-->

আল কুরআনের তথাকথিত গবেষকগণ!

আমি নিজে কোন আলেম নই। তবে আমি ঐ সকল সৌভাগ্যবানদের একজন যারা কুরআন-হাদিসকে ভালবাসে, শত ব্যস্ততার ফাঁকে একটু করে হলেও কুরআন-হাদিস চর্চা করতে চায়। আর এই কাজটি করতে গিয়েই আমরা কিছু মারাত্নক ভুল করে থাকি। এই কথাগুলো তাদের সম্বন্ধে বিশেষভাবে প্রযোজ্য যারা আল-কুরআনে বিজ্ঞানের অনুসন্ধান নিয়ে সদাব্যস্তএই জাতিয় লোকদের অধিকাংশের মধ্যে এহেন বিষয়গুলো দেখেছি বলেই আমি এই প্রসঙ্গে দিকপাত করছি। আমার বক্তব্য হয়তো খুবই তিক্ত হবে, কিন্তু উহা অভিজ্ঞতালব্ধ ও সত্য। 


   
প্রথমতঃ এদের ব্যক্তিগত আমল ভয়ংকর পর্যায়ের ত্রুটিপূর্ণ। দাঁড়ি-টুপি ইত্যাদি তো দূরের কথা, নামায-রোযা-পর্দার ধারে কাছেও অনেকে নেই। তারা রাতদিন পবিত্র কুরআন শরীফের বিভিন্ন অনুবাদ-তাফসীর ইত্যাদি নিয়ে বসে থাকে ( কারণ এদের অধিকাংশই আরবী বুঝে না )। যখনি এদের কানে আসে যে
বিজ্ঞানের অমুক নতুন আবিষ্কারটি সাধিত হয়েছে, তখনি এরা হন্য হয়ে খুঁজে বেড়ায় কুরানুল কারীমের কোথাও এই আবিষ্কারের কথা পাওয়া যায় কী না ।  অতঃপর একদিন নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা নিয়ে হাজির হয়ে জানায় যে, সাড়ে ১৪০০ বছর আগে আল কুরআনের ...... নং আয়াতে ঐ আবিষ্কারের কথা ব্যক্ত হয়েছে। আফসুস, এদের বুদ্ধি ও কর্মের জন্য। তন্ন তন্ন করে কুরআনের  অনুবাদ পড়ার এবং সেখান থেকে কষ্টকল্পিত উপায়ে একটি বৈজ্ঞানিক  আবিস্কারের  কথা বের করার এমন দুরূহ কাজটি তারা করতে পারে; অথচ সারা কুরআন জুড়ে যে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ্‌র হুকুম পালনের এবং রাসুলের অনুসরণের কথা বারংবার বলা হয়েছে, সেই বিষয়টি দেখেও যেন তারা দেখে না। ওদেরকে শরীয়তের অনুসরণের কথা বলা হলে, কৌশলে এড়িয়ে যায় । আর যারা উদ্ধত স্বভাবের তারা জবাব দেয়, আমরা আর বড় কাজ করছি।  অথচ প্রকৃত ব্যাপারটিই ওরা বুঝতে পারছে না যে, পরকালের মুক্তি নির্ভর করছে খাঁটি মনে শরীয়তের অনুসরণের উপর, কুরআনুল কারীমের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বের করার উপর নয়।   
প্রসঙ্গতঃ কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি। এদেশের আলেম সমাজ এবং বুজুর্গানে দ্বীন যারপর নাই সহজ সরল।  আমি লক্ষ্য করেছি, উনাদের নিকট যখন কোন দাঁড়ি টুপী বিহীন স্যুট কোট পরিহিত লোকেরা হাজির হয়ে কোন আয়াতের চটকদার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা শুনায় তখন তাদেরকে অনেক সহজভাবেই গ্রহণ করা হয়। উলামায়ে হযরত হয়তঃ চিন্তা করেন, এই যে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান, এটাও দ্বীনের একটি  খেদমত। কিন্তু  উলামায়ে হযরত বুঝতে পারছেন না যে, এই লোকগুলো একদিন তাদের বুকে চুরি মারবে। কিভাবে ? 

ইতিহাস সাক্ষী, এই উপমহাদেশে মুসলমানদের উন্নতির নাম করে ইংরেজি শিক্ষা চালু করা  য়েছিল। কিন্তু সেই ইংরেজি শিক্ষিতদের মধ্য থেকে আজকাল এমন  এমন লোক বের হচ্ছে যারা ইসলাম ও মুসলমানকে এদেশ থেকে উখাত করতে বদ্ধ পরিকর। শুধু তাই  নয়, আজ থেকে ৩০-৪০ বসর আগে কোন দ্বীনি মাহফিল হলে মঞ্চে বসতেন শ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ। কিন্তু আজ! মঞ্চে বসেন আলেম সমাজ, তবে কেবলমাত্র বক্তা হিসাবেই। আর বিশেষ অতিথি, প্রধান অতিথি, সভাপতি ইত্যাদি হ-জ-ব-র-লের আড়ালে মাতব্বরি করেন দাঁড়ি-টুপী বিহীন এমন কিছু লোক যারা কুরআন গবেষক বা ইসলামের খাদেম হিসাবে নিজদেরকে পরিচিত করতে খুবই আনন্দ পান। যদিও বাস্তবে ইসলামের ক্ষতিসাধনে এরা বিন্দুমাত্র পিছপা হন না।  হয়তোঃ দেখা যাবে যে অচিরেই এমন দিন আসবে যখন কুরআন সম্মেলন ইত্যাদি ধরণের কিছু হবে অথচ সেখানে এই অজুহাতে কোন আলেম কে ডাকা হবে না । কারণ তারা আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান জানে না ; অতএব, তারা কুরআনও বুঝে না। আর শয়তান তখন আনন্দে হাততালি দিয়ে নাচবে। কারণ তার  উদ্দেশ্য সমূহের এটাও একটা যে আলেম সমাজ কোণঠাসা হয়ে যাক। আমি মনে করি যে, বুজুর্গানে দ্বীনের উচিত এসকল ফাসিক-ফাজির কুরআন গবেষকদেরকে সরাসরি একথা বলে দেয়া তারা যেন এ সমস্ত বেদরকারি কাম ছেড়ে দিয়ে শরীয়তের অনুসরণে আত্মনিয়োগ করে।   

আল কুরআনে যারা বিজ্ঞানের থিওরী খুঁজে বেড়ায়, তাদের আরো একটি স্বভাব হল, তারা হাদিস নিয়ে ততটা মাথা ঘামায় না, যতটা মাথা ঘামায় কোথায় কোন বৈজ্ঞানিক কি আবিষ্কার করলেন, কোন পাশ্চাত্য দার্শনিক কি বললেন আর সাহাবা(রাঃ) এবং তাবেয়ী(রঃ) দের উক্তি তো ওরা শুনতেও নারায। কথাটাতে সন্দেহ লাগলে, কুরআন বিজ্ঞান সংক্রান্ত যে কয়টা বই বাজারে আছে, সেগুলো খুলে যে কেহ দেখতে পারে। এই জাতিয় বই দিন দিন আর বেশী বেশী বের হচ্ছে। আর সবগুলো বইয়ের বিষয়বস্তু একই ----  পবিত্র কুরআনের আয়াতের অর্থকে ইচ্ছামতো টেনেহিঁচড়ে,  বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক কোন আবস্কারের সাথে সামঞ্জস্য দেখানো। যেন বিজ্ঞানটাই প্রকৃত সত্য এবং কুরআনের আয়াত দ্বারা যদি বিজ্ঞানের থিওরীকে ব্যাখ্যা করা না যায়, তাহলে কুরআন বুঝি অচল হয়ে গেল(না-উজুবিল্লাহ)শ্রদ্ধেয় আলেমসমাজের প্রতি বিনীত অনুরোধ, এহেন গবেষকদেরকে আপনারা নিরুসাহিত করুন। এদের হাতে এভাবে পবিত্র কুরআন যেন অপব্যাখ্যায়িত না হয়, সেজন্য আপনারা সোচ্চার হোন।

পবিত্র কুরআন শরীফে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব তালাশকারীরা আরো এমন কিছু অপকর্ম করে থাকেন, যেগুলোকে ছোট মনে করা মানেই মস্তভুল। এহেন গবেষকদের অধিকাংশের লেখায় লক্ষ্য করা গেছে যে, তারা আব্বাসীয় শাসনকালকে (৭৫০ খ্রীঃ১২৫৮ খ্রীঃ) ইসলামের ইতিহাসের  শ্রেষ্ঠতম সময় বলে ধারণা করে এই কারণে যে মুসলমানরা জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রভূত  উন্নতিসাধন করেছিল। কিন্তু এই ধারণাটি আকিদাহ বিরোধী। পবিত্র হাদীস শরীফে পরিষ্কার ভাষায় বলা আছেঃসর্বোত্তম যুগ হচ্ছে আমার যুগ, অতঃপর আমার পরবর্তীদের যুগ, অতঃপর তাদের পরবর্তীদের যুগ। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আহলুস সুন্নাত য়াল  জামাতের সর্বসম্মত আকীদ হল, শ্রেষ্ঠতম সময় হল নবুয়াতের যুগ, অতঃপর খুলাফায়ে রাশেদিনের যুগঅতঃপর হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) এর যুগ, তারপর তাবেয়ীদের  যুগ  অতএব,  এখন যে সকল  তথাকথিত ইসলাম-গবেষক বস্তু বিজ্ঞানকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে থাকেন, তারা স্বীয় আকীদ (অনেকে হয়তো না জেনে বা বুঝে) ধ্বংস করে দিচ্ছেন এবং লেখনীর মাধ্যমে অনেক  পাঠকের আকীদাহ ক্ষতিগ্রস্থ করছেন অবশ্য এটা ঠিক যে আব্বাসীয় খলিফারা (বিশেষ করে মুতাজেলা মতবাদের ধারক বাদশাহ মামুন) জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পেছনে অনেক অবদান রেখেছিলেন কিন্তু ওতে ইসলামের কোন ফায়দা হয়নি, হয়তো ঐ যুগের মুসলমানদের পার্থিব কিছু উপকার হয়ে থাকতেও পারে।

তেমনি আরেকটি বিভ্রান্তি এ জাতিয় গবেষকগণ সৃষ্টি করেন পাকিস্তানী বিজ্ঞানী ডঃ আব্দুস সালাম-কে  নিয়ে। অনেকে তো  তাকে একজন খাঁটি মুসলমান  বলে পরিচিত করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে যান। এমনকি এদেশের বিখ্যাত দ্বীনি মাসিক মদিনাতেও এ ভুলটি বারংবার করা হয়েছে। অথচ গোটা দুনিয়া জানে যে,  ডঃ আব্দুস সালাম একজন কাদিয়ানী অর্থা কাফের।  খুব বেশী প্রচলিত একটি মুসলমানি নামের অধিকারী ডঃ আব্দুস সালামকে একজন অমুসলমান কিম্বা কাফের হিসাবে গণ্য করতে অনেকেরই খটকা লাগে এমনকি ডঃ আব্দুস সালাম একজন কাদিয়ানী অর্থা কাফের একথা শুনার পর অনেক নির্বোধ এমনও বলে বসে, “কাদিয়ানী হলেই যে কাফের হতে হবে, এরূপ কোন কথা আছে ? আসলেই মোল্লারা বেশী বাড়াবাড়ি করে” কিন্তু বক্তা হয়ত জানে  না যে, এই কথার দ্বারা সে নিজের ইমানের মূলে কুঠারাঘাত করল। তার মৃত্যুর তার ওয়ারিশ ও শুভানুধ্যায়ীরা তাকে কাদিয়ানি ধর্মমতে কাদিয়ানিদের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত  গোরস্থান লাহোরের রাবওয়াতেদাফন করে। প্রসঙ্গতঃ প্রথম চন্দ্র বিজয়ী Neil Armstrong এর ইসলাম গ্রহণ নিয়ে দু’কথা বলতে হয়। উনি হয়তো মুসলমান হয়েছিলেন অথবা হন নি। হয়ে থাকলে উনিই ভাগ্যবান, কারণ পরকালের অনন্ত আযাব থেকে বেঁচে গেছেন। নচেৎ তার দুর্ভাগ্য। আমাদের কারোরই করার কিছু নেই। দ্বীন ইসলাম স্বমহিমায় সমুজ্জ্বলযে ইসলামকে আঁকড়ে ধরবে, সেই ভাগ্যবান। একজন নয়, লক্ষ-কোটি Neil Armstrong এর ইসলাম গ্রহণে বা বর্জনে ইসলামের কিছুই যায় আসে না । কিন্তু সীমাতিরিক্ত বিজ্ঞানপ্রেম  যাদের মধ্যে রয়েছে, তারা এক্ষেত্রে মানসিক দুর্বলতায় ভোগেন। এজন্য তারা সর্বদা সন্ধান করতে থাকেন যে কোথাও কোন নামজাদা বিজ্ঞানী কিংবা দার্শনিক ইসলাম গ্রহণ করল কী না।        

এগুলোর চেয়েও অনেক বড় যে ভুলটি বিজ্ঞানপ্রেমীরা করে থাকেন সেটি হলঃ মুসলমানদের অবনতির বা আজকের দিনে গোটা বিশ্বের সর্বত্র মুসলমানরা যে লাঞ্ছিত-অপমানিত হচ্ছে, তাঁর মূল কারণ হিসাবে তারা চিহ্নিত করেন আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানে মুসলমানদের অনগ্রসরতাকে। তাদের বক্তব্য পড়লে বা শুনলে মনে হয়, মুসলিম জাতি যদি জাগতিক জ্ঞান বিজ্ঞানে পাশ্চাত্যের সমকক্ষতা অর্জন করতে পারে, তাহলে গোটা বিশ্বের বাদশাহী মুসলমানদের হাতে চলে আসবে। অথচ এই ধরণের মনোভাব পোষণ করা ঈমানের জন্য ক্ষতিকারক। কারণ আল্লাহ্‌ পাক বলেছেন, আর তোমরা নিরাশ হয়ো না ও দুঃখ কর না এবং তোমরাই বিজয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও (৩:১৩৯)।  এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্য হতে কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি যা আনয়ন করেছি তার প্রতি তার মন পুরোপুরি অনুগত হবে।” (শরহে সুন্নাহ )।  আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে, অস্ত্রে-শস্ত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তাকে কেহ অস্বীকার করে না।  কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, এগুলোকে আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের কামিয়াবীর জন্য মূল শর্ত বানান নি।  

আজকাল বিভিন্ন পত্র পত্রিকার পাতা ওলটালেই এক শ্রেণীর নব্য লেখকদের সন্ধান মেলে এবং মহামারীর ন্যায় এদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ইহারা পবিত্র কুরআন শরীফের  আয়াত থেকে নিজেদের মন মত  আজব আজব ব্যাখ্যা বের করছেযেমন কেউ বের  করছে ১৯ এর তাপর্য, কেউ খুঁজে পায় ৫ এর রহস্য (এখন পর্যন্ত অন্য কোন সংখ্যার হাকিকাত বা মারেফাত আমার নযরে আসে নি। হয়তো কেউ চেষ্টায় আছে, এখনো কামিয়াব হয় নি!), কেউ প্রমাণ করে পৃথিবী ঘুরে, কেউ দলিল দিয়ে সূর্যকে ঘুরাচ্ছে,  কেউ উভয়টি ঘোরার যুক্তি খাড়া করে, আবার কেউ প্রমাণ করে যে সবই স্থির।  আর এই লোকগুলো মনে করে যে এ সবের মাধ্যমে তারা কুরআনের এবং দ্বীনের বহুত খেদমত করছে। ইহা যার পর নাই পরিতাপের বিষয়। আমি কসম করিয়া বলিতে  পারি, এইসব তথাকথিত জ্ঞানী ব্যক্তিগণ প্রকৃত ইসলামী শাস্ত্রের বাতাসেরও সাক্ষা পায় নাই। বন্ধুগণ! বিজ্ঞান ও কারিগরিকে অস্বীকার করা যায় না । কিন্তু কুরআনের সাথে ইহাদের কোন সম্পর্ক আছে কি না তাহাই জিজ্ঞাস্য। কুরআনে ইহাদের উল্লেখ থাকিলেও তাহা গৌণ। কুরআনের প্রধান আলোচ্য বিষয় শুধু একটি। তাহা হইতেছে খোদার নৈকট্য লাভের উপায়। এই উপায় সমূহের সহিত  যে সব বিষয় সম্পৃক্ত, উহাদের উল্লেখ কোথাও উদ্দেশ্য হিসাবে এবং কোথাও গৌণ হিসাবে হইয়াছে। উদাহরণঃ ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আমল সমূহ উদ্দেশ্য হিসাবে উল্লেখিত হইয়াছে। কারণ, এগুলি নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। আর কতকগুলি বিষয় আসল উদ্দেশ্যের সহিত সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারণে গৌণ হিসাবে উল্লেখ করা হইয়াছে। ...... দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে মুক্তি প্রতিষ্ঠিত হউক, কুরআন তাহাই চায়। এমতাবস্থায় দুনিয়ার শাসন কর্তাদের আইন বইতে যেসব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনুসন্ধান করা না হয়, খোদার কালাম কুরআনে তাহা অনুসন্ধান করা খুবই অবিচারের কথা(মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া; ৫ম খণ্ড)।  শতাব্দীর মুজাদ্দিদের সতর্কবাণীতেও যদি এই সকল পণ্ডিতমন্যদের বোধদয় না হয়, তাহলে তাদের জানা উচিত, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “ যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া কুরআন সম্পর্কে কথা বলবে সে যেন জাহান্নামে তার আবাস বানিয়ে নেয়। (তিরমিজি)।” একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  কোন সম্প্রদায়কে কুরআন সম্পর্কে বিতর্ক করতে শুনে বললেন, “তাদের পূর্ব পুরুষরা এ কারণেই ধ্বংস হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কুরআনের একটি অংশ অপরটিকে সত্যায়িত করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমরা এর একাংশ দিয়ে অপর অংশকে মিথ্যা প্রমাণ করো না। তোমরা এর যেটুকু জ্ঞাত আছ তাহা বল। আর যে সম্পর্কে জ্ঞাত নও, সে সম্পর্কে কোন আলেমের নিকট থেকে জেনে নাও (আহমাদ, ইবনে মাজা)।” সুতরাং পবিত্র কুরআনের আয়াত নিয়ে পৃথিবী ঘোরে না কি সূর্য ঘোরে এই বিতর্কে যারা মেতেছেন তারা আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে সাবধান হন এবং আপনাদের অর্থহীন  কাজের জন্য ভয় করুন আল্লাহ্‌র সতর্কবাণীকেঃ  “রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আমার রব! আমার সম্প্রদায় এই কুরআনকে প্রলাপ সাব্যস্ত করেছে (২৫:৩০)।”

আল্লাহ্‌ পাক আমাদের সকলকে দ্বীনের সঠিক বুঝ প্রদান করুকআমীন!  


----------------------সমাপ্ত-------------------------


লেখক: শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক।
মোহাম্মদ সালেক পারভেজসহকারী অধ্যাপক ও কলামিস্ট
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd
প্রথম প্রকাশঃ ১২ মে,২০১৬ বাংলানিউটোয়েন্টিফোর.কম ওয়েবসাইটে কুরআন-গবেষণা এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা শিরোনামে নিবন্ধটি সংক্ষেপিত আকারে ১ম প্রকাশিত হয়েছে। এখানে মূল লেখাটি বর্ণিত হল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন