[ বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধুর
মৃত্যু নিয়ে অজস্র লেখা আছে। কিন্তু এর ৯৯.৯৯% ভাগই হচ্ছে জ্ঞানী-গুণী-বিদগ্ধ জনদের অনুভূতি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তো ছিল ছোটবড় সকলের। অবুঝ শিশু-কিশোর পর্যন্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে দেওয়ানা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে তারাও প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিল। এই লেখায় তেমনি এক কিশোরের ঠিক ঐদিনের মানসিক অবস্থাটা বর্ণনা
করা হয়েছে। লেখাটি জাতীয় শোক দিবসে অর্থাৎ ১৫ই আগস্টে ছাপা হলে বেশী মানানসই
হত। কিন্তু
পেশাগত ব্যস্ততা আর শারীরিক অসুস্থতার জন্য দেরি হয়ে গেল। ]
আযানের সাথে সাথেই ঘুম ভাঙে খালেদের। দ্রুত শয্যা ছেড়ে নামাজ-কালাম পড়ে, গা-গোসল সেরে
রীতিমত ফিটফাট হয়ে বসে আছে খালেদ।
উত্তেজনায় একটু একটু কাঁপছেও বটে। দীর্ঘ দিনের লালিত মধুর
স্বপ্নটি আজ বাস্তবায়িত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
: ভাল করে নাস্তা খেয়ে নে, খালেদ। সারাদিন অনেক দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত থাকতে হবে। আম্মু বললেন নাস্তা বেড়ে দিয়ে। তারপরে খালেদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, তোকে বেশ মানিয়েছে । এক্কেবারে মিনি বঙ্গবন্ধু !
একটু লজ্জা পেল খালেদ। চেহারাটা আর একটু গম্ভীর করে ফেলল।
তারপরে মাথা নিচু করে নাস্তা খেতে থাকল। খাওয়ার ফাঁকে আর একবার আয়না দেখে নিল। আজ সে পরেছে তার প্রিয় ‘বঙ্গবন্ধু ড্রেস’। এ নামটা অবশ্য খালেদের দেয়া। গত ঈদে আব্বুর কাছে আব্দার করে বসে বঙ্গবন্ধু যেমন পরে, তেমন ডিজাইনের সাদা কাপড় দিয়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি বানিয়ে দিতে আর একটি কালো কোট দিতে।
আব্বু তাই দিয়েছিল। তবে কালো কোট হয়ে গিয়েছিল ২ টি। দ্বিতীয় ‘মুজিব কোটটি’ উপহার দেয় খালেদের প্রিয় শফি ভাই।
শফি
ভাই, সম্পর্কে খালেদের জেঠাতো ভাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ফাইনাল ইয়ারে’ পড়ছেন।
আর কয়েক মাস পর পাশ করে বের হয়ে যাবেন। মানে লেখাপড়া শেষ ! ইস !! কী মজা!!! খালেদের খুব হিংসা হয়। তার নিজের লেখাপড়াটা যে
কবে শেষ হবে ! সবে মাত্র সে ৯ম শ্রেণীতে !!
শফি ভাই খালেদকে ভীষণ আদর করেন। একেতো চাচাত ভাই,
তার ওপরে খালেদের সমবয়সী আপন ভাইটি মারা যাবার পর থেকে খালেদ শফি
ভাইয়ের কলিজার টুকরো ।
আর খালেদের সব আবদারও শফি ভাইয়ের কাছে। শফি ভাই আবার খুব দুঃসাহসী
। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল।
যুদ্ধশেষে ব্যবহৃত SLR-টা
জমা দেবার আগে খালেদকে ধরতে এমনকি লক -আনলক করতেও
দিয়েছিল। খালেদের যে কী আনন্দ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের অনেক কাহিনী শফি ভাই খালেদকে
শুনিয়েছিল। কিন্তু খালেদের ‘একটি ছবির জন্য’ কাহিনীটি শুনে মন্তব্য করেছিল, “ তুই
আমার চেয়েও বড় মুক্তিযোদ্ধারে !” আলাদিনের
সন্দেশ এনে খালেদকে খাইয়েছিল।
আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু আসবেন। তাকে সম্বর্ধনা দেয়া হবে। ঐ কারণে শফি ভাই ভীষণ ব্যস্ত। শফি
ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন
একটি হলের একজন ডাকসাইটে ছাত্রনেতা। সুতরাং শফি ভাইয়ের অনেক
দায়িত্ব। আর বাবার মুখে খালেদ প্রায় একটি কথা শুনে, ঝোপ বুজে কোপ মারতে হয়।
সব শুনে খালেদ শফি ভাইয়ের নিকট আব্দার করে বসে,
অনুষ্ঠানের দিন তাকে নিয়ে যেতে এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে
দিতে। শফি ভাইও রাজী হয়েছেন। খালেদকে বলে গেছেন সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকতে। তিনি
নিজে আসতে না পারলেও ঘনিষ্ঠ বন্ধু কামাল কিম্বা কাজলকে পাঠাবেন খালেদকে নিয়ে যেতে।
দুজনকেই খালেদ খুব ভাল করে চিনে।
বঙ্গবন্ধুর সাথে হাত
মেলানো! কল্পনা করতেই খালেদের বুকটা বিগৎ খানেক ফুলে ওঠে। এই কাজটাই কেবল বাকি।
নচেৎ বঙ্গবন্ধুকে সে ৪বার দেখেছে। প্রথমবার দেখেছিল ’৭০-র নির্বাচনের আগে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে।
বঙ্গবন্ধু নির্বাচনী প্রচারে কোথাও যাচ্ছিলেন আর রাস্তার দু’ধারে দাঁড়ানো লোকদের
উদ্দেশ্যে হাত নাড়ছিলেন। শেষবার দেখেছিল
একটু দূর থেকেই, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে। ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে নৌ-ভ্রমণ
করেন। খালেদরা তখন নারায়ণগঞ্জে থাকত। জাহাজের ডেকে সবার সামনে দাঁড়ানো দুই
কিংবদন্তী ---- বঙ্গবন্ধু আর ইন্দিরা
গান্ধী। বন্দী দশা থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু যেদিন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সেদিনও
খালেদ বাবার সাথে সোহরাওয়ারদি উদ্যানে হাযির হয়েছিল। কিন্তু সবচে উল্লেখযোগ্য দর্শন
ছিল সোহরাওয়ারদি উদ্যানে ; ৭-ই মার্চ, ১৯৭১ সালে। ঠিক ২ দিন আগে খালেদ বেড়াতে
গিয়েছিল টিকাটুলিতে, খালার বাসায়। পাড়ার প্রায়
সব লোক গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে , কলেজ পড়ুয়া খালাতো ভাইদের সাথে খালেদও । খালেদ
মনে করে ঐ দিন নিজ কানে সেই কালজয়ী ভাষণটি শুনতে পারা তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ
ঘটনা। খালেদের কানে এখনো বাজে বজ্রকণ্ঠের সেই উদাত্ত আহবান, ‘এবারের সংগ্রাম
......।’ ’
৭১-এর গোটা বৎসর সুযোগ পেলেই দরজা জানালা বন্ধ করে খালেদ ঐ কথাগুলো আবৃত্তি করত। এটা ছিল তার খুব প্রিয় শখ। দেশ স্বাধীনের পর গোটা ভাষণটাই সে মুখস্থ করে ফেলে। গেল বৎসর স্কুলের ‘যেমন খুশী তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানে ঐ ভাষণটির কিছু অংশ আবৃত্তি করে ১ম পুরস্কার জেতে নেয়। নিজ কানে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনার কারণে স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীর কাছে খালেদের একটি ভিন্ন আভিজাত্য আছে। ওকে অন্যরা হিংসার চোখে দেখে। খালেদ এটা খুব ‘উপভোগ’ করে। গোটা স্কুলে কেবল ২ জন ----- খালেদ আর ‘রাজু ছ্যার’ ঐতিহাসিক সেই ভাষণের শ্রোতা। আগামীকাল থেকে সে রাজু ছ্যারকেও ছাড়িয়ে যাবে। সেই হবে সারা স্কুলে একমাত্র ব্যক্তি যে বঙ্গবন্ধুর সাথে হাত মিলিয়েছে। উফ! আবেগে উত্তেজনায় খালেদ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। এখন কেবল শফি ভাইটা যথাসময়ে এলেই হয়।
দরজা খোলাই ছিল। উদ্ভ্রান্ত চেহারা নিয়ে ঘরে ঢুকল শফী ভাই।
৭১-এর গোটা বৎসর সুযোগ পেলেই দরজা জানালা বন্ধ করে খালেদ ঐ কথাগুলো আবৃত্তি করত। এটা ছিল তার খুব প্রিয় শখ। দেশ স্বাধীনের পর গোটা ভাষণটাই সে মুখস্থ করে ফেলে। গেল বৎসর স্কুলের ‘যেমন খুশী তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানে ঐ ভাষণটির কিছু অংশ আবৃত্তি করে ১ম পুরস্কার জেতে নেয়। নিজ কানে ৭ই মার্চের ভাষণ শুনার কারণে স্কুলের সকল ছাত্রছাত্রীর কাছে খালেদের একটি ভিন্ন আভিজাত্য আছে। ওকে অন্যরা হিংসার চোখে দেখে। খালেদ এটা খুব ‘উপভোগ’ করে। গোটা স্কুলে কেবল ২ জন ----- খালেদ আর ‘রাজু ছ্যার’ ঐতিহাসিক সেই ভাষণের শ্রোতা। আগামীকাল থেকে সে রাজু ছ্যারকেও ছাড়িয়ে যাবে। সেই হবে সারা স্কুলে একমাত্র ব্যক্তি যে বঙ্গবন্ধুর সাথে হাত মিলিয়েছে। উফ! আবেগে উত্তেজনায় খালেদ চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যায়। এখন কেবল শফি ভাইটা যথাসময়ে এলেই হয়।
দরজা খোলাই ছিল। উদ্ভ্রান্ত চেহারা নিয়ে ঘরে ঢুকল শফী ভাই।
:
কি রে ? কি হয়েছে তোর ?
বিস্মিত খালেদের বাবা জানতে চাইলেন।
:
চাচা ! সব শেষ।
:
সব শেষ মানে ? ভাইজান-ভাবীর কোন দুঃসংবাদ ? খুলে বল কি হয়েছে
?
: মানে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। স্বপরিবারে। কেন ? সকাল থেকে রেডিও খুলেন নি ?
: হায়!
হায়!! বলিস কি!!! রেডিওটা দু’দিন ধরে বেশ ডিস্টার্ব করছে। তাই ‘অন’ করি নি।
এমন সময়ে ঘরে
ঢুকল জহির, খালেদের বন্ধু এবং প্রতিবেশী। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
খালেদ! খবর শুনেছ ? সর্বনাশ হয়ে গেছে । বঙ্গবন্ধুকে সৈন্যরা মেরে ফেলেছে । এটুকু বলেই জহির ধপ করে বসে পড়ল খালেদের পাশের চেয়ারে।
:
তুমি কোত্থেকে শুনলে ? শফি ভাই জহিরকে প্রশ্ন
করে । উভয়ে উভয়ের
পূর্ব পরিচিত।
: প্রথমে মেঝ ভাইয়ের মুখ থেকে, তারপরে নিজেই রেডিও
শুনেছি।
: এখন কি হবে ? স্কুল কলেজ সব বন্ধ হয়ে যাবে ? ’৭১ সালের মত
?
:
কি হবে তাতো কেউ জানে না। তবে এর জের অনেকদূর যাবে। দেশটাই শেষমেশ টেকে কিনা কে জানে ?
খালেদের আম্মা পাকঘর ছেড়ে কখন কাছে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ খেয়াল করে নি। খালেদ আম্মুকে আঁচলে চোখ মুছতে দেখল। খালেদ জানে তার আম্মু বঙ্গবন্ধুর অন্ধভক্ত। মহল্লার খালাম্মারা আড্ডা শুরু করলে অনেকে অনেক কথা বলে, গত বৎসরের দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার লোক মারা যাওয়াতে অনেকে বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে দোষ চাপায় । কিন্তু আম্মার মুখ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কক্ষনো একটা শব্দও বের করা যায়নি। ১৬ই ডিসেম্বর যখন দেশ স্বাধীন হয়ে গেল আর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দী, সেদিন থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি পর্যন্ত আম্মুকে দেখেছে কাঁদতে আর নামায পড়তে। অথচ খালেদ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারে পাকিস্তানে আটকে পরা ছোট খালার জন্যও আম্মু এত পেরেশান ছিল না। খালেদের বাবা প্রায় ঠাট্টা করেন, বঙ্গবন্ধু যদি খবর পেত, তুমি তার এত ভক্ত তবে তো তোমাকে মহিলা মন্ত্রী বানিয়ে দিত। তখন আম্মু উত্তর দেন, তাহলে ভক্তি রইলো কোথায় ? বিনিময় হয়ে গেল না ?
খালেদের আম্মা পাকঘর ছেড়ে কখন কাছে এসে দাঁড়িয়েছে কেউ খেয়াল করে নি। খালেদ আম্মুকে আঁচলে চোখ মুছতে দেখল। খালেদ জানে তার আম্মু বঙ্গবন্ধুর অন্ধভক্ত। মহল্লার খালাম্মারা আড্ডা শুরু করলে অনেকে অনেক কথা বলে, গত বৎসরের দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার লোক মারা যাওয়াতে অনেকে বঙ্গবন্ধুর ঘাড়ে দোষ চাপায় । কিন্তু আম্মার মুখ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কক্ষনো একটা শব্দও বের করা যায়নি। ১৬ই ডিসেম্বর যখন দেশ স্বাধীন হয়ে গেল আর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে বন্দী, সেদিন থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি পর্যন্ত আম্মুকে দেখেছে কাঁদতে আর নামায পড়তে। অথচ খালেদ নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারে পাকিস্তানে আটকে পরা ছোট খালার জন্যও আম্মু এত পেরেশান ছিল না। খালেদের বাবা প্রায় ঠাট্টা করেন, বঙ্গবন্ধু যদি খবর পেত, তুমি তার এত ভক্ত তবে তো তোমাকে মহিলা মন্ত্রী বানিয়ে দিত। তখন আম্মু উত্তর দেন, তাহলে ভক্তি রইলো কোথায় ? বিনিময় হয়ে গেল না ?
আম্মু
শফি ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, শফি! সংক্ষেপে নয়, যতটুকু জান পুরোটাই বিস্তারিত বল।
:
চাচী আম্মা! আসলে আমিও তেমন জানতে পারিনি। আজান হতে না হতেই গোটা
শহরে খবর ছড়িয়ে পরে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হয়েছেন ।
আমাদেরকে বলা হল নিরাপত্তার খাতিরে যেন হল ছাড়ি। আমি আবার ধানমণ্ডি এলাকাটা ঘুরে
এসেছি। যা জেনেছি আরো অনেকে মারা গেছে।
শেখ মণিও মনে হয় বউ বাচ্চা সহ নিহত হয়েছে।
শফি ভাইয়ের কথার মাঝখানে প্রতিবেশী মোড়ল সাব এসে ঘরে ঢুকেছিল। তিনি আবার বঙ্গবন্ধুকে খুব একটা পছন্দ করেন না। কিন্তু এ মুহূর্তে তিনিও বিষাদগ্রস্ত। শফি ভাইকেও আগ থেকেই চেনেন। শফি ভাইকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা তো ছাত্রনেতা, সরাসরি রাজনীতি করেন । কারা করতে
পারে এই জঘন্য কাজ ?
:
এগুলো তো আর এখন পরিষ্কার বুঝা যাবে না। পেছনে কারো না কারো হাত থাকতেই হবে। পরাজিত পাকিস্তানীদের দোসররা তো আছেই, হতে পারে জাসদ-ও। বাহির
থেকে চীন-আমেরিকা-পাকিস্তান
তো অনেক আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর উপরে ক্ষ্যাপা, তবে ভারত হলেও
বিচিত্র কিছু নয়। কারণ ভারত
যে বঙ্গবন্ধুকে বাগে রাখতে পারছে না এটা তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। তাছাড়া………।
খালেদের কাছে এসব জটিল রাজনিতিক
প্যাঁচাল ভাল লাগল না। সে
নিজের রুমে গেল। তার সাথে জহিরও। খালেদের মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে। বিছানায় শুয়ে জহিরের উদ্দেশ্যে বলল, আমার খুব খারাপ লাগছে। একটু একা থাকতে দাও। জহির নিরবে প্রস্থান হল। খালেদ মিনিট পাঁচেক চুপচাপ শুয়ে থেকে উঠে বসল। দেরাজ খুলে সবুজ মলাটের প্রিয় ডায়েরীটা বের করল। সিদ্ধান্ত
নিল যে, তার
জীবনে বঙ্গবন্ধু সংক্রান্ত যাবতীয় ঘটনা লিখে রাখবে । স্মৃতি
থেকে কখন কোনটা হারিয়ে যায়! পরে
আফসোসের অন্ত থাকবে না। কিন্তু
লিখতে গিয়ে কোন লেখা এল না, বাঁধভাঙ্গা
জোয়ারের মত কান্না এল। কোনমতে
আঁকাবাঁকা অক্ষরে লিখল, আজ
আমার কান্নার দিন, আজ
শুধুই কাঁদব। তারপর
উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে লাগল।
তারপর! ৪০
বৎসরের বেশী পার হয়ে গেছে। কিন্তু
খালেদের আর কোনদিন ডায়েরী লেখা হয় নি। লিখতে
গেলেই যদি অবাধ্য কান্না আসে, তবে
কী আর লেখা যায়! কিন্তু
সে ভুলে নি কিছুই। হয়তো
আমৃত্যু ভুলবেও
না।।
লেখকঃ
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক ও কলামিস্ট,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd
সহকারী অধ্যাপক ও কলামিস্ট,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুন