-->

অচেনা মন

“ ওরা রাজাকার । ছয়জনের একটি দল। এলাকার মানুষ ওদেরকে এড়িয়ে চলে। ভয়ে এবং ঘৃণায় । পাক হানাদার বাহিনী এলাকাতে এসেছিল ৮-৯ মাস আগে। এলোপাথারী ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়ে থানা সদরে চলে যায়। মাঝে মধ্যে আসে, দু’একটা চক্কর মেরে যায়। সর্বসাধারণ সতর্ক হওয়ার একটা সুযোগ তবু পায়। কিন্তু এই রাজাকারের দল! ওদের কথা না বলাই ভাল। হেন কোন অপকর্ম নেই, যা গত কয়েকমাসে ওরা করে নাই। আমি অবশ্য স্বচক্ষে কিছু দেখি নাই। বেশীরভাগ শুনেছি দোকানদার দুলু চাচার কাছ থেকে। আরো দু’চার জনেও আমাকে কিছু কিছু জানিয়েছে। বয়সে ছোট। নচেৎ হয়তো আর অনেক কিছু জানা যেত।”

কথাগুলো খালেদের ডায়েরীতে লাল কালিতে লেখা। রাজাকারদের প্রতি খালেদের প্রচন্ড ঘৃণা। বাবা বলেছিল, ”বাহার ভাই-কে স্থানীয় রাজাকাররা পাক বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দেয়। পরে পাক-বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে বাহার ভাই শহীদ হয় । ” নভেম্বরের শেষ দিকে খবর আসে যে, বাহার জেঠার একমাত্র ছেলে তারেক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে গেছে। চারটে মেয়ে নিয়ে জেঠি যে এখন কী করবে। ঐ বয়সে ছোট্ট খালেদের ভাবনা তালগোল পাকিয়ে যেত।
কিন্তু মানুষ যা চায় সর্বদা যদি তাই ঘটত, তবেতো বিধি বলে কিছু থাকত না! 

*** *** *** ***

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ সাল। বিজয় দিবস ।
গাজীপুর জেলায় গজারী বনের ধারে এক নিভৃত গ্রাম। উঠোনে চাঁদর গায়ে আরাম কেদারায় বসে খালেদ পৌষের মিষ্টি রোদ উপভোগ করছে। হাতে তার সেই সবুজ মলাটের ডায়েরীটি যাকে বিগত বিয়াল্লিসটি বৎসর যাবৎ যক্ষোর ধনের মত সে যত্ন করে আলগে রেখেছে। প্রতিটি বিজয় দিবসেই খালেদ একই কাজ করে। পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্থ হয়ে গেছে। তারপরও নজর বুলাতে থাকে।