-->

চাই ‘হরতাল এবং অবরোধ’ মন্ত্রণালয়


একটি মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী ছাত্র সেনা কর্তৃক আহুত একটি হরতাল ৩১/৮/২০১৪ তারিখে দেশব্যাপী (বনা কবলিত এলাকা বাদে) পালিত হয়েছে দীর্ঘদিনের হরতাল খরায় আক্রান্ত এই দেশে হরতালটি সকলের কাছে মোটামোটিভাবে উপভোগ্য হয়েছে তবে এই হরতালটির বিশেষত্ব এই যে, এটি ছিল শান্তিপূর্ণ এবং নিরুত্তাপ কোথাও কোন ভাংচুর কিংবা জ্বালাও-পোড়াও জাতিয় ঘটনা ঘটে নি হরতালের আগের রাতে কিংবা হরতালের দিনে ধর-পাকড়ের ঘটনা না ঘটায়, বুঝতে কষ্ট হয় না যে, হরতালে সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন ছিল উর্দু ভাষাতে প্রবাদ আছে, “আকল মন্দ কে লিয়ে ইশারায় কাফি হ্যাঁয়” বিগত বৎসর সমূহের হরতালগুলোকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের ফলে আমার মনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিন্তার উদয় হয়েছে দেশ ও জাতির কল্যাণে আমার এই চিন্তাধারাটি পরিবেশন করা অতীব জরুরী মনে করছি 



গৌড় চন্দ্রিকা শেষ এবারে শিরোনাম মোতাবেক আসল কথার পালা তবে তার আগে অতীব জরুরী একটি কথা বলতেই হয়   অন্যথায়  ভুল বোঝাবুঝির ব্যাপক সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না কথাখানা আমার নিজকে নিয়ে
প্রথমতঃ আমি রাজনীতিবিদ নই সুমন কবিরের ভাষায় বললে , দ্বিতীয়তঃ , তৃতীয়তঃ , ......... এমনকি শেষ পর্যন্তও না আমি রাজনীতিবিদ , না  রাজনীতির ব্যাপারে আমার আছে কোন আকর্ষণ সেই আঠারো বছর বয়সে , চিন্তার ভুলে বা দৈন্যতায় কিংবা পরিপক্কতায়, অথবা আজতক অজানা কোন কারণে, যখন মিছিলে যাওয়া হয়নি, আজ পঞ্চাশোরধ বয়সে, জীবনের পড়ন্ত বেলায় রাজনীতিতে জড়ানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ অন্তরের অন্তঃস্থলেও খুঁজে পাই না অতএব, হে রাজনীতি ! বিদায় ! ! 
                                   
এবারও বোধহয় ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি যে উপায়হীন কে যেন বলেছিল, আমি তারে ছাড়ি,  কিন্তু সে আমারে ছাড়ে না তদ্রুপ আমি যত বেশী করে রাজনীতিকে আল-বেদা বলি, রাজনীতি তার চেয়েও বেশী করে বলে, " আয় বেটা , কাছে আয় " তাই আমি আজ আঁশটে-পৃষ্টে বাঁধা পড়েছি রাজনীতির জটিল গ্রন্থিতে ; দিনের পর দিন ডুবে যাচ্ছি রাজনীতির জটিল পাঁকে কিন্তু এমন ভুক্তভোগী কি আমি একাই ? যদি বলি, ' হে ষোল কোটি জনতা ! আমার মত হতভাগারা হাত তোল ' অন্ততঃ পনের কোটি লোক যে হাত উঠাবে এই ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেয়া যায় সুতরাং সন্দেহ নেই যে , এই পনের কোটি মানুষ মুক্তি চায় রাজনীতি অথবা রাজনীতির রাক্ষসী রূপ থেকে  


এই মুক্তি কি আদৌ আসবে ? এই প্রশ্নের উত্তর কেবল সেই মহান স্রষ্টার নিকটেই আছে যার  অগোচরে নেই অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের কোন কিছুই আমরা অসহায় আর দুর্বল মানুষ কেবল পারি হাত-পা ছুঁড়ে স্লোগান দিতে 'মুক্তি চাই' 'মুক্তি চাই' তবে মহান স্রষ্টা আমাদেরকে নিতান্তই অসহায় বানান নি কিছুটা আক্কল-বুদ্ধি দিয়েছেন যার সুষ্ঠু ব্যবহারে আর প্রয়োগে জীবন কিছুটা  হলেও সুন্দরতর হয় এর জন্য কেবল দরকার সংশ্লিষ্ট সকলের সদিচ্ছা, যোগ্যতা আর কর্মতপরতা
 
ফিরে যাই আগের কথায় এই দেশে, এই সোনার বাংলাদেশে রাজনীতির অনেকগুলো রাক্ষসী  রূপের একটিকে সবাই 'হরতাল অবরোধ' নামে চেনে এই রূপটি বড়ই বেশী ভীতিকর 'হরতাল অবরোধ'  নামক দৈত্যটি যখন আবির্ভূত হয়, তখন সে সমানে গিলতে থাকে মানুষ ঘর-বাড়ী-গাড়ী এবং আর কত কী! এমনি তার শক্তি! অথচ এই ব্যাপারে প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা আমরা নেই নি ---- না সরকারী পর্যায়ে, না বেসরকারি পর্যায়ে বন্যা-মাদক-নারী নির্যাতন ইত্যাদি  বিষয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় আছে, কেবল নেই 'হরতাল অবরোধ'  মন্ত্রণালয় অথচ এটার  আজ বড়ই দরকার কারণ 'হরতাল অবরোধ'  আমাদের জীবনে-সংস্কৃতিতে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে এটা ছিল, আছে এবং হয়তো থাকবেও তাই পনের কোটি হতভাগা জনগণের পক্ষ হতে সদাশয় সরকারের প্রতি আকুল আবেদন 'হরতাল অবরোধ'  নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয় চালু করা হোক এবং এই দফতরের মন্ত্রীকে পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হোক  


অনুগ্রহ করে হাসবেন না কারণ কথায় কেহ দ্বিমত করবেন না যে, বিগত বছরগুলোতে ' হরতাল অবরোধ'  কর্মসূচী বাস্তবায়নে সরকারের সাফল্য এক্কেবারে গগনচুম্বী সাধারণতঃ বিরোধী দলগুলো 'হরতাল অবরোধ' এর ডাক দেয় সরকার তার লাঠিয়াল বাহিনী (অর্থা যাদের হাতে লাঠি থাকে, তাদের নাম নেশা-পেশা যাই হোক না কেন, তাদেরকে) দিয়ে 'হরতাল অবরোধ'  কর্মসূচী ব্যর্থ করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায় ইহাতে সরকার বিরোধী উভয় পক্ষে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় কিন্তু সে ক্ষয়ক্ষতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে যখন সেটা সরকারী হরতাল হয় গেল সরে এপ্রিল মাসের শুরুর দিকে সরকারের সহযোগী বাম দলগুলো একটি হরতালের ডাক দেয় দেশবাসী ওটাকে 'সরকারী হরতাল' নামে আখ্যায়িত করে  অবাক বিস্ময়ে দেশবাসী দেখল যে, হরতালে কোন গাড়ি-ঘোড়া-বাস-ট্রেন-নৌকা-লঞ্চ চলে নি  তারপরে আরো উল্লেখ করা যায় গত ২৮-১২-২০১৩ থেকে ৩০-১২-২০১৩ পর্যন্ত সরকারী অবরোধের কথা এর কিছুদিন আগে পরে বিরোধী দলের অবরোধ ছিল কিন্তু সরকারী অবরোধের তীব্রতা যে বিরোধী দলের অবরোধের চেয়ে বহুগুণ বেশী ছিল, একশ জনে একশ জন লোকই কথার সাক্ষ্য দেবে অথচ একটি মন্ত্রণালয় না থাকার কারণে সরকারের এই সাফল্যকে সকলের সামনে পুরোপুরিভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে না 

প্রস্তাবিত এই মন্ত্রণালয়টি সরকারের জন্য প্রচুর লাভজনক  হবে, উহার পক্ষে আরো অনেক যুক্তি আছে মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হবে  হরতাল,অবরোধ এই জাতিয় যাবতীয় কর্মসূচী  সুষ্ঠুভাবে  সম্পাদন করা ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন ফী  নির্ধারিত থাকবে সরকার কিংবা বিরোধী যে কোন দল এক বা একাধিক  কর্মসূচীর জন্য  নির্ধারিত ফী জমা দিয়ে দরখাস্ত করবে অতঃপর তাদের আর কোন কাজ থাকবে না 'হরতাল   অবরোধ মন্ত্রনালয়'  উক্ত  কর্মসূচী বাস্তবায়িত করে দেবে তবে এই মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী-সচীব-উপসচিব এরা যেন ব্যক্তি  হয় উহা সবিশেষ ক্তরুতপূর্ণ  নচে দেখা যাবে যে, ফী জমা দেবার পরেও হরতাল বা কাঙ্খিত  কর্মসূচী প্রতিপালিত হবে না, ফলে পুনরায় হুলস্থুল-হাংগামা সৃষ্টি হবে সুতরাং সংশিষ্ট সকলের সততা এক্ষেত্রে অতীব জরুরী কিন্তু এদেশে ঐটা পাওয়া মানে অমাবস্যার চাঁদ পাওয়া  


অতএব, বিকল্প ব্যবস্থার চিন্তা করা যেতে  পারে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে মোবাইলে প্রায় সময় গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ পাঠানো হয় এই ধারনাটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায় পদ্ধতিটিকে যদি পুবোপুরি ডিজিটাল করা হয়, তবে নির্ধারিত ফর্মে  নির্ধারিত ফী জমা দেবার সাথে দেশের প্রতিটি মোবাইল ফোনে এই মর্মে  মেসেজ যাবে যে, " ...... দিনে ...... দল হরতাল/অবরোধ/ ...     আহবান করেছে সরকার উহার বাস্তবায়নে   দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ব্যাপারে সকলের সার্বিক সহযোগীতা কাম্য"  এর ফলে যা ঘটবে তা হল, নিদিষ্ট দিনে সরকারী ব্যবস্থাপনায় আহুত কর্মসূচী  সুন্দরভাবে পালিত হয়ে যাবে   ঘটবে না  প্রাণহানি, হবে না আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি আইন-শৃঙ্খলা  বাহিনীও ধীর-স্থির ভাবে দায়িত্ব পালনে সমর্থ হবে   কারণ, এই পর্যন্ত সংঘটিত সরকারী হরতাল অবরোধে আমরা এমনটিই দেখে আসছি অধিকন্তু ফী বাবদ এই খাতে সরকারের প্রচুর পরিমাণে আয়ও হবে কথা এখানেই শেষ নয় প্রস্তাবিত মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্য আরো উজ্জল বলে অনুমিত হচ্ছে রাজনৈতিক হাঙ্গামা পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আছে এবং থাকবে হবুহরতাল অবরোধমন্ত্রণালয়ের সাফল্য বিশ্বের অন্যান্য দেশকে এই মন্ত্রণালয়টি চালু করার জন্য উদ্বুদ্ধ করবে বলে আশা করা যায় ফলে বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে 'রোল মডেলের' সম্মান পাবে বিষয়টি সুদূরপ্রসারীও হতে পারে
  
শান্তিপূর্ণভাবে এবং আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি ব্যতিরেকে হরতাল - অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচী পালনের সঠিক উপায় প্রবর্তনের জন্য ভবিষ্যতে 'শান্তি' 'অর্থনীতি' এই দুই বিষয়ে  সরকারের ভাগ্যে একসাথে দুটো নোবেল পুরষ্কার জুটে যেতে পারে অতি আশা ! দুরাশা !! এর একটিও নয় এমন ঘটনা আজো ঘটেনি তাই বলে কি কোনদিন ঘটবে না ? কে বলেছে ? ঘটতেও তো পারে অন্ততঃ আশাবাদী হতে তো কোন দোষ নেই প্রিয় পাঠক !  " ক্ষতি কি তোমার, যদিগো আমার তাতেই হৃদয় ভরে " ( নজরুল )                  

আসলে সময়োপযোগী বাস্তবসম্মত কর্মপন্থা না থাকার কারণে দিনের পর দিন আমরা কেবলই পিছিয়ে চলেছি এই যেমন  গত ০৫-০১-২০১৪ তে বিরোধী দলগুলোর 'নির্বাচন বর্জন' কর্মসূচী   ছিল তারা কতটুকু সফল হয়েছে উহা আমার নয়, রাজনীতিবিদের আলোচ্য বিষয় আমার কথা হচ্ছে যে, ২১ বা ২২ জন ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে এবং কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে সম্পত্তি হয়তো আবার পুনর্ঘটন করা যাবে, কিন্তু মৃতরা আর কোনদিন জীবিত হবে না ওটা চিরস্থায়ী ক্ষতি ; যার হয়েছে, সেই বুঝে তার জ্বালা যন্ত্রনা অথচ এই 'নির্বাচন বর্জনের' কাজটি  যদি সরকারী ব্যবস্থাপনায় করা যেত, তবে অভিজ্ঞতার আলোকে অনুমান করা যায় যে উভয় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ধরতে গেলে হতই না  

উন্নত দেশ গুলো যখন মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের চিন্তা করছে, আমরা তখন মান্দাতার আমলের নিয়মে হরতাল অবরোধ ঠেকাতে কিংবা পালন করতে ব্যস্ত  বিরোধী দলগুলোর তরফ থেকে বলা হচ্ছে অচিরেই তারা কঠোর আন্দোলনে কর্মসূচীতে যাবে দেশবাসী আশঙ্কায় আছে যে, আবার না জানি কত লোক মারা যায় ! কত আর্থিক ক্ষতি জানি হয় !  অথচ একটি কার্যকরী মন্ত্রণালয় থাকলে এই আশংকা থেকে সব সময়ের জন্য  মুক্ত থাকা যাবে এবং  ক্ষয়ক্ষতি প্রায়  নিশ্চিতভাবেই  শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে 

অতএব, আশা করি অচিরেই 'হরতাল অবরোধ' নামে একটি নতুন মন্ত্রণালয়ের দেখা আমরা পাব এই মন্ত্রণালয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্য কামনা করছি এদেশের তথা বিশ্বের প্রথম 'হরতাল অবরোধ' মন্ত্রীকে  দেশবাসীর পক্ষ থেকে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানাচ্ছি

 লেখক:  
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd

প্রথম প্রকাশঃ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন  BreakingNews.com.bd প্রকাশিত হয়েছে।

লিঙ্কঃ    

চাই হরতাল ও অবরোধ মন্ত্রণালয়

চাই হরতাল ও অবরোধ মন্ত্রণালয়

 

 

 

               

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন