-->

মৌলবাদ: যে কথা বলা হয় না

(কেন এই লেখা? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। সে সুবাদে অনেকের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। জীবনে বহুবার ‘মৌলবাদ’ নিয়ে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। ঐ সকল প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম, তা নিয়েই আজকের এ লেখা। মৌলবাদের মূল-সন্ধানী এ লেখার মুখবন্ধে এটা বলতে পারি— এ যেন কেঁচো খুড়তে গিয়ে সাপের সন্ধান পাওয়া׀)

মৌলবাদ কোনো উর্দু, আরবি বা ফার্সি শব্দের বাংলা অনুবাদ নয় ׀ Fundamentalism একটি ইংরেজি শব্দ, যার বাংলা করা হয়েছে ‘মৌলবাদ’ শব্দটি দ্বারা ׀
׀
মৌলবাদের জন্ম

ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায় যে, শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয় আমেরিকায় এবং ১৯২২ সালে׀ ১৮০০ সালের পর থেকে শুরু হয় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের স্রোত ׀ সেই স্রোতধারায় ভেসে যাবার উপক্রম হয় খ্রিস্টধর্মের অনেক বিশ্বাস ও প্রচলিত ধারণা׀ নাস্তিক্যবাদের (aethism) প্রসার ব্যাপকতা লাভ করে ׀

ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আগামী প্রজন্ম

‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়’ ---- বড়ই আপাতঃমধুর একটি স্লোগান যা শোনেনি এমন বাংলাভাষী বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বক্তার পরিচয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে কথাটা আদৌ সত্য কী না এ বিষয়ে খুব কম লোকই মাথা ঘামান। ‘বক্তার পরিচয়’ শব্দ দুটো এজন্য চয়ন করলাম কারণ ঐ স্লোগানটি যারা সবচে বেশী আওড়ে থাকেন, তারা সমাজের ‘হাই-ফাই’ শ্রেণী । তাদের অনেকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এম.পি., কেউ কেউ লেখক, কেউ বিজ্ঞানী, কেউবা ভার্সিটির শিক্ষক ইত্যাদি। আর হুজুগে বাঙালীর চরিত্র হল নেতা গোচের লোকেরা কিছু বললে ঐ কথাকে চোখ-কান বুজে গ্রহণ করা। সাধে কি আর সোনার বাংলার এই দুরবস্থা ! তাই দেখা যাচ্ছে যে, কাঙ্খিত কিংবা অনাকাঙ্খিত যাই হোক না কেন ‘ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism)’ নামক মতবাদটি ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করছে। কিন্তু এই বিস্তার কি গোলাপের সুবাসের বিস্তার না কি প্রাণঘাতী AIDS ভাইরাসের বিস্তার, এইটি হল দুশ্চিন্তার বিষয়। আসুন আমরা খোলা মন আর চোখ দিয়ে মতবাদটিকে জানতে চেষ্টা করি।


‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে ইংরেজিতে secularism বলে। কিন্তু একটি সহজ সত্য হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-কে ইংরেজিতে secularism শব্দে অনুবাদ করা হয় নি, বরং ইংরেজি secularism কে বাংলাতে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ দ্বারা অনুবাদ করা হয়েছে । যে বা যারা তৈরি করেছেন তারা secularism নামক মতবাদটি তৈরি করেছেন । আর যারা এটাকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেছেন তারা বুঝে অথবা না বুঝে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দটি তৈরি করেছেন।

জয় পরাজয়

অপরূপ সুন্দর এক বন! এত বেশী সুন্দর যে একবার এক মানুষ সে বনে ঘুরতে গিয়েছিল। সে এতই মুগ্ধ হয়েছিল যে, প্রাণমাতানো এক কবিতা লিখে ফেললঃ
কোন্ বনেতে জানি নে ফুল গন্ধে এমন করে আকুল,
কোন্ গগনে ওঠে রে চাঁদ এমন হাসি হেসে।
আঁখি মেলে তোমার আলো প্রথম আমার চোখ জুড়ালো,
ওই আলোতেই নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে॥
শুধু যে প্রাকৃতিক ভাবে সুন্দর তাই নয়, বনের বাসিন্দারাও খুব ভাল। বনে কোন বাঘ- ভাল্লুক-সিংহ নেই, আছে প্রধানতঃ গরু-মহিষ-ভেড়া-ছাগল। আর আছে অনেক অনেক হরিণ। দু’ চারটে ঘোড়াও আছে। একটি ঘোড়া খুবই দুরন্ত দুর্বার। ওটাকে বাকিরা রাজা হিসাবে মেনে নিয়েছে। ঘোড়া যেহেতু তৃণভোজী প্রাণী, তার দ্বারা কারো আক্রান্ত হওয়ার আশংকা প্রায় শূন্য ।


এ সকল বাসিন্দাদের পরস্পরের মধ্যে কোন হিংসা বিদ্বেষ নেই, আছে কেবল সৌহার্দ্য ।

বাবার কাঁধে

রাস্তার মাথায় একটি সুবিশাল সাইনবোর্ড। নতুন, সম্ভবতঃ কাল রাতে লাগানো হয়েছে। তাতে বড় বড় হরফে লেখাঃ জুন মাসের ৩য় রবিবার আজ বাবা দিবস বাবাকে তার প্রিয় জিনিসটি উপহার দিন সেলিম সাহেব একজন বাবা। তার নজরটা সাইনবোর্ডটির ওপর পড়ল। লেখাটাও মনের অজান্তে পড়া হয়ে গেল । কিন্তু তারপর ? ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকলেন । তাকিয়েই থাকলেন। সবকিছু যেন অর্থহীন ঠেকছে। * * * * * * বত্রিশটি বছর আগের কথা। মাস দিন তারিখ সব মিলে গেছে। তফাৎ কেবল ক্ষণটাতে। পুরোপুরি কাকতালীয় হয়েও হল না। আসলে কাকতালীয় বলে কিছু নেই। সবই বিধাতার ইচ্ছা। সেদিন বাদ এশা। সেলিম সাহেব অস্থির চিত্তে বারান্দায় পায়চারী করছেন। আড়াই বছরের মনিরকে পাশের রুমে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছেন। ওদিকে আঁতুড় ঘর থেকে মুনিরের মার কোঁকানির আওয়াজ আসছে। ঘণ্টা দুই হবে, প্রসব বেদনা উঠেছে। সেলিম সাহেবের অস্থিরতা কেবল বাড়ছে আর বাড়ছে। এক সময় বড় আপা বের হয়ে আসেন। কিন্তু কিছু বলার আগেই নবজাতকের কান্নার আওয়াজ সেলিম সাহেবের কানে প্রবেশ করে। মনিরের বোন হয়েছে। খুব সুন্দর। হাসিমুখে শুধান বড় আপা। শুকরিয়া , সব খবর ভাল তো ? জি, ভালো। আপনি এবার ঘুমাতে যান। আমরা সবাই আছি। 


* * * * * * মনিরের বোন বড় হচ্ছে। আদর করে নাম রাখা হয়েছে মনিরা । শৈশব পেরিয়ে স্কুলে ভর্তি হল। তারপরে একে একে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করল। বিয়ে হল।