-->

একটি ছবির জন্য

ডায়েরির মলাটে ময়লার পুরু আস্তর জমে গেছে, পাতাগুলোও বেশ বিবর্ণ। বুঝা যায় যে অনেকদিন ধরা- ছোঁয়া হয়নি।
ওটা খালেদের ডায়েরি। ঠিক ডায়েরি নয়, ওটা তার কাছে সাত রাজার ধন। বাবার কাছ থেকে আবদার করে সে ডায়েরিটা চেয়ে নিয়েছিল।  কিন্তু সেটা সম্প্রতি বা দু’এক বছর আগে নয়। আজ থেকে বিয়াল্লিশটি বৎসর আগে অর্থাৎ সেই রক্তঝরা ১৯৭১ সালে। ও-  তখন অনে-ক ছোট, বয়সটা ছিল দশের নিচে। বাবাকে প্রায় দেখত রাতের বেলা ঘুমানোর আগে কাল  মলাটের একটি খাতায় কি যেন লিখছে। জিজ্ঞেস করাতে বাবা একদিন ডায়েরির ব্যাপারটি বুঝিয়ে বলল। দু’দিন পরে খালেদের ডায়েরি লেখার শখ জাগল। আব্দার করতেই বাবা সবুজ মলাটের সুন্দর একটি  ডায়েরি কিনে দেয়। উৎসাহের চোটে প্রথম কয়দিন বেশ লেখা হয়। তারপর আর উৎসাহ ধরে রাখতে পারে নি। মাঝে মধ্যে লিখতে বসত, তাও বিশেষ কোন ঘটনা ঘটলে।

গোটা ১৯৭১ সালের ২০-২২ টি ঘটনা লেখা আছে। তারপর আর ডায়েরি লেখার কোন আগ্রহ খালেদের মাঝে তৈরি হয়নি। তাই আর কেনাও হয়নি। সেই বিশেষ ডায়েরি খানাই সযত্নে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে নামিয়ে পড়ে, অন্যকেও শুনায়। আজ আবার নামাল, তবে অনেক অনেক দিন পরে। উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় এসে দৃষ্টি আটকে গেল। সেই কাঁচা হাতে একটি ঘটনা লেখা। তবে শিরোনামও দেয়া আছে। শিরোনামটা দেয়ার আগে বেশ কাটাকুটিও আছে। অর্থাৎ শিরোনামটা ঠিক করতে তাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শেষমেশ গৃহীত শিরোনামটি : একটি ছবির জন্য। 
                             
খালেদ পড়তে শুরু করে, যদিও এর আগেও অনেক বার পড়া হয়েছে।
 ঘটনাটি সংক্ষেপে লেখা । কিন্তু পড়া শুরু করা মাত্রই ঐ দিনের সব কিছু ছবির মত তার সামনে ভাসতে থাকে। প্রতিবারই এমনটি হয়। আজও তাই হল।

১৫ ই আগস্ট, ১৯৭১ সাল। সকাল সোয়া ৯ টার মত বাজে।                                           
: কি রে খালেদ, স্কুলে যাবি না ?                                       
: হ্যাঁ, মা যাব। এখুনি রেডি হচ্ছি।
                                 
মার ডাকে সাড়া দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে খালেদ প্রস্তুত হয়ে নেয়। দ্রুত কয়েক লোকমা ভাতও খেয়ে নেয়। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে স্কুলের ব্যাগটা খুলে দেখে নেয় সব কিছু ঠিকঠাক মত আছে কি না।
ঠিক ব্যাগ বলা যায় না, ওটা একটা মিনি সুটকেস। বই খাতা কলম ইত্যাদি সব কিছুই নেয়া হয়েছে। ও আসলে রাতেই সব ঘোঁচঘাঁচ করে রাখে। তবুও একবার দেখে নেয়া এই আর কী । সুটকেসের ঢাকনার বা ঢালার ভেতরের অংশে একটি বড়সড় পকেট আছে। একটু-ওদিক ওদিক তাকিয়ে চুপিসারে, কেউ যেন  তাকে দেখতে না পায় এমনি ভাবে খালেদ পকেটের ভেতরে নজর বুলায়। না-হ, আছে জিনিসটা জায়গামতই।  কেউ দেখলে তার খবর আছে। এটা রাখা মহা অন্যায়। এটা এখন অ্যাটম বোমা। হাসি পেল খালেদের। মানুষ যে কি ভাবে, বোঝাটা বেশ দুষ্কর। অথচ ওটা প্রায় ১ফুট বাই ১ ফুট আকারের একটি  ছবি, আর কিছু নয় । কিন্তু খালেদের কাছে সেটা অনেক কিছু। ছবিটা ৫-৬ মাস পূর্বের দৈনিক ইত্তেফাকের কোন এক সংখ্যা থেকে খুব যত্নের সাথে সে কেটে নিয়ে এই পকেটটিতে রেখে দেয়। এটার খবর দুনিয়ার কেউ জানে না। কেউ জানুক সেটা সে চায়-ও না। এটা একান্তই তার। ঢালাটা বন্ধ করে মাকে বলে আর ছোট্ট ভাইটিকে একটি চুমু দিয়ে খালেদ ঘর থেকে বের হয়, হাটা দেয় স্কুলের দিকে।
            
ঠা ঠা রোদ। স্কুলটা অনেক দূরে। রাস্তা ধরে গেলে প্রায় মাইল খানেকের পথ।বিরক্তি দূর করার জন্য খালেদ  মাঝে মধ্যে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। বেশ কিছু দূরে পাকিস্তানি সৈন্যদের কয়েকটা জীপ এবং ট্রাক দেখা যাচ্ছে। সৈন্যরা কিছু জীপের ভেতরে বসা আর কিছু বাইরে দাঁড়ানো। হাসি ঠাট্টা আর গল্প-গুজবে মশগুল।                            
‘শয়তানের বাচ্চারা !’ মনে মনে গালি দেয় খালেদ।
‘ ইস, একটা মেশিন গান যদি থাকত, তাহলে সব কয়টাকে ফেলে দেয়া যেত।’
সে যে মেশিন গান চালাতে জানে না, সেটা মাথাতেই এল না।                                   
‘ থাক বেশী তাকান বোধ হয় ঠিক হবে না। পাছে আবার কিছু সন্দেহ করতে পারে।’                       

মাটির দিকে তাকিয়ে একমনে হাটতে থাকে খালেদ।  হটাত থামতে বাধ্য হল সে । সামনে বাঁধা পড়েছে। আরেকটু হলে হুমড়ি খেয়ে ওটার ওপরই পড়ত। কিন্তু খালি রাস্তায় কোথা হতে কি এল ?
                         
খালেদের নজর স্থির হল এক জোড়া চক চকে কাল বুটের ওপর। তার দৃষ্টিটা ধীরে ধীরে নিচ থেকে উপরের দিকে ওঠতে লাগল। খাকী ড্রেস। টক টকে ফর্সা চেহারা। না-হ, সত্যিই সুদর্শন । স্বীকার করতেই হয়। লম্বায় খালেদের প্রায় দ্বিগুণ ! মাথাটা যেন আকাশে ঠেকছে, চওড়াতেও তেমন। একজন পাক সেনা। খালেদের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে ! 
     
প্রমাদ গুনল খালেদ। তাকে পাকড়াও করার কি আছে ! তার কাছে তো কোন অস্ত্র বা বোমা নেই। না, না , আছে। সেই ছবিটি। বোমা নয়, বোমার বাপ-দাদা ! দেখা মাত্রই বেটা তাকে তো গুলি করবেই, খুঁজে বের করে তার চৌদ্দ গোষ্ঠীকেও করবে। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে, যাতে বেটা সন্দেহ করতে না পারে।                                   
:  খোকা, কোথায় যাচ্ছ ? পরিষ্কার উর্দুতে বলা হলেও আক্কল খরচ করে খালেদ অর্থটা বুঝে নেয়।              
: স্কুল মে । খালেদের জবাব।                                        
: স্কুলের নাম কি ?                                              
: ......... হাই স্কুল।                                           
: তোমার নাম কি, খোকা ?                                           
: খালেদ সাইফুল্লাহ ।                                          
:  খুব সুন্দর নাম। কোন ক্লাসে পড় ?                                       
: ক্লাস ফাইভ  মে ।                                           
: সুটকেসে কি ?                                              
: কিতাব, কলম, পেন্সিল, নোটবুক ……… । বুকটা কেঁপে গেলেও হিম্মৎ না হারিয়ে ধীর লয়ে বলতে লাগল খালেদ।       
: সিপাহী জামশেদ । ট্রাকের কাছ থেকে একটা হাঁক শোনা গেল।                            
প্রতি উত্তরে খালেদের সামনে দাঁড়ানো সেনাটি ট্রাকের দিকে চেয়ে জবাব দিল, “ Yes sir. ”।            
খালেদ বুঝতে পারল যে এতক্ষণ যার সাথে কথা বার্তা বলছে তার নাম জামশেদ ।
ট্রাকটা মনে হয় ছাড়ার জন্য রেডি হয়েছে। সেজন্যই ডাক পড়েছে।                                           
: দোয়া করি খোকা ভাল থেকো। বেলুবিস্তানে তোমার মত আমারও একটি ছেলে আছে। অনেক দিন হল দেখি না। কখন দেখতে পারব জানি না। আমার জন্য দোয়া করিও।
ঠিক হ্যাঁয় ?                               
: জী, আচ্ছা। ঘার নেড়ে সায় দেয় খালেদ।                                  
: বহুত শুকরিয়া।                                            
আদর করে খালেদের পিঠ চাপড়ে দিল সিপাহী জামশেদ। তারপর ট্রাকের দিকে হাটা দিল। চোখের কোনাটা যেন চিক চিক করছে, খালেদ দেখতে পেল।                                        
খালেদ আবার হাটতে শুরু করল। এতক্ষণে টের পেল যে ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ছে। সৌভাগ্য যে সুটকেসটা খুলতে হয়নি। তাহলে ছবিটা দেখে ফেলত।
তারপর ?
কী যে হত বলা যায় না। ৩-৪ মিনিট হাটার পর হাতের ডানে মূল রাস্তা থেকে ২০০ হাতের মত দূরে একটি ঝাড় চোখে পড়ল। খালেদ সেদিকে নেমে গেল। মাটিতে বসে সুটকেস খুলে ঢালার পকেট থেকে ছবিটা বের করল। নির্নিমেষ নয়নে ছবিটা দেখতে লাগল। আবেগ আর যুক্তির মধ্যে যুদ্ধ হচ্ছে। শেষমেশ যুক্তির জয় হল। ছবিটা ছিড়ে ফেলতে হবে। বড় কপাল গুনে  আজ বেঁচে গেছে। সারা দেশে হর হামেশা ব্যাগ ইত্যাদি চেক করা হয়।  যদি খুলে পাকিস্তানীরা এই ছবি দেখে তবে তাকে তো বটেই, এমনকি খুঁজে এনে আব্বু-আম্মু-ভাই-বোন সব ক’জনকে গুলি করে হত্যা করবে। কিন্তু ছিঁড়তে তো পারছে না। আঙুল কাজ করছে না। ওদিকে অশ্রুর ফোঁটা পড়ে ছবিটা কখন থেকে ভিজে গেছে খেয়ালই করেনি। হটাত মনে হল ছবির মালিক তাকে বলছে, “ কেঁদো না খালেদ, আপাততঃ আমাকে ছিঁড়ে ফেল। অযথা ঝুঁকি নিতে নাই।” এবার পারল। আর দেরি হল না। মুহূর্তের মধ্যে ছবিটি এমনভাবে কুঁচি কুঁচি করে ফেলল যাতে সংগ্রহ করে জোড়া দিয়েও কেউ  কিছু বুঝতে না পারে। ছেঁড়া কাগজের টুকরো গুলোর দিকে তাকাল।
আসলে কি ছবিটা সে ছিঁড়তে পেরেছে ?
না-তো, ছবি তো তার বুকের মাঝে সাঁটা আছে।
ওটা কে ছিঁড়বে ?
অন্তরের কানে স্পষ্ট শুনতে পেল যে, বুকের ভেতর থেকে ছবির মানুষটি কথা বলে ওঠল, “ প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে ...... ”     
: হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু, আমরা তাই করব। হানাদাররা তোমাকে আটক রেখেছে, তোমার ছবি ছিঁড়তে বাধ্য করেছে।  তবে তোমাকে আমার মন থেকে মুছতে পারবে না। যত ছোট হই না কেন, কিছু একটা আমি করবই।                    
 খালেদ স্কুলে গেল ।  ক্লাসও করল। কিন্তু সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকল। সহপাঠীদের উত্তরে কেবল বলল, “ কোন কিছু ভাল লাগছে না। বিরক্ত করিস না।”

বাসায় ফিরতে ফিরতে খালেদের বিকাল হল। হালকা একটু খাওয়া দাওয়া শেষে ছাদে হাটতে গেল। সরকারি কোয়ার্টারের চারতলায় খালেদ দের বাসা। আশেপাশে বহুদূরের মধ্যে কোন দোতলা দালানও নেই। খালেদ ও তার বন্ধুরা কোয়ার্টারের সামনে মাঠে খেলাধুলা করে। মাঝে মধ্যে ছাদে ওঠে হৈ হুল্লোড় করে। আজও তারা নিচেই ছিল। কিন্তু খালেদকে খুঁজতে খুঁজতে একজন-দুইজন করে সবাই ছাদে উঠে  আসল। সব মিলিয়ে ওরা ৮-১০ জন হবে।                       
: কি রে খালেদ ! খেলবি না ? তারেকের প্রশ্ন । খালেদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু।                       
: মন ভাল নেই রে। সুদূর আকাশের দিকে তাকিয়ে খালেদ জবাব দেয়।                       
: কি হয়েছে তোর আজ ? তারেকের কণ্ঠস্বর ভয়ে ব্যাকুল ।                          
 খালেদ চুপ করে থাকে। কোন জবাব দেয় না।  উপরে কাঁটাতার বসানো কোয়ার্টারের সীমানা প্রাচীরের বাহিরে অনেক দূরে একটা মাটির রাস্তা। কয়েকটা মোড় এসে মিলেছে এমন একটি স্থানে কয়েকটি তাঁবু।  হানাদার পাক সেনাদের তাঁবু ।  এখান থেকে সৈন্যদেরকে দেখা যায় বটে, তবে চেহারা স্পষ্ট হয় না। ওদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে খালেদের মনে একটি ধারনা  বিদ্যুতের মত ঝিলিক দিল। ডাক দিল সব বন্ধুদেরকে।

: আজ এক নতুন খেলা খেলব।                                      
: কি সেটা ?  তাড়াতাড়ি বল ।                                      
: ঐ যে দূরে পাকিস্তানী সৈন্যদেরকে দেখছিস না ? চল ওদেরকে কতক্ষণ বকা ঝকা করি। ওরা কত নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার করছে ।                                                
: ঠিক ঠিক আর দেরি না, শুরু কর।                                       
: ঐ শয়তান, শয়তানের বাচ্চারা, জানোয়ারের দল, কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, ইবলিসের হাড্ডি, বানর, ইঁদুর, ব্যাঙ, রাক্ষস, ......... ।

গলা ফাটিয়ে বাচ্চারা মনের সুখে পাক সেনাদের উদ্দেশ্যে চেল্লাচ্ছে। যার ভাণ্ডারে যা আছে সব উজার করে দিচ্ছে। মিনিট ৪-৫ পরে ওরা ক্লান্ত হয়ে হাঁপাতে লাগল। প্রায় সবার গলাই ভেঙে গেছে। ওদের চোখ মুখ আনন্দে ঝলমল করছে। একটা কাজের কাজ হয়েছে, এমন একটা ভাব সবার মধ্যে। আবার শুরু করতে হবে।

: কিন্তু খালেদ আমরা ওদেরকে গাল মন্দ করলাম। ওরা সেটা টের পেল না। এজন্য মজাটা ষোলআনা পাচ্ছি না।               : ঠিক কথা । আমিও সেটা ভাবছি।                                      
: কিন্তু কি করা যায়, বল তো দেখি। জিয়া বলল চিন্তান্বিত স্বরে।                           
: এই রে বুদ্ধি এসেছে। লাফিয়ে ওঠে খালেদ।                                  
: কি ? তাড়াতাড়ি বল। সবাই একযোগে বলে ওঠে।                               
: ওদেরকে আমরা যার যার জুতা দেখাব। এই বলেই খালেদ পায়ের চপ্পলটা হাতে নিয়ে সৈন্যদেরকে দেখিয়ে চিল্লাতে লাগল,  “তোদের দুই গালে, জুতা মারি তালে তালে। ” 

চোখের পলকে সকলে দাঁড়িয়ে গেল। সকলের একই কাজ , একই কোরাস।

: শুয়ে পড়, শুয়ে পড়। গুলি করল। একজন সৈনিককে ওদের দিকে তাকিয়ে কাঁধ থেকে রাইফেল নামাতে দেখে খালেদ চেঁচিয়ে উঠল।

ঝট করে সবাই রেলিঙের নিচে মাথা নামিয়ে ফেলল। গড়াতে গড়াতে খালেদ ছাদের অন্য মাথায় গিয়ে একটু উঁকি দিল। মুখটা কাল হয়ে গেল।                                               
: কি হয়েছে রে ?                                               
: ব্যাটারা এদিকে আসছে।                                           
: কি করব এখন।                                               
: সবাই বাসায় চলে যাই। ভুলেও কেউ কিছু স্বীকার করবি না। 

কয়েক সেকেন্ডেই ছাদ খালি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর নিজের রুম থেকে খালেদ পাক সৈন্যদের হাউ কাউ শুনতে পেল। সীমানা প্রাচীরের ওপার থেকে ষাঁড়ের মত চেল্লাচ্ছে। কী যে হবে !

এমন সময়ে দেখল পাশের ঘরের খালাম্মা পাক সেনাদের সাথে কথা বলতে লাগলেন। খালাম্মা চমৎকার উর্দু পারেন। কিছুক্ষণ তর্কাতর্কির পর তিনি সৈন্যদেরকে বুঝাতে পারলেন যে, বাচ্চাগুলো পাওরুটি খাচ্ছিল। ওরা সৈন্যদেরকে পাওরুটি দেখিয়ে খেতে বলছিল। অনেক কষ্টে খালেদ হাসি চেপে রাখল। শেষ পর্যন্ত সৈন্যরা মেনে নিল। তবে হুমকি দিয়ে গেল, “ ভবিষ্যতে এমন বোকামি যেন না করে। ভুলে এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে।” গজ গজ করে  জানোয়াররা চলে গেল। 

ইতোমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। মাগরিবের নামাজের আজান পড়ছে। খালেদ অজু করে নামাজ পড়ে পড়তে বসল। এশার সময় হল। নামাজ, পড়া এবং রাতের খাওয়া সব শেষ। আব্বু-আম্মু সবাই শুয়ে গেছে।

খালেদ আবার পড়ার টেবিলে বসল। ওফ, যা একখান দিন গেছে না ! সিদ্ধান্ত নিল যে, সংক্ষেপে হলেও লিখে রাখতে হবে। বাবার দেয়া ডায়েরিটা খুলে কলম হাতে নিল। সাহিত্যিকদের মত একটা শিরোনাম দিলে ভাল হয়। কিছুক্ষণ কাটাকাটি করল। কোন শিরোনাম মাথায় এল না। থাক, ওটা পড়ে দেয়া যাবে। আগে ঘটনাবলি লেখা হোক। খালেদ লিখতে শুরু করল,  “ ১৫ ই আগস্ট, ১৯৭১ সাল।  ............     

ঃ সমাপ্ত ঃ

লেখক:
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী  অধ্যাপক
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল: sparvez@daffodilvarsity.edu.bd


১ম প্রকাশঃ  ‘গল্পকবিতা’  website এর  ‘শৈশব’ সংখ্যা; সেপ্টেম্বর  ২০১৩ ।

Link :  http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/8974/6910

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন