিক, উভয় ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের নিত্য নতুন আবিষ্কারের প্লাবনে জগত ভেসে যাচ্ছে। পাশাপাশি বর্তমানে পবিত্র কুরআন শরীফের চর্চাও লক্ষণীয় হারে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিতদের মধ্যে এই বিষয়টি খুব বেশী পরিমাণে দৃষ্টিগোচর হয়। কিন্তু ইহাদের অনেকের মধ্যে একটি অদ্ভুত প্রবণতা বেশ ভালভাবেই চোখে পড়ে। তারা এ কথা প্রমাণ করার জন্য বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠে যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার সমূহ যথাঃ বিদ্যুৎ, চুম্বক, আলো, মহাকর্ষ তত্ত্ব, আপেক্ষিক তত্ত্ব, বিগ-ব্যাংগ তত্ত্ব, ডিএনএ কোড ইত্যাদির কথা পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত আছে।

জীন যখন বন্ধু

আসাদ ঘুমাচ্ছে                                      
গভীর ঘুম                                           
পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে কখন ঘুমাতে গেছে নিজেও জানে না বাতি নিভিয়েছিল কী না, দরজা-জানালা ঠিকমত বন্ধ করেছিল কী না ইত্যাদি কিছুই বলতে পারবে না                         
আসাদ ক্লাস এইটে পড়ে বয়স তেরো কিন্তু রুমে সে একাই থাকে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ দুঃসাহসী ভয়-ডর ছাড়াই যেন তাকে তৈরি করা হয়েছে। দাদা বলেন, আসাদ আসলে আসাদ-ই (সিংহ)

       
সেই গভীর ঘুমটা আচানক ভেঙ্গে গেল। মনে হচ্ছে গায়ের ওপর ভারী কিছু বসে আছে। বড় বড় মোলায়েম পশমের পরশ অনুভূত হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিল যে, চোখ কচলে ভাল করে দেখতে হবে। কিন্তু, একি! চোখ যে খোলা যাচ্ছেনা, হাত-ও নাড়তে পারছেনা। চোখ, হাত-পা সব কিছু যেন চেপে ধরে রাখা হয়েছে। নাকের ওপর ভারী শ্বাস পড়ছে। ভাল্লুক জাতীয় কোন জন্তু বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ভাল্লুকের তো এতক্ষনে তাকে মেরে কেটে খেয়ে-দেয়ে সাবাড় করে ফেলার কথা। তা-ও করছে না। তবে কি ?             
জীন-ভুত?

আবু জেহেলের প্রেতাত্মা

ধৃষ্টতার একটা সীমা আছে। তবে সেটা মনুষ্য সন্তানের, এমনকি জানোয়ারেরও। তবে মানব সুরতের ভেতরে যদি কোনো জানোয়ার বাস করে তার বোধহয় সেটা থাকে না। এমন কিছু প্রাণী সকল সময়ে পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবে। এদের উদ্দেশ্য একটাই, সমাজে অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। তেমনি একজন হলেন আমাদের বর্তমান সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।


গত মাসের ২৮ তারিখে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কের টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। ...এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়, হজের জন্য ২০ লক্ষ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই।

চাই ‘হরতাল এবং অবরোধ’ মন্ত্রণালয়


একটি মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্র সেনা কর্তৃক আহুত একটি হরতাল ৩১/৮/২০১৪ তারিখে দেশব্যাপী (বনা কবলিত এলাকা বাদে) পালিত হয়েছে দীর্ঘদিনের হরতাল খরায় আক্রান্ত এই দেশে হরতালটি সকলের কাছে মোটামোটিভাবে উপভোগ্য হয়েছে তবে এই হরতালটির বিশেষত্ব এই যে, এটি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং নিরুত্তাপ কোথাও কোন ভাংচুর কিংবা জ্বালাও-পোড়াও জাতিয় ঘটনা ঘটে নি হরতালের আগের রাতে কিংবা হরতালের দিনে ধর-পাকড়ের ঘটনা না ঘটায়, বুঝতে কষ্ট হয় না যে, হরতালে সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন ছিল উর্দু ভাষাতে প্রবাদ আছে, “আকল মন্দ কে লিয়ে ইশারায় কাফি হ্যাঁয়” বিগত বৎসর সমূহের হরতালগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের ফলে আমার মনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার উদয় হয়েছে দেশ ও জাতির কল্যাণে আমার এই চিন্তাধারাটি পরিবেশন করা অতীব জরুরী মনে করছি 



গৌড় চন্দ্রিকা শেষ এবারে শিরোনাম মোতাবেক আসল কথার পালা তবে তার আগে অতীব জরুরী একটি কথা বলতেই হয়   অন্যথায়  ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপক সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না কথাখানা আমার নিজকে নিয়ে

জ্বীনের থাপ্পড়

দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে মূসারা। আসলে দিন নয়, অনেক বৎসর বললে বিশুদ্ধ হবে। মূসারা বেশ কয়েকজন ভাই। মূসার বড় ভাইরা আসলেও, মূসা এবং তার ছোট ভাই ঈসা— এ দু’জন আগে কখনো গ্রামে আসেনি। সুতরাং আসার আগ থেকেই কৌতূহলে তাদের দম বন্ধ যাবার উপক্রম হয়েছিল। গ্রামে ঢোকার পর যেন তারা বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো।



মূসাদের গ্রামটি খুব সুন্দর। গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবহমান বিখ্যাত ব্রহ্মপুত্র নদ। যদিও পলি জমে আর ভূমি দস্যুদের খপ্পরে পড়ে সে এখন শীর্ণকায়, কিন্তু পাড়ে দাঁড়ালে সহজেই উপলব্ধি করা যায় তার অতীত বিশালতা! অথচ এখন?
ছোট্ট ছোট্ট ডিঙি নৌকাতে মানুষ এপার-ওপার আসা-যাওয়া করছে, কোথাও কোথাও হেঁটেই পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দাদার কাছে শুনেছে যে একদা এই নদীতে বিশাল আকারের পাল তোলা নৌকা, এমনকি লঞ্চ-জাহাজ পর্যন্ত চলাচল করতো।

একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজের প্রত্যাশায়


প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ধর্ষণ, শিশুধর্ষণ, গণধর্ষণ দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। আইন হচ্ছে, সাজা হচ্ছে। কিন্তু অবস্থা যথা পূর্বং তথা পরং । বরঞ্চ পরিস্থিতি মন্দের চেয়ে মন্দতর হচ্ছে।  এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে যে শুধুমাত্র ২০১২ সালেই  বাংলাদেশে ৭৭১ জন নারী ( শিশু এবং বড় ) ধর্ষিতা হয়েছে , তন্মধ্যে গণধর্ষণের শিকার ১৫৭ জন আর ধর্ষণের পর খুন হয়েছে ১০৬ জন ( সূত্রঃ  দৈনিক কালের কণ্ঠ, ১২-০১-২০১৩ )। এমন অবস্থা কী  চলতেই থাকবে! 

এত্থেকে  কি নিস্তার নেই? খুবই যুক্তিসংগত একটি প্রশ্ন ।  তবে প্রশ্নটির জবাব খুঁজে পাওয়ার আগে আর একটি আত্নজিজ্ঞাসার উত্তর জানাটা অধিকতর জরুরীঃ আসলেই কি আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই ? আমরা কি প্রস্তুত আছি এমন একটি সমাজ তৈরির জন্য যেখানে থাকবে না ধর্ষণ কিংবা কোন ধরণের যৌন উক্তক্তকরণ 
(eve teasing) ?  আমাদের এই প্রস্তুতি কি যথার্থ ? না কি উহা কেবল স্লোগানসর্বস্ব ? প্রশ্নটি এই কারণে আসছে যে, ইদানীং নারী নির্যাতন বন্ধে নানা ধরণের সমাবেশ, সেমিনার, সিম্পজিয়াম ও মানববন্ধন হচ্ছে এবং আরও হয়তো হতে থাকবে। আমি এগুলোকে নিরুসাহিত করছি না । আমি ভাবছি এগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে। একটি  স্বতঃসিদ্ধ কথা আছে : কোন সমস্যা সমাধান করতে হলে তার গভীরে যেতে হয়, টান দিয়ে উপড়ে ফেলতে হয় সমস্যার জড় সহ । অথচ সেই প্রচেষ্টা কোথাও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । বরং এর উল্টোটাই অনেক জায়গায় চোখে পড়ে, বিশেষ করে ঐ সকল স্থানে যেখানে N.G.O. দের ব্যানারে ঐ সমস্ত সভা-সম্মেলন হয়ে থাকে।  


বিস্তারিত আলোচনায় যাবার প্রাক্কালে আমি ক্রমাগত ধর্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণসমূহকে দুটো ভাগে ভাগ করছিঃ Primary ( অর্থা মূল বা প্রধান) কারণ ও Secondary (অর্থা শাখা বা দ্বিতীয় পর্যায়ের)

যখন এমন হবে....

( পর্ব ১ ) :   

সে অনেক অনেক দিন পরের কথা  


ডক্টর আখদায়ুল কাজ্জাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এক ডাক সাইটে অধ্যাপক। Kajjabs Conjecture আর  বিজ্ঞানী হকিঙ-এর অসমাধিত কর্মের সমাধান এই দুটো বিষয় ভদ্রলোককে বিশ্বজোড়া খ্যাতি এনে দিয়েছে। তবে ভদ্রলোক কেবল বিজ্ঞানের নিরস শিক্ষক  নন; দেশের নানা সমস্যা নিয়ে তিনি প্রচুর মাথা ঘামান, লেখালেখি করেন, দিকনির্দেশনাও দিয়ে থাকেন। ভুতের মুখে কেন রাম নাম0 + 0  0 বই দুটো তাকে সর্বসাধারণ মহলে পরিচিত করেছে।    কারণে দেশের ভিতরে-বাহিরে ভক্তের অভাব নেই তার। রাস্তায় বের হলে সালাম আর সম্ভাষণের জবাব দিতে দিতে ভদ্রলোক ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অথচ এই বিশ্ববিখ্যাত ডক্টর সাহেবের ইদানীং বেশ কিছু রাত ধরে  ঠিকমত ঘূম হচ্ছে না। প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় দিন আর রাত গুলো পার করছেন। 


 
অবশ্য এই যন্ত্রণার কারণ না পারিবারিক, না পেশা সংক্রান্ত।  দীর্ঘদিন ধরে তিনি উপলব্ধি করে আসছেন যে, সমাজে একটি বড় ধরণের পরিবর্তন দরকার। আর সেই পরিবর্তনটা হতে হবে মানুষের চিন্তায়-চেতনায় ও কর্মে। বদলে যাও, বদলে দাও স্লোগানটা সেই শিশুকাল থেকে শুনে আসছেন। কিন্তু বদলাল আর কৈ ?  কিন্তু মৌলিকভাবে কি পরিবর্তনটা দরকার ? এটা ভাবতে ভাবতেই ভদ্রলোকের ঘুম গেছে গোল্লায়। রাত দিন এটা সেটা পড়ছেন, ভাবছেন আর কাপের পর কাপ কফি পান করছেন। কিন্তু কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারছেন না।

আহা, কী আনন্দ ! (হবুরাজা নিয়ে গল্প)


[লেখকের কথাঃ গল্প-কবিতা-উপন্যাস তথা সাহিত্যে এমন কিছু চরিত্র আছে, যেগুলো  মোটেও ঐতিহাসিক নয়; কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের চেয়েও ঢের মশহুর। উদাহরণস্বরূপ কার্টুন জগতের  টোকাই, চাচা চৌধুরী; রহস্য সাহিত্যে মাসুদ রানা, কিরীটী রায়, টারজান; ছোটগল্পে ফটিক, জোহরা; উপন্যাসে হিমু, মিসির আলী, মজিদ, কাদম্বিনী  ইত্যাদি এবং আরও অনেক অনেক চরিত্রের নাম করা যায়। তেমনি আর একটি চরিত্রের নাম ‘হবুরাজা’। অথচ এই অতি  বিখ্যাত চরিত্রটি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে মাত্র দুটো কবিতা পাওয়া যায়ঃ ‘জুতা আবিষ্কার’ (রচনায়ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ) এবং  ‘হবুচন্দ্ররাজা’ ( রচনায়ঃ সুনির্মল বসু )। অতএব, হবুরাজাকে নিয়ে কিছু একটা রচনা  করার শখ জাগল। ‘ আহা, কী আনন্দ !’  গল্পটি সেই শখের বহিঃপ্রকাশ। সার্থকতার বা ব্যর্থতার বিচারের ভার পাঠকের। তবে একটা কথা বলে রাখি, এটা শুধু গল্প। পাঠককে আনন্দ দেবার জন্য একটি নগণ্য প্রয়াস। এর সাথে রাজনীতির দূরতম সম্পর্কও নেই। সুতরাং, যদি কোথাও কোন মিল পরিলক্ষিত হয়, সেটা স্রেফ কাকতালীয়। উহাকে ক্ষমাসুন্দর ও সাহিত্যসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল। ]  
  

(১ম পর্বঃ  ২২ মার্চ ২০১৪ ) 
 
নাগরপুর রাজ্যের মহা প্রতাপান্বিত রাজা হবুচন্দ্র। অফিসিয়ালী তার নামটা এভাবে লেখা হয় নাগরপুর রাজ্যের জল-স্থল --অন্তরীক্ষের মহান রাজাধিরাজ ফিল্ড মার্শাল হবুচন্দ্র দ্য গ্রেট তার দাপটে বাঘে আর  ছাগলে এক ঘাটে  জল খায় না বটে, কিন্তু পুলিশ আর ফেরারী আসামী গলাগলি  করে হাটে। 

গোলাম মাওলা রনির একটি প্রবন্ধ ও কিছু কথা

গোলাম মাওলা রনি। একজন স্বনামধন্য সাবেক সংসদ সদস্য। বর্তমানে একজন বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও লব্ধ প্রতিষ্ঠিত লেখক। জনাব রনির লেখার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, লেখাগুলো গভীর চিন্তাপ্রসুত। বোঝা যায় যে, প্রতিটি লেখার পেছনে প্রচুর পড়াশুনা আছে। কিছু লেখা তো এক কথায় অসাধারণ। তার ‘এক পাগলা রাজা এবং ডাইনি মায়ের ইতিকথা!’লেখাটি (দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১১-০৩-২০১৪) আমি বিশেষভাবে সংগ্রহে রেখেছি।

তারপরও জনাব রনি একজন মানুষ। আর আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণ ব্যতীত কোনো মানুষই ভুল ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। জনাব রনির সাম্প্রতিক একটি লেখাতে বেশ বড় মাত্রার কিছু ভুল হয়ে গেছে। সেই লেখাটি একটি প্রবন্ধ। যার শিরোনাম ‘স্রষ্টার পক্ষ থেকে যখন শাস্তি আসে’(দৈনিক নয়া দিগন্ত, ২২-০৪-২০১৪)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমার এই আলোচনা।

তির্যক সমালোচক হিসাবে নয়, বরং একজন সহৃদয় পাঠক এবং সর্বোপরি একজন মুসলমান ভাই হিসাবে বিবেক তাড়িত হয়ে আমার এই কলম ধরা।

অঝোর ধারায়

মুক্তার মনের আনন্দ আর বাঁধ মানছে না আজ। জীবনে দুটো দিন বাদে এত আনন্দ আর কবে পেয়েছিল! হ্যাঁ, ঐ দুটো দিনের কথা অবশ্যই আলাদা। শুধু তার একারই নয়, মুক্তা মনে করে, দুনিয়ার সব মেয়েদের ক্ষেত্রেই দুটো বিশেষ দিন আছে। প্রথমটি হচ্ছে  বিয়ের দিন। ঐ দিন সে মানিকের বউ হয়ে এ ঘরে আসে। তখন অনুভব করেছিল যে,  তার  মেয়ে জনম সার্থক। অকূলপাথারে সে আর একা নয়। তার জীবন নৌকার মাঝি আছে । দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠতম খুশীর দিনটি ছিল বাবুর মা হবার দিন। উপলব্ধি হল যে এতদিনে তার নারী জনম পরিপূর্ণতা পেল।
: বৌ মা, জলদি যাও। পানির কাজ কম কর।বাবুর ঠাণ্ডা লেগে যাবে।
: মা, এখনি আসছি। শাশুড়ি তহুরা বেগমের ডাকে মুক্তা সাড়া দেয়।

তহুরা বেগম বিধবা, বয়স ষাটের কাছাকাছি। শখের হোমিও তাক্তার। তবে হাতযশটা বেশ ভাল। এলাকাতে সবাই এক নামে চেনে। এতক্ষণ বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করছিলেন। এইমাত্র শুইয়ে দিয়ে নিজের রুমে ফিরে যাচ্ছেন। হার্টের রোগী। নিয়ম মেনে চলেন।
: আপা,  আপনি যান তো। এবারের তাগাদাটা এল ময়নার মার তরফ থেকে।

০২-০৩-৭১

আজাদের চোখে ঘুম নেই। রজনী গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। অথচ আজাদ বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে, থেকে থেকে উঠে বসছে, আবার শুয়ে পড়ছে। কেন? কিসের জন্য? আজাদ কিছুই বুঝতে পারছে না। কেবল হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা টর্নেডোর আভাস পাচ্ছে। এ যেন এক প্রলয়ঙ্কারী সাইক্লোন, সব কিছু ভেঙ্গে-চুরে চুরমার করে দেবে । কিন্তু কী করে সম্ভব! আজাদ মাত্র কৈশোরে পদার্পণ করেছে, বয়স এখনো তেরো হয়নি।
আগামীকাল যেন কয় তারিখ? ২রা মার্চ, ১৯৭১ সাল। মিছিলে যেতে হবে।  যেমন করেই হোক, যেভাবেই হোক।
: কি রে, বাবা! ঘুম থেকে উঠবি না?
মায়ের ডাকে চোখ রগড়াতে রগড়াতে বিছানায় উঠে বসলো আজাদ। টেবিল ঘড়িটার দিকে তাকালো। সাড়ে  আটটার মতো বাজে। শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছে। অনেক রাত করে ঘুমানোর জের। মিছিল কি শুরু হয়ে গেছে? প্রশ্নটা মনে জাগতেই সব অলসতা নিমিষে উড়ে গেল। ঝটপট হাত মুখ-ধুয়ে নাস্তা খেতে বসলো।

একটি ছবির জন্য

ডায়েরির মলাটে ময়লার পুরু আস্তর জমে গেছে, পাতাগুলোও বেশ বিবর্ণ। বুঝা যায় যে অনেকদিন ধরা- ছোঁয়া হয়নি।
ওটা খালেদের ডায়েরি। ঠিক ডায়েরি নয়, ওটা তার কাছে সাত রাজার ধন। বাবার কাছ থেকে আবদার করে সে ডায়েরিটা চেয়ে নিয়েছিল।  কিন্তু সেটা সম্প্রতি বা দু’এক বছর আগে নয়। আজ থেকে বিয়াল্লিশটি বৎসর আগে অর্থাৎ সেই রক্তঝরা ১৯৭১ সালে। ও-  তখন অনে-ক ছোট, বয়সটা ছিল দশের নিচে। বাবাকে প্রায় দেখত রাতের বেলা ঘুমানোর আগে কাল  মলাটের একটি খাতায় কি যেন লিখছে। জিজ্ঞেস করাতে বাবা একদিন ডায়েরির ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলল। দু’দিন পরে খালেদের ডায়েরি লেখার শখ জাগল। আব্দার করতেই বাবা সবুজ মলাটের সুন্দর একটি  ডায়েরি কিনে দেয়। উৎসাহের চোটে প্রথম কয়দিন বেশ লেখা হয়। তারপর আর উৎসাহ ধরে রাখতে পারে নি। মাঝে মধ্যে লিখতে বসত, তাও বিশেষ কোন ঘটনা ঘটলে।

গোটা ১৯৭১ সালের ২০-২২ টি ঘটনা লেখা আছে। তারপর আর ডায়েরি লেখার কোন আগ্রহ খালেদের মাঝে তৈরি হয়নি। তাই আর কেনাও হয়নি। সেই বিশেষ ডায়েরি খানাই সযত্নে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে নামিয়ে পড়ে, অন্যকেও শুনায়। আজ আবার নামাল, তবে অনেক অনেক দিন পরে। উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় এসে দৃষ্টি আটকে গেল। সেই কাঁচা হাতে একটি ঘটনা লেখা। তবে শিরোনামও দেয়া আছে। শিরোনামটা দেয়ার আগে বেশ কাটাকুটিও আছে। অর্থাৎ শিরোনামটা ঠিক করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শেষমেশ গৃহীত শিরোনামটি : একটি ছবির জন্য। 
                             
খালেদ পড়তে শুরু করে, যদিও এর আগেও অনেক বার পড়া হয়েছে।
 ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখা । কিন্তু পড়া শুরু করা মাত্রই ঐ দিনের সব কিছু ছবির মত তার সামনে ভাসতে থাকে। প্রতিবারই এমনটি হয়। আজও তাই হল।

১৫ ই আগস্ট, ১৯৭১ সাল। সকাল সোয়া ৯ টার মত বাজে।                                           
: কি রে খালেদ, স্কুলে যাবি না ?                                       
: হ্যাঁ, মা যাব। এখুনি রেডি হচ্ছি।
                                 
মার ডাকে সাড়া দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে খালেদ প্রস্তুত হয়ে নেয়। দ্রুত কয়েক লোকমা ভাতও খেয়ে নেয়। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে স্কুলের ব্যাগটা খুলে দেখে নেয় সব কিছু ঠিকঠাক মত আছে কি না।

অচেনা মন

“ ওরা রাজাকার । ছয়জনের একটি দল। এলাকার মানুষ ওদেরকে এড়িয়ে চলে। ভয়ে এবং ঘৃণায় । পাক হানাদার বাহিনী এলাকাতে এসেছিল ৮-৯ মাস আগে। এলোপাথারী ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়ে থানা সদরে চলে যায়। মাঝে মধ্যে আসে, দু’একটা চক্কর মেরে যায়। সর্বসাধারণ সতর্ক হওয়ার একটা সুযোগ তবু পায়। কিন্তু এই রাজাকারের দল! ওদের কথা না বলাই ভাল। হেন কোন অপকর্ম নেই, যা গত কয়েকমাসে ওরা করে নাই। আমি অবশ্য স্বচক্ষে কিছু দেখি নাই। বেশীরভাগ শুনেছি দোকানদার দুলু চাচার কাছ থেকে। আরো দু’চার জনেও আমাকে কিছু কিছু জানিয়েছে। বয়সে ছোট। নচেৎ হয়তো আর অনেক কিছু জানা যেত।”

কথাগুলো খালেদের ডায়েরীতে লাল কালিতে লেখা। রাজাকারদের প্রতি খালেদের প্রচন্ড ঘৃণা। বাবা বলেছিল, ”বাহার ভাই-কে স্থানীয় রাজাকাররা পাক বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে পাক-বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে বাহার ভাই শহীদ হয় । ” নভেম্বরের শেষ দিকে খবর আসে যে, বাহার জেঠার একমাত্র ছেলে তারেক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে গেছে। চারটে মেয়ে নিয়ে জেঠি যে এখন কী করবে। ঐ বয়সে ছোট্ট খালেদের ভাবনা তালগোল পাকিয়ে যেত।
কিন্তু মানুষ যা চায় সর্বদা যদি তাই ঘটত, তবেতো বিধি বলে কিছু থাকত না! 

*** *** *** ***

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সাল। বিজয় দিবস ।
গাজীপুর জেলায় গজারী বনের ধারে এক নিভৃত গ্রাম। উঠোনে চাঁদর গায়ে আরাম কেদারায় বসে খালেদ পৌষের মিষ্টি রোদ উপভোগ করছে। হাতে তার সেই সবুজ মলাটের ডায়েরীটি যাকে বিগত বিয়াল্লিসটি বৎসর যাবৎ যক্ষোর ধনের মত সে যত্ন করে আলগে রেখেছে। প্রতিটি বিজয় দিবসেই খালেদ একই কাজ করে। পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। তারপরও নজর বুলাতে থাকে।