-->

আহা, কী আনন্দ ! (হবুরাজা নিয়ে গল্প)


[লেখকের কথাঃ গল্প-কবিতা-উপন্যাস তথা সাহিত্যে এমন কিছু চরিত্র আছে, যেগুলো  মোটেও ঐতিহাসিক নয়; কিন্তু অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের চেয়েও ঢের মশহুর। উদাহরণস্বরূপ কার্টুন জগতের  টোকাই, চাচা চৌধুরী; রহস্য সাহিত্যে মাসুদ রানা, কিরীটী রায়, টারজান; ছোটগল্পে ফটিক, জোহরা; উপন্যাসে হিমু, মিসির আলী, মজিদ, কাদম্বিনী  ইত্যাদি এবং আরও অনেক অনেক চরিত্রের নাম করা যায়। তেমনি আর একটি চরিত্রের নাম ‘হবুরাজা’। অথচ এই অতি  বিখ্যাত চরিত্রটি নিয়ে বাংলা সাহিত্যে মাত্র দুটো কবিতা পাওয়া যায়ঃ ‘জুতা আবিষ্কার’ (রচনায়ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ) এবং  ‘হবুচন্দ্ররাজা’ ( রচনায়ঃ সুনির্মল বসু )। অতএব, হবুরাজাকে নিয়ে কিছু একটা রচনা  করার শখ জাগল। ‘ আহা, কী আনন্দ !’  গল্পটি সেই শখের বহিঃপ্রকাশ। সার্থকতার বা ব্যর্থতার বিচারের ভার পাঠকের। তবে একটা কথা বলে রাখি, এটা শুধু গল্প। পাঠককে আনন্দ দেবার জন্য একটি নগণ্য প্রয়াস। এর সাথে রাজনীতির দূরতম সম্পর্কও নেই। সুতরাং, যদি কোথাও কোন মিল পরিলক্ষিত হয়, সেটা স্রেফ কাকতালীয়। উহাকে ক্ষমাসুন্দর ও সাহিত্যসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল। ]  
  

(১ম পর্বঃ  ২২ মার্চ ২০১৪ ) 
 
নাগরপুর রাজ্যের মহা প্রতাপান্বিত রাজা হবুচন্দ্র। অফিসিয়ালী তার নামটা এভাবে লেখা হয় নাগরপুর রাজ্যের জল-স্থল --অন্তরীক্ষের মহান রাজাধিরাজ ফিল্ড মার্শাল হবুচন্দ্র দ্য গ্রেট তার দাপটে বাঘে আর  ছাগলে এক ঘাটে  জল খায় না বটে, কিন্তু পুলিশ আর ফেরারী আসামী গলাগলি  করে হাটে। 
                                                  
কর্মব্যস্ত একটি দিনের শেষে আনমনে প্রকৃতির রুপ-সুধা উপভোগ করার জন্য জানালার পাশে এসে বসেছেন রাজা হবুচন্দ্র। রাতটা শেষ হলেই শুরু হবে আবার সে-ই ব্যস্ততা। তাই সন্ধ্যার পর পারতপক্ষে  তিনি  কোন কাজ করেন না। 
পরিবারের সাথে একটু সময় দিয়ে থাকেন।                                                                                                  
এখন রাতের প্রায় মাঝামাঝি।                                                                                  
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ। হেমন্ত কাল।                                                                                    
চারিদিক চাঁদের কিরণে উদ্ভাসিত। ঝির ঝির করে হাল্কা-পাতলা বাতাস বইছে। দেখা যায় এমন দূরত্বে প্রবাহমান ‘মায়া’  নদীর পানি রুপার মত চিক চিক করছে।                                      
রাজা হবুচন্দ্র নিজের মস্ত ভুঁড়িতে হাত বুলচ্ছেন আর মাঝে মাঝে তৃপ্তির ঢেঁকুর ছাড়ছেন। দুনিয়াটাই স্বর্গ বনে গেছে। যখন যা চাই, তাই পাওয়া যায়। যারে যেটা করতে বলা হয়, সে সেটাই করার জন্য উঠেপড়ে  লাগে। স্বর্গ তো এমনই হবে আর কী ! খালি একটা জিনিসের অভাব, স্বর্গে মরণ নেই। স্রষ্টা এত সুখই যখন দুনিয়াতে দিল, মরণটা যে কেন দিল! তাও আবার যখন তখন মৃত্যু আসতে পারে। ধর্মগুরুরা বলে,  ‘এক সেকেন্ডের নাই ভরসা, বন্ধ হইব রং তানাশা’। অস্বীকার করাও যায় না, আবার মানতেও মন চায় না। রাজা মাঝবয়সী মানুষ, স্বাস্থ্যখানা যথেষ্ট ভাল, তেমন কোন অসুখ-বিসুখও নেই।  দেশী-বিদেশী ডাক্তার  দ্বারা নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ-ও করা হয়ে থাকেনাহ, ধর্মগুরুরা একটু বেশী বেশী বলে। দুশ্চিন্তার কোন হেতু নেই। তবে দুশ্চিন্তা অন্য কারণে। কিছুটা পারিবারিক আর কিছুটা রাষ্ট্রীয়। রাষ্ট্রীয় দুশ্চিন্তার কারণ ক’দিন আগের বন্যা। দেশে অভাব-অনটন দেখা দিয়েছে। মানুষ নানা কথা বলাবলি করছে। অবশ্য রাজা হবুচন্দ্র এসব পাত্তা দেন না। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জনগণকে যত যাঁতা যাবে, তত বাধ্য থাকবে। কেবল মুখ দিয়ে যাঁতার কথা বলা যাবে না, বলতে হবে প্রেম-প্রীতি আর ন্যায়পরায়ণতার কথা। দু’দিকেই তিনি প্রতিভা। যেমন জানেন ডলা দিতে, তেমন পারেন মিষ্টি মিষ্টি কথার ফুলঝুরি ছুটাতে। জার্মানির Joseph Goebbels  কে  তিনি গুরু মানেন। পাছে ভুলে না জান, ঐ জন্য গুরুর একখান কথা প্রতিদিন বেশ কয়েকবার আউরে থাকেনঃ   

       If you tell a lie big enough and keep repeating it, people will eventually come to believe it.    

                                      
তবে প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ রাজার মন এই মুহূর্তে রাজনীতি থেকে বহুদূরে, আনন্দে একেবারে টই-টুম্বুর।  আনমনে তাই গলা ছেড়ে দিলেন, “ আহা কি যে সুন্দর, হারিয়েছি অন্তর; ভাষা নেই, নেই ভাষা নেই ...” 
আচমকা ভয়ার্ত স্বরে ককিয়ে উঠল ধারে কাছে নিদ্রারত পাখির দলওরা ভয় পেয়েছে। বিব্রত রাজা তক্ষণা থেমে গেলেন। মনটা খারাপ হয়ে গেল। গান জিনিসটা তার গলাতে কিছুতেই আসে না। তার গলাতে কেবল দুটো জিনিসই ফুটেঃ ভাষণ আর তর্জন-গর্জন । ভাষণ শুরু করলে থামাটা মুশকিল হয়ে যায়। আর প্রজারাও তার ব্জ্রকণ্ঠের ভাষণ মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে থাকে। কোনদিন  তিনি  কাউকে তার সভা থেকে  উঠে যেতে দেখেন নি। আর তর্জন-গর্জন! ঐ কথা না বলাই ভাল। এ পর্যন্ত তার ধমকে কত লোক যে কাপড়-চোপড় নষ্ট করে দিয়েছে সেটা পত্রিকার শীর্ষ খবর হতে পারে। যাক, এখন ঘুমানো দরকার। আগামীকাল আবার দরবারের দিন। বহুত ‘ভেজাইল্যা’ কাম!                                                                            

বারান্দা থেকে ওঠে রাজা রুমে গেলেন। রাণী কাদা হয়ে ঘুমাচ্ছে। বেচারীর ওপর দিয়ে সারা দিনে অনেক ধকল যায়। নাস্তার পর থেকে শুরু হয় দর্শনার্থীদের আর আশীর্বাদ প্রত্যাশীদের আগমন অবশ্য বিনা  দক্ষিণায় কারো প্রবেশ নিষেধ। রাণী তার পছন্দের মোড়ায় বসে নযরানা নেন। দারোয়ান দ্বি প্রহরের সময়  গেট বন্ধ করে। ততক্ষণে রাণীর কোঁচরে এত পরিমাণের নযরানা জমে যায় যে বেচারীকে অনেক কসরত করে দাঁড়াতে হয়। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর সে নযরানাকে আবার দু’ভাগ করতে হয়। এক ভাগ রাজার একাউণ্টে জমার জন্য পাঠাতে হয়। এটা রাজার হুকুম, এর অন্যথা হলে গর্দান যাবে। অপর ভাগটি একান্তই রাণীর। রানী সেটা দিয়ে কী করেন, রাজার কোন মাথাব্যথা নেই। কারণ তিনি ‘নারী স্বাধীনতায়’  বিশ্বাসী, একথা প্রায় সময়ে তিনি জোরেশোরে প্রচার করে থাকেন                                 
রাজা  হবুচন্দ্র শুয়ে পড়লেন। একটু শীত শীত করছে। একটি কম্বলের প্রয়োজনে রাজা রুমের চারিদিকে তাকাচ্ছেন। চোখ পড়ল একখানা পুরান কম্বলের ওপর। এর অর্থ রাজার বাসায় নতুন কম্বল পৌঁছান হয় নি। অথচ বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ-সামগ্রী স্বরূপ বিদেশ থেকে অগুনিত কম্বল এসেছে। ত্রাণ মন্ত্রীর এ অপরাধ ক্ষমার অযোগ্যকাল ‘বেটাকে’ আচ্ছা করে ‘সাইজ’ করতে হবে।মনে প্রচণ্ড আক্রোশ আর দুঃখ নিয়েই রাজা ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলেন                       **************************************************************

(২য় পর্বঃ ২৩ মার্চ ২০১৪ )   
বেশী হলে ঘণ্টা  খানেকের মত পার হয়েছে, রাজার একান্ত ব্যক্তিগত ফোনটি বাজতে শুরু করেছে। সুখনিদ্রা ভেঙে যাওয়াতে বিগড়ে যাওয়া মেজাজে রাজা ফোন ধরলেন।                                
: হ্যালো, কোন গাধারে তুই ? ফোন করে জ্বালাতন করছিস !                                                 
: মহারাজা, আমি গবু।                                                                          
: বুঝলাম তুই গরু। কিন্তু এত রাতে হাম্বা হাম্বা করছিস কেন ? ঘুমুতে দিবি নে?                             
: মহারাজা, ব্যাপার বড় ভয়ঙ্কর! বড় রাজকুমার গুলি খেয়েছে।                                     
: অ্যাঁ অ্যাঁ ... কি কি বললি ? কোথায় ? বেঁচে আছে তো ?                                          
: এই মুহূর্তে হাসপাতালে, ওটি-তে।                                                                 
: আমি এখুনি আসছি।                                                                      


রাজা ফোন রেখে দিলেন। তারপর আলনা থেকে টান দিয়ে একটি চাদর নিয়ে ওটাকে গায়ে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে গাড়ীর উদ্দেশ্যে দৌড় দিলেন। অফিসিয়াল ড্রেস পরিধানের সময় এখন নেই। প্রজাদের প্রতি যতই কঠোর হন না কেন, সন্তানের বেলাতে কিন্তু রাজা হবুচন্দ্র প্রচণ্ড স্নেহশীলতাছাড়া এমনিতেও রাজা রীতি ইত্যাদির খুব একটা ধার ধারেন না।                                             
রাজপ্রাসাদ থেকে হাসপাতাল মাত্র ৫-৭ মিনিটের রাস্তা। গাড়ীর ভেতরে রাজা গভীরভাবে চিন্তামগ্ন। বড় পোলাটা বছর খানেক যাব খুব পেরেশানিতে ফেলেছে। রাজপুত্রের আবার অভাব কিসের ! মেঘ না চাইতেই তো জল হাজির ! হাত নাড়তে না নাড়তেই সব পাচ্ছে । তারপরও কেন যে এটা-সেটা করে বেড়ায় !  পরের বউ-ঝি দেখলে তো বেতাল হয়ে যায়। আজ আবার কী কাণ্ড করেছে!  কে জানে ? তবে গবু নিশ্চয় সামাল দিয়েছে। গবুচন্দ্রের কথা মনে পড়াতে নিজকে একটু ভারমুক্ত মনে হল। রাজা হবুচন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্র। গবুচন্দ্রের মত প্রধানমন্ত্রী পেয়ে রাজা নিজকে মহা ভাগ্যবান মনে করেন। একটা রত্ন বটে গবুচন্দ্র ! এক্কেবারে নিখাদ সোনা। অবশ্য বুদ্ধি দোষে  মাঝে মধ্যে উল্টো-পাল্টা কাজ শুরু করে দেয়। ক’দিন আগে জুতা আবিষ্কার করতে গিয়ে কী কাণ্ডটাই না করল । কিন্তু তার আনুগত্য আর কর্তব্যনিষ্ঠা প্রশ্নের অতীত।   নিজের আরামকে হারাম করে রাতদিন রাজা হবুচন্দ্রের খেদমতে ব্যস্ত। এই যেমন আজ রাতে, সব কিছু একরকম সুরাহা করেই তারপর তাকে জানিয়েছে। রাজাও তাই স্ত্রি-পুত্র-কন্যা ব্যতীত এই পৃথিবীতে একমাত্র গবুচন্দ্রকেই স্নেহ করেন। এমন কি রাজা যখন তাকে বকাঝকা করেন, তখনও তার প্রতি রাজার মমতা প্রকাশ পায়।                                                        
হাসপাতাল গেটে গাড়ী থামতেই প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্র দৌড়ে এল। ঘটনার বিবরণ দিল। ৩ বন্ধু সহ রাজকুমার গিয়েছিল ডাকাতি করতে। পাহারাদার গুলি করে আহত করে সবাইকে । তারপর ছ্যাছ্যা দিতে গিয়ে চিনে ফেলে। অতঃপর দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভাগ্যিস চেনা গেছিল ; নচে গণপিটুনিতে পটল তুলতে হত।                                                                                       
ওটি থেকে প্রধান ডাক্তার বের হয়ে এসে জানালো যে, গুলি বের করা হয়েছে। রোগীর অবস্থা ভালর দিকে। রাজা হবুচন্দ্র গিয়ে হাজির হলেন বড় রাজকুমারের শয্যার পাশে। শরীরের এখানে-ওখানে ব্যান্ডেজ বাঁধা। তবে আশংকা কেটে যাওয়াতে রাজার মেজাজ আর ঠিক থাকল না। কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে ইচ্ছে করল। সেটা সম্ভব না হওয়াতে তিনি গর্জে ওঠলেন।                                                        
: আমার মান-সম্মান সব ডুবাইলি তুই হারামজাদা ; কুত্তার বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, গাধার বাচ্চা গাধা। এমন অপদার্থ হলি যে, ডাকাতিটা করতেও শিখলি না। .........।                                     
সবাই হা করে রাজার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রাজার মুখে গালিগালাজ ! কিন্তু গবুচন্দ্রের কড়া চাহনি  দেখে সকলে বুঝে নিল যে এগুলো বাহিরে ছড়ানো যাবে না। ইচ্ছামত গালিগালাজ করার পর রাজার মেজাজ ঠাণ্ডা হয়। তিনি বাসায় ফিরে আবার সুখনিদ্রায় বিভোর হলেন।                         ***************************************************************

(৩য় পর্বঃ ২৪ মার্চ ২০১৪ )   
পরের দিন সকাল বেলা।                                                                        
রাজা হবুচন্দ্রের দরবার।                                                                  আলিসান সিংহাসনে রাজামশাই বসে আছেন। সামনে করজোড়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্র, অন্যান্য মন্ত্রীগণ এবং অমাত্যবর্গ । রাজা তাদের প্রতি বেশ করুণা বোধ করছেন তিনি জানেন যে, বসতে না বললে সারাদিন তারা ওভাবে দাঁড়িয়েই থাকবে, এমনকি বসার জন্য অনুমতিও চাইবে না।  রাজার মনে  হটা এক অদ্ভুত খেয়াল জাগল। আচ্ছা সব ক’টাকে দিগম্বর হয়ে স্ব স্ব কান ধরে শহরের প্রধান সড়ক  দিয়ে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বললে মানবে তো ? রাজার বিশ্বাস, সোসাহে প্রায় সকলে অংশ নেবে, তবে ২-৪ জন হয়তো অনীহার সাথে, ঠেকায় পরে রাজী হবে। অর্থা ঐ ক’জনের আনুগত্যে খাদ আছে ! অতএব, আগামী সপ্তাহে প্রতিযোগিতার আয়োজনটা করতেই হবে। যাদের আনুগত্যে খাদ ধরা পড়বে, ওদেরকে ছাটাই করতে হবে। আশেপাশে শতভাগ নিবেদিত প্রাণ লোক না থাকলে দেশ চালাতে অনেক সমস্যা। যা ইচ্ছা তাই করা যায় না, নিজকে পুরোপুরি শক্তিমানও মনে হয় না। যাক, আপাততঃ ওদেরকে  বসার অনুমতি দেয়া যায়।                                                                   
: প্রত্যেকে যার যার আসন গ্রহণ কর।                                                                
: জে আজ্ঞে, মহারাজার জয়। বলতে বলতে সবাই আসন গ্রহণ করল।                              
বাদশাহ আকবরের ‘নব রত্নসভার’ অনুকরণে রাজা হবুচন্দ্র তৈরি করেছেন ‘বার রত্নসভা’ তবে ‘নব রত্নসভার’ ওপরে আকবরের যা দাপট ছিল, তার চেয়ে বহুত বেশী ক্ষমতা রাখেন রাজা হবুচন্দ্র তার ‘বার রত্নসভার’ উপর।  এই দরবারে মন্ত্রীরা এই ভেবে প্রায় সারাক্ষণ আতংকিত থাকেন যে, রাজা কখন কাকে কী বলে বসেন !  সপ্তাহে একদিন দরবার বসে। ঐ একদিন দরবার চলাকালীন  সময়ে মন্ত্রী এবং অমাত্যদের  ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়তে থাকে কারণ দেশের ব্যাপার সমূহ রাজার নিকট ঠিকমত বিবৃত করতে না পারলেও বিপদ, আবার সেই বিবরণ যদি রাজার পছন্দ না হয় তাহলে আরো বিপদ।                                             
এই মুহূর্তে রাজার চেহারায় বেশ অস্বস্থির ছাপ। রাতের ঝামেলার কারণে সকালের নাস্তাটা যুতসই মত করা হয়নি। রাজা ঘাড় ঘুরিয়ে একে একে মন্ত্রীদের সকলকে দেখছেন। ভাবছেন, সবার আগে কাকে  জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়।                                                                                
: এই যে খাদ্য ! তোর চেহারা এত শুকনো কেন ? কাল ভাল মত খাওয়া-দাওয়া করিস নি ?            
খাদ্য মন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রাজা প্রশ্ন ছুড়েন। রাজা কেবল দফতরের নাম কিম্বা ঐ জাতীয় কিছু একটা  বলেন। মন্ত্রী শব্দটা ভুলেও উচ্চারণ করেন না। রাজা জানেন যে, এদেরকে যত অসম্মান করা যাবে, ওরা  তত নিজকে ধন্য মনে করবে। এজন্য রাজা তুই-তুকারি ছাড়া কোন মন্ত্রী কিম্বা আমলার সাথে কথাই বলেন না। আর সাধারণ জনগণ! ভুলেও তাদের দিকে তিনি তাকান না।                                       
:  জী,  মহারাজ ! প্রচুর খানা খেয়েছি।                                                                
: তা-তো খাবিই-  
দেশের সব খাদ্য ভাণ্ডার তো তোর কাছেই। কিন্তু তোকে এত নার্ভাস লাগছে কেন ?  পেট খারাপ ? টয়লেটে যাবি ? যা তাহলে।                                                                 
: জী না, মহারাজ ! আমি সুস্থ আছি। ব্যাপার হল গিয়ে, জনগণ আমার খুব বদনাম করছে। দেশে ঠিকমত  ফলন হয়নি, চালের দাম বেড়ে গেছে। জনগণ দু’বেলা পেট পুরে ভাত খেতে পারছে না।                      
: ভাত খেতে পারছে না  তো কি হয়েছে ? ওরা পোলাও খাবে। আমি প্রতিবেলা পোলাও বিরিয়ানি খাই, তোরা জানিস না ?       
মন্ত্রীর আক্কেলগুড়ুম অবস্থা। দেশে দুর্ভিক্ষের পদ ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। মোটা চালের ভাতই যেখানে জুটে না, সেখানে আবার মিহি চালের পোলাও ! অনেক ইনিয়ে বিনিয়ে মন্ত্রী মশাই কথাটা পাড়তে সমর্থ হল।      
: বেশ, তাহলে বেশী করে আলু খাবে। কাল সেনাপতি আলু সম্বন্ধে খুব দামি একটা কথা আমাকে জানায়। ধে , আমি সেটা ভুলে গেছি। হৈ, সেনাপতি ! কৈ-রে তুই ?                                             
: হাজির, মহারাজ ! সেনাপতির তড়ি জবাব।                                                        
: আলু খাওয়ার ফজিলত ক’ দেহি।                                                          
: জী, মহারাজ  আলুর অনেক গুন । ভাতে যেমন পেট ভরে, আলুতেও তেমন পেট ভরে। তদুপরি  আলুতে মাথার ঘিলুও বাড়ে। এই কারণে সৈনিকরা প্রচুর পরিমাণে আলু ভক্ষণ করে। এতে আমাদের ঘিলু এত বেশী পরিমাণে বেড়ে গেছে যে, সাম্প্রতিক রিপোর্ট হচ্ছে, ঘিলুর স্থান মস্তিস্কে সংকুলান না হওয়াতে বেশ কিছু পরিমাণ ঘিলু হাঁটুতে স্থানান্তরিত হয়েছে।                                                           
সেনাপতির বক্তব্য শ্রবণে গোটা দরবার কক্ষ যুগপ বিস্মিত ও চমকৃত। কারো মুখে  রা নেই। আকর্ণ বিস্তৃত হাসির সাথে রাজা হাঁক ছাড়লেন।                                                       
বুঝলি খাদ্য, তোর সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। নো চিন্তা, ডু ফুর্তি । জনগণকে গিয়ে বেশী বেশী আলু খাবার জন্য উদ্বুদ্ধ কর। এই ব্যাপারে দেশব্যাপী একটি ক্যাম্পেন চালা। আরে, কি আশ্চর্য ! এই মাত্র আমার মাথায় একটি নতুন স্লোগান এসেছে। সারা দেশে এটা ছড়িয়ে দে।                                                    
: মহারাজা, সেই স্লোগানটা কী                                                                    
: স্লোগানটি হল, “ খেলে আলু , বাড়ে ঘিলু।”  তোরা সবাই এখুনি অভ্যাস কর ।                    
সাথে সাথ গোটা দরবার কক্ষ গম গম করতে লাগল  “ খেলে আলু , বাড়ে ঘিলু ” স্লোগানে।  রাজাও ২-৩ বার ঠোট মেলালেন। অতঃপর চোখ বুজে খুব উপভোগ করতে লাগলেন। মিনিট দু’য়েক পর রাজা হাত তুললেন। স্লোগান থামল। রাজার ইঙ্গিতে খাদ্যমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয়ের লোকজন সহ দরবার কক্ষ ত্যাগ করল। বেচারার চেহারা থেকে দুশ্চিন্তার ছাপ এক বিন্দুও কমেনি, বরং বেড়ে গেছে। অবশ্য ওদিকে কারো নজর নেই।                                                                                                       
: কি হে বাণিজ্য ! তোর কি খবর ? কমিশন-টমিশন সব নিজেই মেরে দিচ্ছিস আজকাল। আমার কথা বোধ হয় ভুলেই গেছিস।                                                                   
রাজার নজর পড়েছে খাদ্যমন্ত্রীর খালি চেয়ারের ডান পার্শ্বে উপবিষ্ট বাণিজ্যমন্ত্রীর উপর। শূন্য চেয়ারটির বাম পার্শ্বে উপবিষ্ট ত্রাণমন্ত্রী হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যদিও তার পালাও আসবে, তথাপি যত দেরী হয় ততই মঙ্গল। রাজা মশায় ক্লান্ত হয়ে পড়বেন, হয়তো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেবেন। হায়! তাকে নিয়ে কাল রাত থেকে রাজা কি ভাবছেন, বেচারা যদি জানত তবে নির্ঘাত মূর্ছা যেত।                                                      
ওদিকে কাঁপতে কাঁপতে বাণিজ্যমন্ত্রী চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল।                                          
: মহারাজা! অধম নিমকহারাম নয়। তবে বর্তমানে কমিশন ইত্যাদি তেমন মিলছে না। দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের খুব দুরবস্থা। তেল-পেঁয়াজ-আদা-রসুন ইত্যাদির না হচ্ছে উপাদন, না হচ্ছে আমদানি। ফলে ওগুলোর দাম জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় .........
রাজা হাত তোলায় বাণিজ্যমন্ত্রীকে থামতে হল।                                                       
: শুন বোধাই! এগুলো কোন সমস্যা নয়তেল-পেঁয়াজ কিনতে না পারলে মানুষ মসল্লা ছাড়াই রেঁধে খাবে। এতে অসুখ বিসুখ কম হবে, স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। যা, ভাগ এখন। বেহুদা বিষয় নিয়ে বক বক করে সকলের সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।                                                   
বাণিজ্যমন্ত্রী নত শিরে তার মন্ত্রণালয়ের লোকজনসহ  নিষ্ক্রান্ত হল। 


  
(৪র্থ পর্বঃ  ২৮ মার্চ ২০১৪ )   
রাজা এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। রাজার মেজাজ যে তেঁতে আছে, এতক্ষণে সকলে বুঝে গেছে। এখন কান পাতলে সকলের বুকের ধুকপুকানি শুনা যাবে।                                                       
: এই যে ব্যাটা ‘ইলিপ’। বসে বসে খুব ঘুমানো হচ্ছে, তাই না ?                                           
: জী না, মহারাজ ! হুকুম তামিল করার জন্য অধম সদা প্রস্তুত। কাঁপতে কাঁপতে দাঁড়িয়ে গেল ত্রাণমন্ত্রী।
রাজামশাই ত্রানের ইংরেজি ‘রিলিফ’-কে ‘ইলিপ’ বলাতে বেচারার ঘাম দ্বিগুণ বেগে বইতে শুরু করেছে।   
: তুই না-কি সব ত্রাণ সামগ্রী নিজেই গায়েব করেছিস ।                                 
: মহারাজা! আমার শত্রুরা এটা  দুর্নাম দিচ্ছে।                                                                  
: মিথ্যা কথা। আমার কাছে নিখুঁত প্রমাণ আছে।                                                
রাজার হুঙ্কারে মন্ত্রী চুপসে গেল। আমতা আমতা শুরু করল।                                       
: মহারাজা! প্রমাণ ! ...... প্রমাণ! ......                                                       
: প্রমাণ মানে প্রমাণই। কম্বলের কথাই ধর। বিদেশ থেকে সাহায্য বাবদ যত কম্বল এসেছে, হিসাবে দেশের প্রত্যেকে একটা  করে পায় । তাহলে আমিও তো একটা পাই। কৈ ? আমিতো কোন কম্বল পাইনি। এমনকি আমার পরিবারেরও কেউ পায়নি। এতেই প্রমাণিত হয় যে, সব কম্বল তুই-ই সরিয়েছিস। এদিকে আয় কম্বলচোরা ।
উত্তেজনার চোটে সিংহাসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেছেন রাজা হবুচন্দ্র। ওদিকে হুকুম পেয়ে নার্ভাস ভঙ্গীতে রাজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ত্রাণমন্ত্রী। বেচারা ভয়ঙ্কর ভাবে কাঁপছে, যে কোন সময়ে মাটিতে পড়ে যেতে পারে। মুখে কোন কথা নেই। মন্ত্রিত্ব যে চলে গেছে, বুঝতে বাকী নেই।                                                      
রাজা হবুচন্দ্র শুরু করলেন তার বজ্রকন্ঠের ভাষণ।                                            
: আমার রাজ্যে এত বড় দুর্নীতি হবে, আর তার বিচার হবে না !  এটা কিছুতেই হতে পারে না। আমি চাই জনগণ আমাকে প্রজা-হিতৈষী রাজা হিসাবে চিরকাল স্মরণ করবে। এ জন্য উচি হবে এই কম্বলচোরার  মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেয়া। তবে তার অতীত জীবনের অবদান স্মরণ করে আপাততঃ সেটা করছি না। কিন্তু এক্কেবারে ছেড়েও দিচ্ছি না। আমাকে একটি ন্যায়বিচার করতেই হবে।                              
রাজা থামলেন। কয়েক সেকেন্ড কি যেন ভাবলেন। তারপর পুনরায় গর্জন করে ওঠলেন।                       
: এই ব্যাটা, কম্বলচোর ! কান ধরে সোজা হয়ে ঘুরে দাঁড়া।                                         
হতবাক ত্রাণমন্ত্রী তক্ষণা দু’হাতে দু’কান ধরে ফেলল। অতঃপর ঘুরে দাঁড়াল।                                       
গোটা দরবার কক্ষে পিন পতন নিরবতা। বিস্ফোরিত নয়নে সকলে রাজা হবুচন্দ্রের ন্যায়বিচার প্রত্যক্ষ করছে!  
: তোরা সবাই সাক্ষী থাক। আমি এই কম্বলচোরাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করছি।                 
কথা শেষ করেই রাজা সর্বশক্তি দিয়ে মন্ত্রীর পাছায় একটি লাথি মারলেন।                        
গগনবিদারী এক আর্তনাদ শুনা গেল। ছিটকে পাঁচ হাত দূরে গিয়ে ত্রাণমন্ত্রী মেঝেতে ভূপাতিত হয়েছে । দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে। রাজার ভয়ে কোঁকাতেও সাহস পাচ্ছে না                                

: এই চোরটাকে দরবার কক্ষের বাইরে রেখে আয়; আর আগামিকালের প্রতিটি পত্রিকায় আমার এই ন্যায়বিচারের খবর যেন শিরোনাম হয়।        
বলতে বলতে সিংহাসনে উপবিষ্ট হলেন রাজা হবুচন্দ্র দ্য গ্রেট।
দু’জন প্রহরী এসে ত্রাণমন্ত্রীকে চ্যাংদোলা করে বাইরে নিয়ে গেল।                                  
ঘটনা দর্শনে সকলের মুখ কাল হয়ে গেছে। বিস্ময়ে ও আতংকে তারা বিমুড় । সবাই শঙ্কিত,  কখন জানি কার ওপরে রাজার ন্যায়বিচারের খড়গ নেমে আসে!                                                  
ওদিকে রাজা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালেন তথ্যমন্ত্রীর দিকে। অবশ্য এতেই তথ্যমন্ত্রীর কম্পনি শুরু হয়ে গেল।  
: ঐ বেটা হকার কোথাকার! তোর কাছ থেকে তো কেউ কোন সত্য খবর পায় নাতুই হলি গিয়ে দেশের সেরা মিথ্যুক। সঙের মত এখানে বসে না থেকে মিডিয়ার ওপর নজরদারী কর গিয়ে যেন আমার এই  ন্যায়বিচারের ঘটনা সঠিকভাবে সচিত্র দেশেবিদেশে ফলাও করে প্রচার করা হয়। দুনিয়ার মানুষ জানুক যে, মহিমান্বিত রাজা হবুচন্দ্র কোন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন না। আর ভাল্লুক, তুই-ও হকারের সাথে যা। গেল হপ্তাহে তোর ডাকাডাকিটা ভালই ঠেকেছে।                                                 
রাজা থামলেন। সাথে সাথে হকার অর্থা তথ্যমন্ত্রী পড়িমরি করে দরবার কক্ষ ত্যাগ করল। মান-ইজ্জত বলে একটা কথা আছে না ? তবে ভাল্লুক অর্থা বনমন্ত্রী খানিকটা ধীরে সুস্থে হাসি মুখে বের হচ্ছে। কারণ সর্বসমক্ষে রাজা তার তারিফ করেছেন। ওটাতো সোনার হরিণ!                                                   

রাজা চোখ বন্ধ করে আছেন। এসিটা বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন। আঙুল দিয়ে তবলার তাল টুকছেন। বোঝা যায় যে মেজাজ শান্ত করার চেষ্টা করছেন। দরবার কক্ষের সকলে ঐ তালের সাথে মিল রেখে মাথা ঝাঁকাচ্ছেন। এটাও আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন। প্রায় পনের মিনিট পড়ে রাজা চক্ষু মেলে সকলের দিকে তাকিয়ে একটি হাসি দিলেন। সকলে হাসি দিয়ে প্রত্যুত্তর দিল। সবাই একটু স্বস্থি বোধ করতে লাগল। যাক, রাজার মেজাজ ঠাণ্ডা হয়েছে বলেই মালুম হচ্ছে।                                             
: হ্যাঁ-রে, গবু, নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তদের তালিকায় আমার নামটা এবারও এলো না। ব্যাপার কি! টাকা পয়সা তো কম খরচ করছি না।                                                                     
: মহারাজা! আমিও তো কিছু বুঝতে পারছি না। আমি তো ওদেরকে প্রচুর ডিনার শ্যাম্পেন খাইয়েছি। ব্যাটারা সব হজম করে ফেলেছে। ঐ সকল দেশের লোকেরা যে এত নিমকহারাম হয় আগে বুঝিনি। পর্দার আড়াল থেকে কেহ ষড়যন্ত্র করছে বলে আমার সন্দেহ হচ্ছে ।                                                     
: আরে দূ—র গাধা ! দোষ তো তোর। তুই ওদেরকে ওসব খাওয়াতে গেলি কোন আক্কেলে। ওদেরকে খাওয়াবি ইয়াবা, শিশা আর ডান্ডি। তখন দেখবি হুড় হুড় করে সব কাজ হয়ে যাবে। কারো কোন ষড়যন্ত্রে-টরযন্ত্রে কাজ হবে না। ভুল যা হবার হয়ে গেছে, আবার নতুন করে কাজ শুরু কর।                                    
: আজ্ঞে, মহারাজা! আমি কাল থেকে নতুনভাবে কাজে নামছি।                                       
: আর এব্যাপারে পাখিটার সাহায্য নে। আচ্ছা, ও থাকে কোথায় ? পর পর কয়েক মিটিঙ ধরে ওর চেয়ার খালি পড়ে আছে ।                                                                        
পাখী বলতে রাজা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বুঝিয়েছেন। মন্ত্রী সভার একমাত্র ব্যক্তি যাকে গবুচন্দ্র আদৌ দেখতে পারে না। সুতরাং সুযোগটা গবুচন্দ্র হাতছাড়া করল না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নামে রাজার কাছে একরাশ নালিশ ঠুকে দিল ।                                                                                  
: আজ্ঞে মহারাজা!  ও-তো সারা বছর বিদেশেই থাকে। দেশের কোন স্বার্থ সিদ্ধি হচ্ছে না, সরকারি পয়সায়  খালি বেড়ানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ইবনে বতুতার রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে, গিনেস বইতে নাম ঢুকে গেছে।               
: বলিস কি ! এতো অনেক বড় ঘটনা। গিনেস ব্যাটার মাথায় আসলে কোন ঘিলু নেই। তাই আমার নাম না লিখে আমার একজন চুনোপুঁটি মন্ত্রীর নাম টুকেছে। ব্যাটা বিদেশী, তাই বেঁচে গেল। দেশে থাকলে আচ্ছা করে প্যাঁদানি দিয়ে বাপের নাম ভুলিয়ে দিতাম । যাক, পাখিটা আর কি কি করেছে, বল দেখি ।                         
: দেশের মান ইজ্জত বাড়ানোর মত কিছুই করতে পারে নি। মাঝখান দিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছে। বিদেশে বেশ ক’খান বাড়ি-গাড়ি দোকানপাট ইত্যাদি কিনেছে। এমনকি আস্ত একটা কলেজও কিনে ফেলেছে বলে শুনেছি।                                                                                                
: তাই না কি ? ওকে বলবি, একখানা বাড়ী আমার নামে লিখে দিতে। আগে তো আমার ব্রিফকেস আলগাতো; মন্ত্রী বানিয়েছি বলেই তো এত উড়াউড়ি করতে পারছে। আর কলেজ কিনে অবশ্য ভালই করেছে।  তোদের কারোর পোলা-মাইয়ারা তো লেখা-পড়া করে না । কেবল পাণ্ডামি করে বেড়ায়। ওদেরকে বিদেশে পাখির কলেজে ভর্তি করাতে পারবি। লেখা-পড়াও করতে হবে না। দেশে ফিরবে বিদেশী ডিগ্রীর সার্টিফিকেট নিয়ে। জনগণ কইব ‘মস্ত বড় পণ্ডিত’। ঠিক কি না ?                                                            
: জী মহারাজ! তবে লেখা-পড়া ছাড়াই ডিগ্রী ! বিষয়টা বোধগম্য হচ্ছে না।                           
: হবে কেমন করে ? তুই তো আস্ত একটা গরু। প্রবাদ বাক্য পড়িস নি, “ লেখা পড়া করে যে, গাড়ী চাপা পরে সে ; লেখা পড়া ছাড়ে যে, গাড়ী চালায় সে।” ?                                                      
: জী মহারাজ! এতক্ষণে বুঝতে পারলাম।                                                          
: তবে ও একাই সব সুবিধা পাচ্ছে, এটা অনুচিত। এবার দেশে ফিরলে পাখিটাকে ভাল্লুক বানিয়ে দেব।  আর ............                                                                            
রাজা থেমে গেলেন। একটু মোচড়া-মোচড়ি  করে সশব্দে বায়ু ত্যাগ করলেন। আসলে সকাল থেকেই পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। এতক্ষণ সামলে রেখেছিলেন, এবারে আর পারলেন না।                      

যদিও দুর্গন্ধে দরবার কক্ষ ভরে গেছে, কিন্তু কারো আচরণেই কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।            
হতভম্ব রাজা টয়লেটে গেলেন। সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তবে মোসাহেবের দল সেই চিরায়ত ভঙ্গীতে কথাবার্তা বলতে লাগল।                                                                       
: আমাদের রাজা আসলেই মহান। রাজার পাদেও আতরের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।                                
: বল কী হে ! আমি তো রাজার পাদে Clive Christian No. 1 এর গন্ধ পাচ্ছি।                   
এমনতর কথা চলতে থাকল। সবাই রাজার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ওরা জানে যে, কে কি বলছে, গোয়েন্দারা   সব রাজার নিকট পৌঁছে দেবে।            
***********************************************************   

(৫ম পর্বঃ  ২৯ মার্চ ২০১৪ )     
প্রায় আধ-ঘণ্টা পর রাজা ফিরে এসে পুনরায় সিংহাসনে বসলেন। সবাইকে এক নজর দেখে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়লেন।                                             
: ওহে ‘ নকলবাজ’! চোরের মত বসে থেকে কুম্ভকর্ণের মত ভারী ঘুমানো হচ্ছে, না !  পরীক্ষায় পাশের হার  এখনো ১০০% হয়নি কেন ?                                                          
দরবারের সবাই বুঝল যে, মহামান্য রাজার নজর এবার শিক্ষামন্ত্রীর ওপর পড়েছে। ওদিকে কানে প্রশ্ন যেতেই শিক্ষামন্ত্রী কাঁপতে কাঁপতে ওঠে দাঁড়িয়েছে।                                              
: আজ্ঞে, মহারাজ! বিষয়টি আমিও বুঝতে পারছি না। আমি কয়েক বসর ধরে যথাসাধ্য চেষ্টা করে আসছি। পরীক্ষকদেরকে বলেছি যথাসম্ভব নম্বর দিয়ে পাশ করিয়ে দিতে। তারপরও ......                     
: ওগুলো তো পুরান কথা। নতুন  কি বুদ্ধি আছে সেটা বল।                                                
: জী, মহারাজ! ভাবছি সব পরীক্ষার্থীকেই পাশ করিয়ে দিতে বলব, খাতায় কিছু লিখুক বা না লিখুক।          
: বেওকুফ কোথাকার ! তাহলে কি পাশের হার শতভাগ হবে ? যারা পরীক্ষা দেবে না এবং যারা বহিষ্কৃত হবে, ওদেরকে তো তোরা ফেল করিয়ে দিবি।  তখন ?                                                   
: মহারাজা!  আসলে শতভাগ পাশ বাস্তবে সম্ভব নয়।                                                 
: আলব সম্ভব। শোন গাধা ! যতজন রেজিস্ট্রেশন করে, সবাইকে পাশ করিয়ে দিবি। পরীক্ষা দিক, না-দিক দেখার দরকার নেই। তাহলে আগামিবারে পাশের হার ১০০% হবে। আর তখন আমার UNESCO পুরষ্কার নিশ্চিত। দেশের মান সম্মান বাড়ানোর জন্য পুরুস্কারটি আমার ভীষণ দরকার। যা, ভাগ এখন।                        
: জী, মহারাজ! যাচ্ছি। আমি আজকেই এই মর্মে প্রজ্ঞাপন জারী করছি।                            
দ্রুতবেগে শিক্ষামন্ত্রী  বিদায় নিল। রাজা এবার পাকড়াও করলেন কৃষিমন্ত্রীকে।                            
: ওহে লাঙল, এ বসর আশানুরূপ ফলন হয়নি। কারণ দর্শা।                                      
: জী, মহারাজ! আমার কোন অপরাধ নেই। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে।                          
: ঠিক কথা, তোকে মাফ করা হল। পানি কৈ ?                                                    
: জী, মহারাজ! অধম হাজির।                                                                  
সন্ত্রস্ত চেহারায় চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল ‘পানিসম্পদ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ’ মন্ত্রী ।                            
: পানির অপর নাম জীবন। তোকে পানি দিয়েছিলাম দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তুই বন্যা দিয়ে সব ভাসিয়ে দিলি। এই কাজ কেন করলি, জবাব দে জলদি।                           
মন্ত্রীর মূর্ছা যাওয়ার দশা। বন্যা হল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে তার করার কী বা আছে ! কিন্তু কার  সাধ্যি যে রাজাকে একথা বলে ? তাহলে সর্বসমক্ষে ন্যাংটো করে ছাড়বে। বেচারা  মিন মিন করে কিছু বলার চেষ্টা করল।                                                                          
: মহারাজা, নদীগুলো সব ভরাট  হয়ে যাওয়াতে পানি দু’কুল উপচে ওঠায় বন্যা হয়  তাছাড়া.........        
: বেশ তাহলে নদী গভীর করে কাটার ব্যবস্থা কর।  জনগণ তোদেরকে বেতন দেয় কেন ? কাজ কাম করে পয়সা হালাল কর।                                                                            
: আজ্ঞে, মহারাজ! কিন্তু এত নদী খাল কাকে দিয়ে কাটাব ?                                               
: রামছাগলটা কয় কী ! তুই কাটবি, তোর মন্ত্রণালয়ের  লোকেরা কাটবে।                                  
: মহারাজা! আমার মন্ত্রণালয়ের লোকবল অনেক কম। আমাদের কম হলেও ৩০ বসর লেগে যাবে। ততদিনে আরো অনেকবার বন্যা হয়ে যাবে। তাই লোকবল বাড়ানোর জন্য মহারাজের কৃপা দৃষ্টি প্রার্থনা করছি।                                                                                        
রাজার হাবভাবে বুঝা গেল যে, বিনীত অনুরোধে বেশ গলেছেন। মাথা মাথা দোলাতে দোলাতে বাকি সভাসদদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লেন, “ওকে কে কিভাবে সাহায্য করতে পারবি ?”                                 
সাথে সাথে অনেকে হাত তুলল। রাজার কৃপা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কে না চায় ? রাজার মুখে দেখা গেল আকর্ণ বিস্তৃত হাসি। দু’জন ছাড়া সবাইকে হাত নামাতে ইশারা করলেন।                                    
: তোদের সকলের এই ভাতৃপ্রেম , সহকর্মীপ্রেম আমাকে মুগ্ধ করেছে। আর তোদের নেতৃত্বে আছে  নাগরপুরের সর্বকালের সেরা নৃপতি আমি রাজাধিরাজ হবুচন্দ্র দ্য গ্রেটআমার সুযোগ্য নেতৃত্বে আর তোদের সার্বিক সহায়তায় এদেশ যে দ্রুত বিশ্বের এক নম্বর দেশ হতে চলেছে এতে আর কোন সন্দেহ নেই। এখন ‘কারখানা’ তুই বল, ‘পানিকে’ কিভাবে সাহায্য করবি ?                           
‘কারখানা’ অর্থা শিল্প মন্ত্রী হাসি মুখে দাঁড়িয়ে বক্তব্য পেশ করতে শুরু করল                              
: আজ্ঞে, মহারাজ!  কারখানার শ্রমিকরা কোন কাজ করে না। কেবল আন্দোলন করতে চায়। অতএব, দেশের সবগুলো কারখানা বন্ধ করে দিয়ে ওদের হাতে কোদাল তুলে দেব। ওরা ‘কাবিখা’ কর্মসূচী অনুযায়ী নদী খনন করবে।              
: উত্তম প্রস্তাব। গ্রহণ করা হল।                                                             
রাজাকে বেশ খুশী খুশী লাগছে। এবারে তাকালেন হাত তুলে রাখা অন্যজন অর্থা সেনা প্রধানের দিকে।  
: হেঁই মিয়াঁ। তুই আবার কি পরামর্শ দিবি ? আজ পর্যন্ত পারলি না একটা দেশ দখল করতে, আমার প্রিয় নাগরপুরের সীমানাটা একটু বাড়াতে। আসলেই তোরা কোন কাজের না। তারপরও ক’ দেহি, হুনি এট্টু ।
সেনাপতি দাঁড়াল । সর্বসমক্ষে যা তা শুনতে হওয়াতে মনটা বিগড়ে গেছে। মনে মনে রাজাকে ঝেড়ে গাল দিচ্ছে, তুমি শালা হাবাচন্দ্র কয়টা যুদ্ধে জিতেছ যে নামের সাথে ফিল্ড মার্শাল ব্যবহার কর। অবশ্য সেনাপতির  অন্তরের কোন ভাবই চেহারায় ফুটল না। যেন কিছুই হয়নি, এমনভাবে খুব ঘুচিয়ে বক্তব্য পেশ করল।                                                                                 
: জী মহারাজ! আমরা শান্তিপ্রিয়, যুদ্ধ ইত্যাদিকে ঘৃণা  করি। তাছাড়া প্রতিটি সৈনিক জাতির জন্য এক একটি অমূল্য সম্পদ। যুদ্ধে জড়িয়ে এই অমূল্য সম্পদ বিনষ্ট করার কোন মানে হয় না। তবে নদী খনন কর্মসূচীতে আমরা বলিষ্ঠ ভুমিকা নিতে পারব। সৈনিকদের ‘লেফট-রাইট’ ছাড়া কোন কাজ নেই। অতএব, তাদেরকে কোদাল হাতে খনন কাজে লাগিয়ে দেয়া যায়।                                                                        
: ইহাও উত্তম প্রস্তাব। গ্রহণ করা হল। হ্যাঁ-রে, পানি, তোর ভাগ্যটা তো  বেশ ভাল। এবার সকলে যা। আজ থেকে কামে নেমে পর।                                                             
সংশ্লিষ্ট সকলেই বিদায় নিল। রাজা প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্রকে ইশারায় কাছে ডাকলেন।                       
: পাছে ভুলে যাই, তুই এক্ষুণি নোট কর। ভীষণ দরকারি একটা ...............                             
হটা বিদ্যু চলে গেল। দরবার কক্ষ কবরের মত অন্ধকার হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যে  রাজার মেজাজও সপ্তমে চড়ে গেল। IPS এর কল্যাণে অন্ধকার কাটল বটে, কিন্তু ততক্ষণে বাজখাই গর্জনে দরবার কক্ষ কাঁপতে শুরু করেছে ।                                                                                     
: ঐ ব্যাটা শয়তানের বাচ্চা লাইন-ম্যান ! বিদ্যু গেল কেন ?                                       
রাজার গর্জনে লাইন-ম্যান অর্থা বিদ্যুমন্ত্রী বেতস পাতার মত কাঁপছে । সে দীর্ঘ দিন ধরে রাজার বাসায় বিদ্যুতের লাইন দেখ-ভাল করার কাজ করত। কাজে এবং তোয়াজে খুশী হয়ে রাজা তাকে মন্ত্রী বানিয়ে দিয়েছেন বটে, তবে ডাকাডাকির দরকার হলে এখনো লাইন-ম্যান বলেই ডাকেন। মন্ত্রী কিন্তু এতেই নিজকে ধন্য মনে করেএ মুহূর্তে বেচারা অবশ্য প্রচণ্ড ঘামছে। অনেক মানসিক শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়াল।                                                                               
: মহারাজা! এতো আপনার নির্দেশ। প্রতিদিন লোড-শেডিঙ করতে হবে।                                 
: গাধা কয় কী! আমি আবার কবে এই হুকুম দিলাম ?                                             
: মহারাজ ! এইতো গতকাল। শর সাহিত্য সম্মেলনে আপনি বললেন, “ সবাই আলোর বর্ণনা দেয়; কিন্তু শর বাবু আঁধারের রূপ বর্ণনা করেছেন। অথচ মানুষ আলোর যন্ত্রণায় আঁধারের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে না। আমি চাই প্রতিটি মানুষ আঁধারকে জানুক, চিনুক; আঁধারের রূপে-সৌন্দর্যে মুগ্ধ হোক। এজন্য নির্দেশ  দিচ্ছি নিয়মমত যেন লোড-শেডিঙ করা হয়। ”                                                               
: আরে আহাম্মক! হনুমানের ছা! সে নির্দেশ তো মানুষের জন্য । আমি কি মানুষ ?                  
রাজার চীকারে সকলের কানের পর্দা ফেটে যাবার উপক্রম হয়েছে। ভীত সন্ত্রস্ত সকলে সমস্বরে জবাব দিল, “ জী না মহারাজ! আপনি মানুষ না।”                                                                 
: তবে বাতির লাইন দে, এখুনি।                                                                
: জী, মহারাজ! দিচ্ছি। 
                                                                   
বিদ্যুমন্ত্রী দ্রুত দরবার কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে বিদ্যু ফিরে এল।                  
গোটা দরবার কক্ষে সবাই মাথা নিচু করে বসে আছে। এ-ওর দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। অবশ্য রাজা মশাই চোখ বন্ধ করে আছেন। কী যেন ভাবছেন!                                                        
*********************** **********************************    

(৬ষ্ঠ পর্বঃ  ৪ এপ্রিল, ২০১৪ )  
রাজা চক্ষু মেললেন। বিরক্তি আর বিতৃষ্ণার সাথে সবাইকে দেখলেন।                                       
: গবু, ডাণ্ডাওয়ালা আর মালপানি বাদে বাকিরা এখন ভাগ।                                   
দরবার কক্ষ প্রায় খালি হয়ে গেল। রইল মাত্র ৩ জন ---- প্রধান মন্ত্রী গবুচন্দ্র, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (রাজার ভাষায় ডাণ্ডাওয়ালা ) আর অর্থমন্ত্রী (রাজার ভাষায়  মালপানি )।                                              
: এই যে মালপানি, চোরের মত মুখ লুকান হচ্ছে কেন ? এই হপ্তার কাজের রিপোর্ট কি ? আমার একাঊন্টে কিছুই তো জমা পড়ে নি।                                                                         
: আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিন্তু কাছাতে কাছাতে ব্যাংক গুলো প্রায় খালি হয়ে গেছে। অনেকগুলোকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হবে। এই অবস্থায় পরবর্তী কর্তব্য ঠিক করতে পারছি না।                            
: ননসেন্স। এটা কোন সমস্যা নয়করের হার বাড়াতে হবে আর নতুন করে কর বসাতে হবে।                   
: কি কি বিষয়ে নতুন কর ধার্য করা যায়, সে ব্যাপারে মহারাজার পরামর্শ চাইছি।                
:  বিষয়ের কি অভাব আছে ? হাঁটার জন্য কর, কথার জন্য কর ইত্যাদি আরো বহুত বিষয় আছে।           
:  এ সকল বিষয়েও কর দিতে হবে।                                                       
: কেন নয় ? রাজাধিরাজ হবুচন্দ্র দ্য গ্রেটের রাজত্বে হাঁটাহাঁটি করবে, কথা বলবে অথচ রাজাকে কর দেবে না; এটা কি হতে পারে ?                                                
: অবশ্যই না, আমি আজকেই প্রজ্ঞাপন জারি করছি।                                             
রাজার ইঙ্গিতে অর্থমন্ত্রীর প্রস্থান। রাজা এবার মনযোগ দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি।                         
: ওহে ডাণ্ডাওয়ালা, তোর রিপোর্ট শুনা দেখি।                                      
: জী মহারাজ! আপনার নির্দেশ সর্বত্র পৌঁছে দিয়েছি। রাজাধিরাজ হবুচন্দ্র দ্য গ্রেটের বিরুদ্ধে নিঃশ্বাস ফেললেও যেন ধরে নিয়ে দশ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। আর .........                                              
:  থাম, তোর পুলিশ বাহিনী তো এই সুযোগে বেহুদা ধরপাকড় করে বেশ কামাচ্ছে। ঠিক না-রে ?           
: জী, মহারাজ!  আমরা মনে করি এটা আমাদের প্রতি মহারাজার  অনুগ্রহ। আমরা এজন্য চিরকৃতজ্ঞ।         
: কৃতজ্ঞতা কেবল মুখে মুখে করলে হবে না। বাস্তবেও প্রমাণ চাই। আমার ভাগটা যেন ঠিকমত পৌঁছে যায়।           
: আজ্ঞে, মহারাজ! আমার চেষ্টায় কোন কসুর নেই। আর ভাগের পরিমাণ আরো ১% বাড়ানোর জন্য আমি  আজকেই সকল স্থানে নির্দেশ পাঠাচ্ছি।                                                               
: বেশ ভাল কথা। এবারে মধু বেটার খবর ক’ দেহি। শয়তানটা আমাকে টেনশনে রেখেছে।                   
: মহারাজা! কাল রাতে ক্রস ফায়ারের নাম করে ওকে সাবার করে দিয়েছি।                                  
: তাই নাকি ? বেশ করেছিস। হাঃ হাঃ .........। কোথায় বেটা মধু ? কৈ গেলি তুই ? হাঃ হাঃ .........বেশ লেদু, গেদু ওদের খবর কি ?                                                                      
:  জী, মহারাজ! একটা বড় আকারের সমস্যা হয়ে গেছে ওদেরকে নিয়ে।                                   
: কি এমন সমস্যা, বল দেখি। তোরা তো আমার বুদ্ধি বিনে কোন সমস্যাই সমাধান করতে পারিস না।        
:  জী, মহারাজ! এটা বড় সত্য কথা । কারণ  আপনার মত মহাবুদ্ধিমানের তুলনায় আমরা সবাই মস্ত নির্বোধ। তদন্তে জানা গেছে যে, ওরা কোন অপরাধ করে নি। ওদের তখন জন্মই হয়নি।                          
:  শুন বেটা ইডিয়ট। ওরা না করলে ওদের বাপ করেছে, দাদা করেছে। ওদেরকে সে শাস্তি পেতে হবে।          
: আজ্ঞে, মহারাজ! বাপ-দাদার শাস্তি ওরা ভোগ করবে !                                                 
: কেন নয় ? তুই কি ‘বাঘ ও মেষ শাবকের’ গল্প পড়িস নি ?                                        
: জী পড়েছি, মহারাজা! ঐ গল্পের সাথে এদের সম্পর্ক টা বুঝতে পারছি না।          
: বুঝবি কেমন করে ? মাথায় তো আছে কেবল গো-চনা। বাবা মেষের অপরাধের জন্য বাঘ মশাই বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মেষ শাবকের ওপর। আমি রাজাধিরাজ হবুচন্দ্র দ্য গ্রেট কি বাঘের চেয়ে শক্তিশালী নই ? তাহলে আমি কেন ওসব চুনোপুঁটিদের কৃত অপরাধের জন্য তাদের বংশধরকে সাজা দেব না ?                         
:  জী মহারাজ!  এতক্ষণে বুঝলাম।                                              
: তবে দেরী কেন ? এখনি কাজ শুরু করে দে। যা, ভাগ।                                               
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দ্রুত প্রস্থান করল।                                                   
এমন সময়ে বিশেষ অনুমতি নিয়ে গোয়েন্দা প্রধানের আগমন। রাজা ভ্রূ কুঞ্চিত করে তাকালেন।                

: মহারাজা ! ভীষণ জরুরী ব্যাপার।                                                         : তাড়াতাড়ি কর। আমার এখন খাওয়ার সময়।   
: আজ্ঞে, মহারাজ! দুঃসংবাদ এনেছি ।  প্রজারা স্থানে স্থানে বিদ্রোহী হয়ে ওঠছে। বড় আকারের .........        
: কি ? এত বড় সাহস! সব চামচিকার দল। আমার রাজ্যে থেকে আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ! এটা কিছুতেই বরদাশত করা যায় না, এক মুহূর্তের জন্যও এটা সহ্য করা হবে না। গবু! বেটা গেলি কৈ ?                    
: গবুচন্দ্র হাজির, মহারাজ! হুকুম করুন।                                                             
: যারা বিদ্রোহ করতে যাচ্ছে, এ মুহূর্তে ওদের সব কটাকে জেলে ঢোকানো হোক।
: একটা কথা মহারাজ!                                                                  
:  আবার কি ? তুই তো বেটা গবেট কোথাকার। আ-কথা ছাড়া কিছুই জানিস না।
: জে,  আজ্ঞে,  মহারাজ! কথা হল গিয়ে দেশের কোন একটি  জেলখানাতেও সুঁই ঢোকানোর মত জায়গা নেই। এই অবস্থায় আর লোককে কিভাবে জেলে ঢুকাই ! আর লোক বলতে এক-দু’জন নয়। সন্দেহভাজনদের তালিকায় থাকবে হাজার হাজার মানুষ।                                                                       
: হাঃ হাঃ .........সাধে কি তোকে আমি গবেটচন্দ্র বলি। শুন ব্যাটা, প্রতিটি ঘরে ঘরে জেলখানা তৈরি কর। 
: জী, মহারাজ! হুকুম শিরোধার্য। কিন্তু কথাটির মানে বোধগম্য হচ্ছে না। এটা কিভাবে সম্ভব ?               
: এটাও মাথায় ঢুকছে না ?  রাবিশ, স্রেফ রাবিশ দ্বারা তোদের  মাথা ভর্তি। শুন গর্দভ, প্রত্যেককে যার যার ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে বাহির থেকে তালা মারবি। আর চাবিটা তোদের কাছে রাখবি।                          
: জী মহারাজ! এতক্ষণে বুঝতে পারলাম।                                                         
: তাহলে দৌড় দে। এখুনি কাজ শুরু  কর। আমি দেখতে চাই যে, পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমার  হুকুম কার্যকরী হয়েছে।                                                                  
রাজা হবুচন্দ্র  সিংহাসন থেকে নেমে পড়লেন। রাজপ্রাসাদের দিকে রওয়ানা হলেন দুপুরের খানা আর বিশ্রামের জন্য।                                                                              
 *************************************** ********************
(৭ম পর্বঃ ৫ এপ্রিল, ২০১৪ )     
প্রধান মন্ত্রী গবুচন্দ্রের সভাপতিত্বে  জরুরী সভা বসেছে। বিষয়বস্তু‘প্রতিটি ঘরকে জেলখানা’ বানানোর রাজনির্দেশ কিভাবে এবং কত দ্রুত বাস্তবায়িত করা যায়। বিস্তারিত আলাপ আলোচনার পর নিম্নবর্ণিত কর্মসূচী গৃহীত হল:                                                                                         
* এই মুহূর্ত থেকে আগামী ১২ ঘণ্টার জন্য সারাদেশে কার্ফু জারী ;   
* যেখানে যত তালা পাওয়া যায়, সব ক্রয় করতে হবে ;  
* সকল পুলিশ এবং সৈনিকরা প্রতিটি ঘরের প্রধান দরজার বাহিরে তালা মেরে চাবিটি সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেবে ; কমতি হলে ঘরের লোকদের কাছ থেকে তালা চেয়ে নিয়ে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করবে ;                   
* কেহ বাঁধা দিলে ক্রসফায়ারে দিতে হবে।                                                       
সভা শেষ। শুরু হল কাজ। গোটা রাজ্য জুড়ে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।  ওদিকে রাজা হবুচন্দ্র দুপুরের খানা শেষ করে নাক ডাকছেন। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, আজ আর কোন কাজ করবেন না। 
*********************************************************                   
দিন গড়িয়ে রাত এসেছে।                                                                  
আজ রাতে নিয়মের ব্যতয় ঘটল।                                                            প্রকৃতির রূপ-সুধা পান করার জন্য রাজা জানালার ধারে গিয়ে বসলেন না। বরঞ্চ অস্থিরতার সাথে ঘরময় পায়চারী করতে লাগলেন। উত্তেজনায় ঘুমাতে যেতেও পারছেন না দেশের বেয়াড়া জনগণকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে। এখন গবু এবং তার সাঙ্গোপাঙ্গরা ঠিকঠাক মত সব কিছু করতে পারলেই হয় ! 
                  
“ জিন্দেগী জিন্দেগী জিন্দেগী ........., হাঁ------, জিন্দেগী 
জিন্দেগী জিন্দেগী দোস্তঞ কী দুনিয়াদারী......    
  
মুঠোফোনের রিং-টোন টা বাজছে। তার খুব প্রিয় রিং-টোন । যতবার শুনেন, ততবারই নতুন করে উপভোগ করে থাকেন।                                                                                 
:  হ্যালো ! কে ?                                                                
: বাবা। আমি, উঁ উঁ ......।                                                                    
মেয়ের ফোন। বিদেশ থেকে। কিন্তু মেয়ের কান্নার ধমকে কিছু বুঝা যাচ্ছে না।  রাজা মহা উকণ্ঠিত হয়ে পড়লেন।                                                                              
: মা, তোর কি হয়েছে ? কান্না থামিয়ে বল, কিছুই বুঝতে পারছি না।                      
: বাবা, আমাকে মেরেছে।                                                        
: কী ! কোন সে শয়তান ? কার এত বড় সাহস যে আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলে ?           
রাজার চীকারে রাণী ঘুম থেকে ধড়মড় করে ওঠে বসল। রাতের পাখীরা ভয় পেয়ে তারস্বরে ককিয়ে ওঠল। প্রাসাদের প্রহরীদের হাত থেকে অস্ত্র খসে পড়ল।                                            
: বাবা, তোমাদের জামাই। অনেকগুলো থাপ্পড় মেরেছে, চুলের মুঠি ধরে টান দিয়েছে। ডাল ঘুটুনি দিয়ে দুটো বাড়িও দিয়েছে। উঁ উঁ ......।  
: পুঁতে ফেল । পুঁতে ফেল ।  
                                                               
: মানে বাবা ! তোমার কথার মানে বুঝতে পারছি না ।                                             
: ওকে মাটিতে পুঁতে ফেল । জিন্দা কিম্বা মড়া যেভাবে পারিস।                                   
: তাহলে বাবা, এদেশের পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাবে। আমি কে, কোন রাজার মেয়ে এ সমস্ত কিছুই দেখবে না। 
: তাহলে কালই ওকে নিয়ে দেশে আয়। আমি দেখব তার বুকের পাটা কত বড় !            
: বাবা তুমি কি করবে ?                                                            
: আমি তাকে রিমান্ডে দেব। তার হাড়-মাংস শকুন বিড়াল দিয়ে খাওয়াব।        

এতক্ষণে রাজকন্যার হুঁশ হয়। আতংকিত কণ্ঠে বলে, “ বাবা, তাহলে আমি যে বিধবা হয়ে যাব ।”            
: তুই রাজার মেয়ে; এক জামাই মরলে আরেক জামাই পাবি। কিন্তু আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলে বদমাশটা রাজাধিরাজ হবুচন্দ্র দ্য গ্রেটের যে সম্মান হানি করল সেটা পুনুরুদ্ধারের জন্য এটা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এটাই আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।                                                  
এটুকু বলে রাজা রোষের সাথে সংযোগ কেটে দিলেন। ভাবছেন, সন্তানদের প্রতি একজন কুসুমকোমল পিতা এত দূরে বসে আর কী বা করতে পারে! ভাবতে ভাবতে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে রাজা ঘুমের  অতলে হারিয়ে গেলেন। 

(৮ম বা শেষ পর্বঃ  ৬ এপ্রিল,  ২০১৪ )    
সকাল বেলা।     
সূর্য উঠি উঠি করছে।                                             
পাখীর কাকলীতে চারিদিক মুখরিত।
                                                  
নিত্যদিনের ন্যায় রাজা হবুচন্দ্র প্রাতঃভ্রমণে বের হলেন। পেছনে পেছনে যথারীতি প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্র। আজকের সকালটা বিগত সকালগুলোর মত নয়। প্রকৃতি যেন নীরব নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে ।  কোথাও জন-মনিষ্যির চিহ্ন মাত্র নেই। থাকবে কোত্থেকে ? রাত পোহানোর আগেই দেশের সব লোককে যার যার ঘরে ঢুকিয়ে বাহির থেকে তালা মারা হয়েছে। রাজা তার ক্ষমতার জোর দেখে বিস্মিত হয়ে গেলেন। মনের অজান্তে আবৃত্তি করলেন স্কুলে পড়ে আসা একটি কবিতার প্রিয় দুটো লাইন : 
                                                                                              

I am monarch of all I survey;   My right there is none to dispute ;*








তবে  ঐ কবিতার কথক কথাগুলো বলেছিল এক নির্জন দ্বীপে। কিন্তু তিনি উচ্চারণ করতে পারছেন জনাকীর্ণ একরাজধানীতে। আর এজন্যই তো তিনি রাজাধিরাজ ফিল্ড মার্শাল হবুচন্দ্র দ্য  গ্রেট ।   
  
      

: বুঝলি গবু, একেই বলে লেতা সে মোয়া (L'etat C'est moi)                    
: আজ্ঞে, মহারাজা! কিন্তু কথাটার মানে তো বুঝলাম না।                                 
: বুঝবি ক্যামনে ? লেখাপড়া করলে তো বুঝতে পারতি । যাহোক,  লেতা সে মোয়া- এর মানে হল, ‘আমিই রাষ্ট্র ’বলা হয় যে,  ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই এই কথাটি বলততবে ঐ ব্যাটা কথাটি বলে ঠিক করে নি।    
: মহারাজা! কি কারণে ?                                                               
: আ-রে বেওকুফ, তাও মাথায় ঢুকে না ? এই বাক্যটি বলার জন্য যোগ্যতম ব্যক্তি হল নাগরপুর রাজ্যের জল-স্থল-অন্তরীক্ষের মহান রাজাধিরাজ ফিল্ড মার্শাল হবুচন্দ্র দ্য  গ্রেট একমাত্র তার কণ্ঠেই এই কথাগুলো মানায়। ঠিক না-রে ?                                                                              
: জী মহারাজ! একশ’ বার ঠিক, হাজারবার ঠিক। দুনিয়ার ইতিহাসে প্রজাকুলকে এমনভাবে কেহ কোনদিন শায়েস্তা করতে পারেনি। এমনকি চীনের মাও সে তুং ও নয়, যে কিনা বলত, “ Political power grows out of the barrel of a gun.”                         
: হাঁছা কথা কইছস-রে  গবু আমার এই প্রজা শাসন পদ্ধতি বিশ্বের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে যুগ  যুগ ধরে জনদরদী রাজারা এটাকে অনুসরণ করবে এই কৃতিত্বের কাছে নোবেল পুরস্কার কিছুই না তুই কি কস ?        
: আজ্ঞে, মহারাজ! একদম খাঁটি কথা                                                     
: আজ তাই এই মুহূর্তে আমার মত সুখী মানুষ গোটা দুনিয়াতে দ্বিতীয়জন নেই। ইচ্ছে করছে প্রাণ খুলে গান গাই                                                                            
মনের আনন্দে রাজা হবুচন্দ্র গাইতে লাগলেন, 
 “ আহা, কী আনন্দ ! আজি আকাশে বাতাসে ...... ” 
                
গাইতে গাইতে রাজা দু’হাত শূন্যে তুলে লাফাতে লাগলেন, মনের আনন্দে মাটিতে লুটোপুটি খেতে শুরু করলেন। দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে গবুচন্দ্র। সে ভেবেই পাচ্ছে না কেন এত আনন্দ ! অথচ ওদিকে আনন্দে আত্মহারা রাজা নাচতে নাচতে ন্যাংটো হয়ে  যাচ্ছেন, কিন্তু তার কোন খেয়াল নেই। তাহলে ? তাহলে কী মহা প্রতাপান্বিত  রাজা হবুচন্দ্র  দ্য গ্রেট শেষমেশ পাগল হয়ে গেলেন !!! 

এখন কী হবে দেশের ! জনগণের !! কে তাদেরকে মুক্ত করবে !!! এই পাগল রাজার কাছ থেকে কবে তারা মুক্তি পাবে ? কিংবা আদৌ পাবে কি ??  

গবুচন্দ্রের ভাবনাগুলো গুলিয়ে যায়। ধেৎ ! গোল্লায় যাক  দেশ  আর দেশবাসী !! তার চেয়ে রাজার  সাথে নাচে আর গানে শরীক হওয়া যাক । সেতো রাজাধিরাজ হবুচন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী, জনগণের নয়। ভাবতে ভাবতে নিজের অজ্ঞাতেই নাচে নেমে গেল নাগরপুরের প্রধানমন্ত্রী গবুচন্দ্র। মিন মিনে গলায় গানও ধরল,
 “ আমরা সবাই রাজা  আমাদের এই রাজার রাজত্বে-  । 
   
============================================ 

: সমাপ্ত :  

·           * কবিতা   Alexander Selkirk  ; কবি  William Cowper
[গল্পে ব্যবহৃত ছবিগুলো ইন্টারনেট হতে সংগ্রহীত।ছবিগুলো বাস্তব চরিত্র নয়, এইগুলো সঘুধুমাত্র  প্রতীকী হবুরাজার  ছবি হিসেবে ব্যবহৃত হল।]  

 লেখক:
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী  অধ্যাপক, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল: sparvez@daffodilvarsity.edu.bd

১ম প্রকাশঃ ২২ মার্চ ২০১৪ হতে ৬ এপ্রিল,  ২০১৪ পর্যন্ত  BreakingNews.com.bd ওয়েবসাইটে ধারাবাহিকভাবে আট পর্বে প্রকাশিতঃ লেখাগুলো দেখার জন্য নিচের লিঙ্কগুলোতে ক্লিক করুনঃ 




                  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন