-->

প্রজ্ঞাময় একটি তাৎক্ষণিক বিচার

[৪০ হিজরি, ২১শে রমযান । ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শোকাবহ দিন। এদিনে খুলাফায়ে রাশেদার ৪র্থ স্তম্ভ আমিরুল মুমিনীন হযরত আলি(রাঃ) ইন্তেকাল করেন। মহান সেই খলীফার জীবনের একটি ছোট্ট ঘটনা  নিয়ে এই লেখা।] 


জন লোক ( কিতাবে তাদের নাম নেই। কিন্তু বুঝার সুবিধার্থে, ধরা যাক, তাদের নাম হাবিল, কাবিল এবং শামিল ) একটি সমস্যা নিয়ে  হযরত আলি(রাঃ)- নিকট হাযির হল তাদের সমস্যাটি রূপঃ তারা একত্রে ব্যবসা শুরু করেছিল শুরুতে তাদের মধ্যে এমন একটি চুক্তি ছিল যে,  লাভ/ক্ষতির  / অংশ সর্বপ্রথমে পাবে/বহন করবে হাবিল ; বাকি অর্ধাংশের / অংশের অধিকারী প্রথমে হবে শামিল এবং সবশেষটুকুর মালিক হবে কাবিল এক্ষণে ব্যবসায় তাদের ১৭টি উট লাভ হয়েছে চুক্তি মোতাবেক কাজ করলে কিছু উটকে নহর(অর্থাৎ জবাহ) করতে হয়।  কিন্তু তারা কেহই উটগুলোকে নহর করতে আগ্রহী নয় সুতরাং উটগুলোকে নহর না করেই  তাদের মধ্যে এমনভাবে বণ্টন করে দেয়া হোক যেটা চুক্তির শর্তের নিকটতম হয়।                                                                                                       
প্রিয় পাঠক! হযরত আলি(রাঃ) কিভাবে বিচার করলেন উহা জানার আগে আমরা সমস্যাটি গভীরভাবে অনুধাবনে সচেষ্ট হই। 
                                                                                              
জটিলতা                                                                                                              তারা যা লাভ করবে উহাকে চুক্তি অনুসারে নিম্নবর্ণিত পদ্ধতিতে বণ্টন করতে হয় 
হাবিল : শামিল : কাবিল = / : (/ এর /) : (/ এর /) = : :                          
সুতরাং তারা যদি ৬, ১২, ১৮, ২৪, ... টি উট লাভ করত তবে আনুপাতিক হারে সহজেই বণ্টন করা যেত। কিন্তু লাভ হয়েছে ১৭টি। আর ১৭ এর নিকটতম সংখ্যা ১৮ যাকে  ৯ : : ৩ হিসাবে বণ্টন করা যায় এখন ১৭টি উটকে না-কেটে বণ্টন করতে হলে যে কেহ একজনকে ১টি কম দিতে হবে প্রশ্ন হল, কোন সে জন ?                                                                                                            
সম্ভাবনা সমূহ
                                                                    
১৭টি উটকে অনেক ভাবেই বণ্টন করা যায়, তবে ঠিক অর্ধেক (সাড়ে ৮) এর সমানভাবে নিকটতম অখণ্ড সংখ্যা ৮ এবং ৯ এই হিসাবে হাবিল : শামিল : কাবিল এর সম্ভাব্য বণ্টনগুলো হয়  ৮ : : , : :, : :, : :, : :, : : (অন্যান্য অনুপাতগুলো বাতিল যেহেতু তখন মূল বিষয়টি অর্থাৎ হাবিলের অংশ > শামিলের অংশ > কাবিলের অংশ রক্ষিত হচ্ছে না)                                                                                                  
হযরত  আলি(রাঃ)র ফয়সালা

হযরত আলি(রাঃ) একজন খাদেমকে ডেকে বললেন যে, বাইতুল মাল থেকে ১টি উট এনে উক্ত ১৭টির সাথে রাখতে  এই ১৮টি উটকে তিনি দুভাগ করে রাষ্ট্রীয় উট বিহীন ভাগটি হাবিলকে বুঝিয়ে দিলেন বাকি  ৯টিকে তিনি দুভাগ করলেন একদিকে রাখলেন ৯ এর / অংশ অর্থাৎ ৬টি অন্যদিকে রাখলেন ৩টি (রাষ্ট্রীয় উটটিকে এই দলে রাখা  হল) এবারে তিনি শামিলকে ৬টি উট দিলেন অবশিষ্ট ভাগটি থেকে রাষ্ট্রীয় উটটিকে কোষাঘারে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়ে বাকি ২টি দিয়ে দিলেন কাবিলকে অর্থাৎ হযরত আলি(রাঃ) হাবিল : শামিল : কাবিল: :   এই নিয়মে বণ্টন করলেন                           
যৌক্তিকতা                                                                                                      
চুক্তির শর্তমতে অর্জিত লাভ ১৭টি উটের অর্ধেক অর্থাৎ সাড়ে ৮টি প্রথমে হাবিলকে দিতে হয়। কিন্তু ৮টি উট দেবার পরে, ৯ম উটটি নহর না করার কারণে উহাও হাবিলকে দিতে হচ্ছে। বাকি রইল ৮টি উট। এবারে আগে শামিল পাবে এই ৮টির / অংশ  অর্থাৎ ৫টি এবং আরো একটির / অংশ । কিন্তু ৫টি দেবার পরে ৬নং  টিকে নহর না  করতে হলে এটিও পাবে শামিল এইরূপে হাবিল এবং শামিল পেল মোট (+)টি = ১৫ টি পেল অতএব, অবশিষ্ট ২টি পাবে কাবিল অর্থাৎ উটগুলোকে হাবিল : শামিল : কাবিল = : : ২  নিয়মেই সবচে যুক্তিসঙ্গতভাবে বণ্টন করা যায়।
                            
এখানে একটি প্রশ্ন করা যায় যে, ৯ম উটটি হাবিলকে কেন দেয়া হল, ওতো এমনিতেই বেশী পাচ্ছে। আসলে বিচারের সবচে কঠিন পর্ব ছিল এই অংশটুকু। আমরা এর ২টো  উত্তর পেশ করছি ।
                        (১) উহা কোন দাতব্য কর্মসূচী ছিল না, বরং ওটা ছিল একটি ব্যবসায়িক লাভের বণ্টন আর চুক্তির শর্ত থেকে বুঝা যায় যে, অগ্রাধিকার হাবিলের, অন্য কারো নয়।       
                        (২) লক্ষ্য করি যে, ৩ : : ১ = ৫০% : ৩৩.৩৩% : ১৬.৬৭% এবং  ৯ : : ২  =  ৫২.৯% : ৩৫.৩% : ১১.৮% । পক্ষান্তরে ৯ : : ১  =  ৫২.৯% : ৪১.২% : ৫.৯% ; ৯ : : ৩  =  ৫২.৯৪% : ২৯.৪১% : ১৭.৬৫% ;       ৮ : : ২  =  ৪৭.১% : ৪১.২% : ১১.৭% ; ৮ : : ৩  = ৪৭.১% : ৩৫.৩% : ১৭.৬% ; ৮ : : ৪  =  ৪৭.১% : ২৯.৪% : ২৩.৫% ।

অতএব, নিঃসংকোচে এটা বলা যায় যে হযরত আলি(রাঃ) কর্তৃক ঘোষিত  ৯ : : ২ বণ্টনটিই হচ্ছে পূর্বের চুক্তি মোতাবেক ৩ : : ১ হিসাবটির নিকটতম।

হযরত আলি(রাঃ)র বিশিষ্টতা                                                              

অঙ্কের জটিল পথে না এগিয়ে সম্পূর্ণ আঙ্কিক একটি বিষয়কে হযরত আলি(রাঃ) যেভাবে তাৎক্ষণিক  নিষ্পত্তি করলেন, উহা অতুলনীয়! আমি নিজে অঙ্কের ছাত্র এবং পেশা হিসাবে গণিত পড়াই। আমি অনুমান করতে পারি যে, এমন একটি চিন্তাধারা আমাদের মাথায় আদৌ আসত না। আসলে এটা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অমিয় বাণী, আমি জ্ঞানের নগরী আর আলী উহার দ্বার-এর একটি বাস্তব উদাহরণ। সেই হযরত আলি(রাঃ) একটি বিখ্যাত বাণী, মানুষের প্রত্যেক মানুষের সাথে তার আকল অনুপাতে কথা বল কথাটিকে সকল যুগের সকল শিক্ষকের পেশাগত সফলতার চাবিকাঠি বলা হয় । 


লেখকঃ
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd 

প্রথম প্রকাশঃ বুধবার, ৬ জুন, ২০১৮ ইং বাংলাটপনিউজ২৪ডটকমে



নিম্নের ছবিটিতে বা লিঙ্কে ক্লিক করে পিডিএফ (pdf) ফাইলটি ডাউনলোড করে বা preview করে পুরো লেখাটি পরতে পারেন। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন