-->

কোচিং, কেজি এবং প্রজন্মের লেখাপড়া

কবি জীবনানন্দ দাস “অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ,” বলে কেন হতাশা ব্যক্ত করেছিলেন এখনো অনেকের নিকটে অজ্ঞেয়! তবে এ বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার যে আমাদের এই বাংলাদেশে স্কুল পর্যায়ের লেখাপড়াটা আজ ‘কোচিং’ নামের এক অদ্ভুত আঁধারে হারিয়ে গেছে। এই কোচিং যেন রূপকথার সেই বার হাত লম্বা কাঁকুড় যার বীচি তের হাত। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে প্রচুর লেখালেখি, বাদ-প্রতিবাদ, আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে কিন্তু সবই যেন অরণ্যে রোদন। তাই বলার জন্য হাজার কথা থাকলেও, তা না বলে ইংরেজি ভাষার বিখ্যাত প্রবাদ: Example is better than precept এর অনুকরণে কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করছি।

ঘটনা-১:  
সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৬।
সকাল সাড়ে সাতটা। মিরপুর-১ থেকে বিহঙ্গ পরিবহণের একটি বাসে ওঠলাম।পাশের সিটে আগে থেকেই বসে আছে ১২-১৩ বছরের একটি বাচ্চা ছেলে।নাদুস নুদুস গড়ন, গোলগাল চেহারা, ফর্সাসুন্দর। আমাকে বুড়ো মানুষ দেখে  মিষ্টি করে সালাম দিল। আমিও জবাব দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।


 সেদিনের সেই বাচ্চাটির সাথে আমার কথোপকথনটা ছিল নিম্নরূপ। 

: খোকা, স্কুলে  যাচ্ছ নাকি ?
: জী না, স্কুল বন্ধ, কোচিং এ যাচ্ছি।
: কোনখানে ?
: ২৭ নম্বর। 
: এত দূরে!  শুধুমাত্র কোচিং করার  জন্য !! 
: স্যারের বাসা ওখানে যে। আর স্কুলের স্যারের কাছে না পড়লে যত ভাল পরীক্ষা দেই না কেন নাম্বার দেয় না। 
: কোন স্কুলে পড় তুমি ? কোন ক্লাসে ? 
: ৭ম  শ্রেণীতে।  ধানমণ্ডি গভঃ বয়েজ হাইস্কুলে, ২৭ নম্বরের একটু আগে। 
: কোচিং-এ  কয়দিন যাও ?
: প্রতিদিনআগে কোচিং করি তারপরে স্কুল শুরু হয়। 
: আমাকে পুরো রুটিনটা বুঝিয়ে বল। কোন সময়টাতে তুমি কোচিং কর আর কোন সময়টাতে স্কুলে থাক
: সাড়ে আটটা থেকে সারে এগারটা পর্যন্ত কোচিং করি। তারপর সাড়ে ১২টায় স্কুল বসে।ছুটি হয় সোয়া  ছয়টায়।

আমি যেন আকাশ থেকে  পড়লাম। অবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম, তাহলে তুমি কখন বাসা থেকে বের হও এবং বাসায় ফেরৎ পৌঁছ কয়টার সময় আর নাস্তা, দুপুরের খানা কোথায় সারো ? 
সকাল ৭ টার আগেই বাসা থেকে বের হই আর বাসায় ফিরে আসতে আসতে রাত ৮টা সাড়ে ৮টা বাজে। নাস্তা করে বের হই। দুপুরের খানা হোটেলেমাঝে মাঝে সকালের নাস্তাও হোটেলে করতে হয়।

বক্তব্য শুনে আমার মাথা রীতিমত ঘুরছে। এবারে একটু মজার সুরে বললাম, বাসায় ফিরে নিশ্চয়ই ঘুম। সারাদিনে যে পরিমাণ ক্লান্ত হয়েছ, খেতেও নিশ্চয় ইচ্ছা হবে না।
বাচ্চাটির মুখে ম্লান হাসি ফুটল। করুণ কণ্ঠে বলল, জী না। রাত ৯ টায় আর একজন স্যার আসে। তার কাছে সাড়ে ১০টা-এগারটা পর্যন্ত পড়তে হয়। 
: what!বাবু, তুমি কী বলছ? এটা কি সম্ভব? পাশ থেকে এক ভদ্রলোকের বিস্মিত কণ্ঠস্বর কানে এল। 

একে তো সিটিঙ সার্ভিস, তার ওপরে স্থানে স্থানে জ্যাম। গাড়ির ভেতরে মোটামোটি নিরব পরিবেশখেয়াল করি নি যে, কখন থেকে আরো অনেকে  উৎকীর্ণ হয়ে  আমাদের  অলোচনা শুনতে শুরু করেছে! 
আমি অবাক হয়ে বললাম, অর্থাৎ রাত ১১টার  আগে তুমি বিছানায় যেতে পারছ না।
: জী না, এরপরে আমি নিজে একটু পড়াশুনা করি।বাড়ীর কাজ ইত্যাদি শেষ করে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত ১২ টা পার হয়ে যায়।
: বল কী! এত পরিশ্রম করলে খুব দ্রুত তোমার স্বাস্থ্য শরীর ভেঙ্গে পড়বে।
: ঠিক বলেছেন। আসলে আমার মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগেদেখেন আমার চোখের নিচেও কালি জমছে, মুখে ব্রনের মত কী যেন ওঠছে।
দেখলাম কথাটা সত্য। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করলাম, কেন ? 
পড়ালেখার পেছনে এত অমানুষিক পরিশ্রম করার কোন প্রয়োজন আছে কী ? 
: পরীক্ষায় ভাল ফল করতে হবে যে! সবাই বলে GPA-5 না পেলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

ছেলেটি থামল। আমিও কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম। আসলে থাকতে বাধ্য হলাম। বলার মত কিছু খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে মনে নিজকে মস্ত ভাগ্যবান ভাবতেছিলাম দুই কারণে: () স্কুলের লেখাপড়াটা অনেক বৎসর আগেই শেষ হয়েছে ; () আমাদের সময়ে GPA-5 নামক ভয়ংকর জিনিষটি ছিল না। 

কিন্তু ভাবনায় ছেদ পড়ল। আচমকা ছেলেটি প্রশ্ন করল, আঙ্কেল! আপনাদের সময় কি অত লেখাপড়া ছিল না ?  
: না বাবা, আমাদের সময় অত চাপ ছিল না। সকাল ১০ টায় স্কুল বসত । সাড়ে ৪ টায় ছুটি হত। বাসায় ফিরেই বইখাতা রেখেই এক দৌড়ে খেলার মাঠে। মাগরেবের আজান পর্যন্ত খেলতাম। আচ্ছা, তুমি তো খেলার কথা বল নাই। খেল কোন সময়
: আপনি তো আমার রুটিন শুনেছেন। বলুন তো খেলাধুলা করার কোন সুযোগ আছে কি? আমাকে তো শুধু পড়তেই হয়, যতক্ষণ না ঘুমাই। যে সমস্ত দিনে স্কুল বন্ধ থাকে, ঐসব দিনগুলোতে একটু সুযোগ পাই। তাও পুরোপুরি নয়, কোচিং এর জ্বালায়। আপনাদের সময় কি কোচিং ছিল না? 
: না, বাবা। এই বিদঘুটে জিনিসটা তখন ছিল না। শিক্ষকরা খুব যত্ন করে ক্লাসে শিখিয়ে ছাড়তেন। তারপরেও যাদের সমস্যা হত তারা ২-৩ মাস প্রাইভেট পড়ত। ব্যস! এর বেশী আর কিছু না। 
: আসলেই আপনাদের সময় জীবনটা অনেক সুন্দর ছিল। আপনারা অনেক আনন্দ ফুর্তি করেছেন। আর এখন ! শুধু লেখাপড়া আর লেখাপড়া। এত লেখাপড়া করে কী হবে !                                                          
: তোমার রেজাল্ট বর্তমানে কেমন? আর সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় কেমন ছিল?  

সে বিস্তারিত বলল (যথেষ্ট ভাল । আমি এখানে উল্লেখ করা নিষ্প্রয়োজন মনে করছি)তবে উল্লেখ করছি সে কয়টি কথা যেগুলো উচ্চারিত হওয়ার সময়ে তার কণ্ঠে ছিল হতাশা, বিষাদ আর আতংক:  সবাই বলে আমাকে আরও ভাল ফল করতে। কিন্তু আমি আর কত ভাল করব ? আমার তো একটা সীমা আছে!  আমি যেন তড়িতাহত হলাম ক্ষুদে বাচ্চা, জীবন কী, জীবন সংগ্রাম কাকে বলে ইত্যাদি বুঝার আগেই সে নৈরাশ্যবাদীদের দলে ভিড়ে যাচ্ছে। আসলে ভিড়ছে না, তাকে ঐদিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এই ঠ্যালাটা দিচ্ছে কে ? প্রত্যক্ষভাবে এই বাচ্চাটার সবচে আপনজন যারা, তারাই অর্থাৎ তার মা-বাপ আর শিক্ষক আর পরোক্ষভাবে এই শিক্ষাব্যবস্থা এবং এই সমাজ। যেখানে শিক্ষার মাধ্যমে তার মেরুদণ্ড সোজা করার কথা, সেখানে শিক্ষার ভারে তাকে নিষ্পেষিত করা হচ্ছে । এর পরিণতি কি ? ভবিষ্যৎ অজ্ঞাত, তবে ক্ষেত্র বিশেষে অনুমেয়। বছর দুয়েক আগে পত্রিকায় একটি খবর পড়েছিলাম। দিল্লীর এক নামকরা স্কুলের ক্লাস টেনের এক ছাত্র বাপমায়ের বকুনি খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল। আর তার বাবা-মা তাকে এ কারণে বকেছিল যে সে পরীক্ষায় ৩য় হয়েছিল, ১ম হতে পারে নি!(অথচ বাবা-মা দেখেনি যে, ছেলেটি ৮৯% নম্বর পেয়েছিল)।        

ইতোমধ্যে ২৭ নম্বর চলে আসায় বাচ্চাটি উঠে দাঁড়াল। নামার প্রাক্কালে আমি তাকে উৎসাহ দিয়ে কেবল এটুকু বললাম, তুমি একজন মেধাবী ছেলে। তোমার মা-বাবাকে বল যে রাতের টিচারকে বাদ দিয়ে দিতে। উনার সাহায্য না পেলেও বিশ্বাস কর, তোমার রেজাল্ট একটুও খারাপ হবে না। ছেলেটি, মনে হয়, বুঝতে পারল। সে নেমে গিয়ে আমাকে টা টা দিল। আমিও দিলাম। তবে বিমূঢ় হয়ে ভাবতে থাকলাম ছেলেটির পক্ষে ঐ কথাটি তার অভিভাবককে বলার হিম্মৎ হবে তো! কিম্বা যদি বলে তবে অভিভাবক সেটা গ্রহণ করবে তো!! নাকি ভাববে তার প্রিয় পুত্রটি লেখাপড়া জানে না এমন কোন এক মূর্খের পাল্লায় পড়েছিল !!! তারপরে নসিহত করবেঃ বাবা কারো কথায় কান দিও না। আরও বেশী করে পড়, পড় এবং পড়

ঘটনা -
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৬ ভাগ্নিকে বললাম, বেড়াতে চল। সে বলল, মামা! কোচিং খুলে গেছে, যেতে হবে। আজ আবার পরীক্ষাও আছে। রীতিমত বেকুব বনে গেলাম। স্পষ্ট মনে আছে আমার এই ভাগ্নিটি ১২ তারিখেও কোচিং করেছে।  অর্থাৎ কুরবানির ঈদে সে বন্ধ পেল মোটে ২ দিন --- ১৩, ১৪ তাও পুরোপুরি ভোগ করতে পারে নি কারণ ১৫ তারিখের পরীক্ষার প্রস্তুতির একটা চাপ ছিল। অথচ আমজনতা জেনেছে যেটানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে গোটা দেশকে জানে ! কোচিং সেন্টারটি  হয়তো দেশ-জাতির কল্যাণে সুপারম্যান তৈরি করতে চায়! কিন্তু আমার কেবল  মনে হচ্ছে যে,  ওখানকার কোচেরা মানসিক বিকারগ্রস্থ। তাই তারা ঈদের  আনন্দটুকু নিজেরাও বিসর্জন দিচ্ছে এবং তাদের ছাত্র-ছাত্রীদেরকেও ঐ ব্যাপারে বাধ্য করছে। কৌতূহলী পাঠকদের জ্ঞাতার্থে বলছি, ঐ কোচিং সেন্টারটির নাম চারুপাঠ’, অবস্থান ঢাকার মিরপুর ২-এ।         

ঘটনা-
এবার একটি ছোট্ট শিশুর কথা বলছি যার বয়স মাত্র ছয় সে MIT-তে পড়ে                                                           

প্রিয় পাঠক! নিশ্চয়ই চমকে ওঠেছেন। তবে আপনার চমক আরও বাড়বে যখন আপনি জানবেন যে (১) ছেলেটি আদৌ কোন বিস্ময় বালক নয় ; (২) এই MIT সেই MIT নয় , যদিও কর্তৃপক্ষ হাবভাবে সেটাই জাহির করতে চায়

তাহলে ?
আসলে এই শিশুটি একটি সিস্টেমের বলিসেই সিস্টেমের নামকেজি তে শিশু শিক্ষাআর এই MIT হল সেই বধ্যভূমি। এই বধ্যভূমিটির পুরো নাম Mirpur International Tutorial ; এর অবস্থান মিরপুরের ২নং সেকশনের ডি-ব্লকে কেবল মিরপুরেই নয়, সারা দেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে এ ধরণের অগণিত বধ্যভূমি বিদ্যমান স্থানীয়ভাবে এই বধ্যভূমিগুলো বাচ্চাদের স্কুল নামে পরিচিত খাস করে MIT-র কথা উল্লেখ করার কারণ হল, ঐ ছোট্ট শিশুটিসম্পর্কে আমার নাতী হয়বাসার কাছে বলে ছেলেটির মা তাঁকে সেখানে ভর্তি করিয়েছিল কিন্তু বছরের শুরুতে যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মা-ছেলে লেখাপড়া শুরু করেছিল, তার নিরানব্বই ভাগ এখন গায়েব হয়ে গেছেবাকি একভাগ কোন রকমে টিকে আছেকিন্তু কেন ?

ই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবেন দেশের তাবৎ শিশু মনস্তত্ত্ববিদগণ এবং অন্যান্য জ্ঞানীগুণীরা আমরা সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যেভাবে দেখি, সরল ভাষায় সেভাবেই বলে ফেলি 
          
কেজির শিক্ষকরা এমন চাপ দেয় যেন এদের উদ্দেশ্য প্রতিটি বাচ্চাকে তারা নিউটন কিংবা আইনস্টাইন বানিয়ে ছাড়বেই ছাড়বে এদের সাথে কথা বললে আপনাকে শুনিয়ে দেবে, প্রতিভা বলে কিছু নেই পরিশ্রম করলে সবাই সব হতে পারে অথচ দিনের আলোর মত উজ্জ্বল  সহজ সত্যকে ওরা অস্বীকার করে পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত নিউটন একজনই হয়েছেন, আইনস্টাইন আরেকজন হন নি ম্যারাডোনার চেয়ে অনেক বেশী সুযোগ পেয়ে এবং পরিশ্রম করেও দ্বিতীয় কোন ম্যারাডোনা তৈরি হয় নি উসাইন বোল্টের কাছে পরাজয় বরণকারীরা সকল ধরণের সুযোগ সুবিধা সমপরিমাণে পেয়েছিল। একই প্রতিষ্ঠানে, একই শিক্ষকের কাছে পড়াশুনা  করে ডঃ মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহ, ডঃ সাজ্জাদ হুসেন, ডঃ হাসান দানি, ডঃ মরিয়ম মীর্জাখানি কিন্তু একজন করেই তৈরি হয়েছে এই কথার মাধ্যমে আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি যে, পৃথিবীর সব লোক  অসাধারণ হবে না, যতই সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক না কেন কিম্বা ওদেরকে নিয়ে যতই খাঁটা খাটুনী করা হোক না কেন! সুতরাং সবাইকে অসাধারণ কিংবাসেরা বানিয়ে দেবারচিন্তাটা স্রেফ পাগলামি, এই কথার প্রচারনা পুরোপুরি ধোঁকাবাজি অথচ এই প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন এ দেশের বাবা-মা রা। আর তাদের সেই অলীক আকাঙ্ক্ষার যূপকাষ্ঠে বলী হচ্ছে ঐ সকল শিশুরা যারা দু’দিন আগেও মায়ের আঁচলের তলে ঘুমাত।   


























ভর্তির সময় শিশুদের হাতে এমন একটি ফর্দ ধরিয়ে দেয়া হয় যাতে শিশু ও অভিভাবকরা হয় আতংকিত, তবে ব্যবসায়ীরা পুলকিত (এখানে উদাহরণস্বরূপ এটি পেশ করা হল, নচেৎ সকল কেজি স্কুলে প্রায় একই কাজ করা হয়)   
আমার নাতীটি প্রায় প্রশ্ন করে, দাদু! কত বৎসর বয়স হলে আর লেখাপড়া করতে হবে না ? আমি বলি, কেন ভাই ? লেখাপড়া করতে বুঝি মন চায় না! ছোট্ট শিশু তার মত করে উত্তর দেয়, একদম না ওটা সবচে পচা কাম। আম্মু রাগ করে, শুধু এজন্যই পড়ি। তা নাহলে সবগুলো বই পুকুরে ফেলে দিতাম। মাছেরা লেখাপড়া করুক!

এমন মানসিকতা নিয়েই বেড়ে ওঠছে এদেশের কোন একটি প্রজন্ম। কচি মনটিতে দিনের পর দিন  ঘনীভূত হচ্ছে লেখাপড়ার প্রতি প্রচণ্ড বিদ্বেষ  হবে নাই-বা কেন ? ছয় বৎসরের শিশুর কাঁধে যদি বারোটার বেশী বই তুলে দেয়া হয় এবং এরপরও যদি কোন শিশুর কাছে  লেখাপড়াঅচ্ছুৎ না হয় তাহলে ঐ শিশু অস্বাভাবিক আমরা চাই না আমাদের শিশুগুলো অস্বাভাবিক হয়ে যাক । বরং আমরা চাইব যে প্রতিটি শিশু হোক এক একটি প্রাণোচ্ছল প্রজাপতি। আমাদের শিশুরা হাসবে, খেলবে, লাফাবে এবং তার ফাঁকে ফুঁকে লেখাপড়াও করবে। আর সেই ‘লেখাপড়াটা’ সে করবে মনের আনন্দে আগ্রহান্বিত হয়ে, ‘লেখাপড়ার’ প্রতি বিদ্বেষ-বিতৃষ্ণা আর বিরক্তি নিয়ে নয়।  কিন্তু শিশুশিক্ষার নামে বর্তমানে  দেশ-জাতি যে পথে হাঁটছে তাতে কি আদৌ তেমন কিছু আশা করা যায় ? অতএব, আমরা প্রস্তুত হতে থাকি কোন এক অবাঞ্ছিত আগামীর জন্য কারণ এটা একটি প্রাকৃতিক নিয়ম যে: What can’t be cured must be endured. 


লেখকঃ
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন