-->

আবু জেহেলের প্রেতাত্মা

ধৃষ্টতার একটা সীমা আছে। তবে সেটা মনুষ্য সন্তানের, এমনকি জানোয়ারেরও। তবে মানব সুরতের ভেতরে যদি কোনো জানোয়ার বাস করে তার বোধহয় সেটা থাকে না। এমন কিছু প্রাণী সকল সময়ে পৃথিবীতে ছিল, আছে এবং থাকবে। এদের উদ্দেশ্য একটাই, সমাজে অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। তেমনি একজন হলেন আমাদের বর্তমান সরকারের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।


গত মাসের ২৮ তারিখে নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে নিউ ইয়র্কের টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। ...এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার নষ্ট হয়, হজের জন্য ২০ লক্ষ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই।

এদের কোনো প্রোডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে। ...আব্দুল্লাহর পুত্র মোহাম্মদ চিন্তা করল এ জাজিরাতুল আরবের লোকেরা কিভাবে চলবে। তারা তো ছিল ডাকাত। তখন একটা ব্যবস্থা করল যে আমার অনুসারীরা প্রতিবছর একবার একসঙ্গে মিলিত হবে। এর মধ্য দিয়ে একটা আয়-ইনকামের ব্যবস্থা হবে।’

ইউটিবের ভিডিটি তে দেখুনঃ



ধিক! শত ধিক! ঐ হতভাগা মন্ত্রীর প্রতি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সন্তানের প্রতি তিনি এমন এক অপবাদ দিলেন যেটা গত ১ হাজার ৪ শ’ বৎসরে ঐ মহামানবের জঘন্যতম শত্রুও দেয়নি। মন্ত্রী ঐ সম্মেলনে অনেক কথাই বলেছে। বুঝতে কষ্ট হয় না যে, ঐগুলো ছিল শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা। সরাসরি ঘোষণা না দিয়েও মন্ত্রী জানিয়ে দিল যে, সে-ও এই জামানায় নবী শ্রেষ্ঠ হযরত মুহাম্মাদের (সা.) একজন শত্রু, এ জামানার আবু জেহেল। কবি ঠিকই বলেছেন, পেঁচা রাষ্ট্র করে দেয় পেলে কোন ছুতা;/জান না সূর্যের সাথে আমার শত্রুতা?

দালালি ও ভীরুতা
আমরা এই ভেবে কূল পাচ্ছি না যে, ঐ সম্মেলনে এমন একজনও কী ছিল না, যে নবী প্রেমে উদ্বেলিত হয়ে সিংহের মত গর্জন করে ওঠে, ‘খামোশ’। ওটা নিউইয়র্ক, ওখানে RAB-Police কিম্বা মন্ত্রীর ক্যাডার বাহিনী ছিল না যে, তুলে ধরে নিয়ে যেত। আফসোস! বড্ড আফসোস! টাঙ্গাইলবাসীদের জন্য।

এই ঘৃণ্য প্রয়াস আজ (মঙ্গলবার) সকালে প্রকাশিত অনেক পত্রিকাতেও দেখলাম। অনেক পত্রিকা খবরটি ছাপে নি, অনেকে ভিন্নভাবে ছেপেছে। এটা কি এ জন্য নয় যে, মন্ত্রী নারাজ হবে।

প্রতীক্ষা করছি
এদেশের প্রায় ৯০% মানুষ ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সুতরাং প্রশ্ন আসে ঐ সকল খবিসরা এমন কথা বলার সাহস কোত্থেকে পায়? আসলে হালুয়া-রুটি লোভী কিছু অসৎ আলেম-পীরের কারণে এরা এত বাড় বেড়েছে। দেশের এক নামজাদা আলেম জাতীয় মসজিদের খতীব, আরেক নামজাদা আলেম বিখ্যাত শোলাকিয়ার ইমাম। মহানবীর (সাঃ) শানে যা-তা বলা হয়েছিল এবং হচ্ছে । কিন্তু এই দুই হালুয়া-রুটি লোভী যথারীতি বধির এবং মূক।

এদেশে একদল লোক আছে যারা নিজদেরকে ‘আশেকে রাসুল’ বলতে ব্যাকূল। অন্য এক দল আছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নাবির দিনে ‘জশনে জলুসের’ নামে নবী প্রেমের মহড়া দিতে পাগলপারা হয়ে থাকে। এদের কাউকে আমরা দেখব না মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে। এদেশে আরও আছে তরীকাত ফেডারেশন, মাইজভাণ্ডারী, সুরেশ্বরী, কুতুববাগী ইত্যাদি কত কী! আজ ওদের কাউকে দেখা যায় না। কারণ এদের নীতি হচ্ছে প্রেমের গান গেয়ে নবীর সাথে ভণ্ডামি করা যাবে, কিন্তু মন্ত্রীর সাথে ভণ্ডামি করা চলবে না।

তবে কথা বলল কে? 
ঐ হেফাজতে ইসলাম, খেলাফতে মজলিস এবং ঐ ঘরানার কিছু দল যারা প্রায় অনুরূপ ইস্যুতে গত বৎসর অনেক অত্যাচারিত হয়েছিল। হয়তো এবারো হবে। যেহেতু জামাত-শিবির অনুরূপ বিবৃতি দিয়েছে, তাই জামাত-শিবিরের দোসর আখ্যা দিয়ে ওদেরকে পেটাতে পুলিশ আর আওয়ামী লীগারদের (যেহেতু মন্ত্রী একজন আওয়ামী লীগার) নিকটে তৃপ্তিই লাগবে। এদেশে একজন ‘বঙ্গবীর’ আছেন এবং একজন স্পষ্টবাদী ‘রনি ভাই’ আছেন। আমরা অপেক্ষা করছি উনাদের বীরত্ব আর স্পষ্টবাদিতা দেখার জন্য।

কার মাফ কে করবে
ইসলাম ধর্মে বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তি নির্ধারিত আছে। যেমন চুরির জন্য হাত-কাটা, মদ খাওয়ার জন্য বেত্রাঘাত, জেনার জন্য দোররা কিংবা ‘রজম’ ইত্যাদি। তবে এই সকল শাস্তি প্রয়োগ করার দায়িত্ব সরকার ও প্রশাসনের। তারা যদি এ দায়িত্ব ষোলআনা পালন না করে, তবে তাদেরকে হাশরের মাঠে তার জবাব দিতে হবে। জনগণের ও সুধী সমাজের কর্তব্য কেবল এটুকু যে, সরকার ও প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করানো। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, নবীর (সাঃ) সম্মানহানির জন্য ইসলাম ধর্মে আদৌ কোনো শাস্তি আছে কী না এবং থাকলে কতটুকু।

এ বিশ্বের বুকে আজতক যত কুরআন-হাদিস-ফিকাহ বিশারদ জন্ম নিয়েছেন, যাদের নির্দেশনা অনুসারে আমরা নামাজ-রোজা-হজ্ব-কুরবানি করি, তাদের সকলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এটাই যে, নবীর (সাঃ) শানে বেয়াদবের একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ এবং তার কোনো তওবা, ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না। ঐ বেয়াদবের আখেরাতে কি হবে, তার তওবা আল্লাহ্‌ পাক গ্রহণ করবেন কি না, স্বয়ং নবী (সাঃ) পরকালে তাকে মাফ করবেন কি না ইত্যাদি আলাদা বিষয়। শরিয়ত একজন ব্যক্তিকে এটুকু অধিকার দিয়েছে যে, আপন জনের হত্যাকারীকে মাফ করে দিয়ে ‘রক্ত মূল্য’ নেয়ার; কিন্তু গোটা মুসলিম উম্মাকেও সম্মিলিতভাবে এই অধিকার দেয় নি, নবীর (সাঃ) শানে বেয়াদবকে মাফ করার। সরকার যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের বিচার করে লক্ষ মানুষের মনের আশা পূরণ করছে। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান এটা দেখার জন্য যে, বিশ্বনবীর (সাঃ) শানে কটূক্তিকারী এই খবিসের ব্যাপারে সরকার কি ব্যবস্থা নেয়।

পূর্বেও যেমন ঘটেছে, এবারো তেমনটি ঘটার সম্ভাবনা প্রচুর । জনরোষ এড়াতে মন্ত্রী বলবে, ‘Sorryআমার ভুল হয়ে গেছে।’ তারপরে কোনো দু’নম্বরী মওলানা তাকে তওবা পড়াবে। দেশবাসীকে অনুরোধ করা হবে সব ভুলে যেতে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজে ছেড়ে দেবার এবং ভুলে যাবার মতো নয়।

এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আশা করছি। সবাই জানে যে, তিনি নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায় করেন, প্রতিদিন সকালে কুরআন তিলওয়াত না করে দিনের কাজ শুরু করেন না। প্রায় সময়ে তিনি তার ক্ষমতায় আরোহণের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের ৩:২৬ নং আয়াতটি উদ্ধৃত করেন। কথা সত্য। আজ তিনি এ দেশের সকল ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি। তার অঙ্গুলি হেলনে গোটা দেশ উঠে বসে। উনি নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারছেন, যে নরাধম আজ এই কথাগুলো বলতে পারছে, সে তো কাল উনার তাহাজ্জুদ আর তিলওয়াত নিয়েও আজেবাজে কথা বলবে। সুতরাং তার বিষদাঁত এই মুহূর্তে ভেঙে দেয়াই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সমীচীন হবে। ইতোমধ্যে ঐ মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে অব্যাহতি দিয়ে যথোপযুক্ত কাজটি তিনি করে দেখিয়েছেন। কিন্তু এত বড় অপরাধীর শাস্তি কেবল এ টুকুতেই যেন সীমাবদ্ধ না থাকে, এদেশের ১৩ কোটি মুসলমান তা-ই প্রত্যাশা করে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক

মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd


প্রথম প্রকাশঃ ০১ অক্টোবর ২০১৪, ১:১৬ অপরাহ্ন breakingnews.com.bd প্রকাশিত হয়েছে।

লিঙ্কঃ   

1 টি মন্তব্য:

  1. নবীর (সাঃ) শানে বেয়াদবের একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ এবং তার কোনো তওবা, ক্ষমা প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না।

    উত্তরমুছুন