মহান আল্লাহ্ পাকের
শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি মানুষ। আর মানুষের মধ্যে আল্লাহ্ সর্বোত্তম করেছেন নবী আলাইহিস
সালাম গনকে। নবী হওয়াটা এতই উচ্চ পর্যায়ের ব্যাপার যে পৃথিবীতে সাধনার দ্বারা কেহ
কোন কালে নবী হয়নি এবং হবেও না। এটা একান্তই আল্লাহ্ পাকের দান। সুতরাং কোন
মানুষের সম্পর্ক নবীর সাথে এবং অ-নবীর সাথে সমান হতে পারে না।
একজন মানুষের ওপরে
একজন নবী বিশেষতঃ সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের কি কি হক বা অধিকার রয়েছে,
ঐগুলো এখানে উল্লেখ করার আশা করছি।
ঐগুলো এখানে উল্লেখ করার আশা করছি।
প্রথম হক : ঈমান
গোটা মানবজাতির প্রথম ও প্রধানতম মৌলিক কর্তব্য একমাত্র সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ্ পাকের উপর ঈমান আনা। অতঃপর দ্বিতীয় যে মৌলিক দায়িত্ব উহা হচ্ছে সকল নবী-রাসুলের প্রতি ঈমান রাখা। এক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর ঈমান এভাবে রাখতে হবে যে তিনি সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। দুনিয়ার প্রতিটি মানুষের ওপর নবী এই হকের অধিকারী।
দ্বিতীয় হক : আনুগত্য
শেষনবীর প্রতি ঈমান আনয়নের পর নবী যে হকের অধিকারী হন, উহা হচ্ছে নিঃশর্ত আনুগত্যের। নবী যা করতে বলেন তাতে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।
শেষনবীর প্রতি ঈমান আনয়নের পর নবী যে হকের অধিকারী হন, উহা হচ্ছে নিঃশর্ত আনুগত্যের। নবী যা করতে বলেন তাতে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।
তৃতীয় হক : অনুসরণ
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসৃত হওয়া নবীর আরেকটি হক।
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসৃত হওয়া নবীর আরেকটি হক।
চতুর্থ হক : সুন্নাতকে বর্জন না করা
নবীর এটাও একটি হক যে উম্মত তাঁর
সুন্নতকে বর্জন তো করবেই না, বরঞ্চ মৃত সুন্নাতকে জিন্দা করবে।
পঞ্চম হক : মহব্বত
ওপরের তিনটি হক কেবল রোবটের মত নয়, বরং মহব্বতের সাথে আদায় করতে হবে। ঐ মহব্বত কতটুকু? একটি হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে মহব্বত দুনিয়ার সকল বস্তু এবং ব্যক্তি এমনকি নিজ হতেও বেশী হতে হবে।
ওপরের তিনটি হক কেবল রোবটের মত নয়, বরং মহব্বতের সাথে আদায় করতে হবে। ঐ মহব্বত কতটুকু? একটি হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সে মহব্বত দুনিয়ার সকল বস্তু এবং ব্যক্তি এমনকি নিজ হতেও বেশী হতে হবে।
ষষ্ঠ হক : ভক্তি- শ্রদ্ধা
মহব্বতের প্রাবল্যে নবীর প্রতি আচরণ যেন
লাগামহীন হয়ে না পরে, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। মানুষ হতে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভক্তি ও
শ্রদ্ধা পাওয়াটা নবীর অন্যতম অধিকার। আর নবীর শানে ধৃষ্টতা!
এ বিশ্বের বুকে আজতক যত কুরআন-হাদিস-ফিকাহ বিশারদ জন্ম নিয়েছেন, যাদের নির্দেশনা অনুসারে আমরা নামাজ-রোজা-হজ্ব-কুরবানি করি, তাদের সকলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এটাই যে, নবীর(সাঃ)শানে বেয়াদবের একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ । শরিয়ত একজন ব্যক্তিকে এটুকু অধিকার দিয়েছে যে, আপন জনের হত্যাকারীকে মাফ করে দিয়ে ‘রক্ত মূল্য’ নেয়ার; কিন্তু গোটা মুসলিম উম্মাকেও সম্মিলিতভাবে এই অধিকার দেয় নি, নবীর(সাঃ)শানে বেয়াদবকে মাফ করার।
এ বিশ্বের বুকে আজতক যত কুরআন-হাদিস-ফিকাহ বিশারদ জন্ম নিয়েছেন, যাদের নির্দেশনা অনুসারে আমরা নামাজ-রোজা-হজ্ব-কুরবানি করি, তাদের সকলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এটাই যে, নবীর(সাঃ)শানে বেয়াদবের একমাত্র শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ । শরিয়ত একজন ব্যক্তিকে এটুকু অধিকার দিয়েছে যে, আপন জনের হত্যাকারীকে মাফ করে দিয়ে ‘রক্ত মূল্য’ নেয়ার; কিন্তু গোটা মুসলিম উম্মাকেও সম্মিলিতভাবে এই অধিকার দেয় নি, নবীর(সাঃ)শানে বেয়াদবকে মাফ করার।
সপ্তম হক : দরূদ পাঠ
ইহাও নবীর একটি বিশেষ অধিকার যে, মানুষ তাঁর
জন্য দরূদ পাঠ করবে।
অষ্টম হক : রওজা শরীফে হাযির হওয়া
নবীর এটাও একটি বিশেষ
অধিকার যে, মানুষ তাঁর রওজা শরীফ যিয়ারত করবে। আর যে ব্যক্তির এই সামর্থ্য নেই, সে
হৃদয়ে রওজা শরীফ যিয়ারতের তীব্র আকাঙ্খা লালন করবে।
[কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ এই হক সমূহ লেখার ব্যাপারে আমি ২ টি বইয়ের সাহায্য নিয়েছিঃ (১) রাসুলুল্লাহ (সা)-এর শান ও মর্যাদা এবং তাঁর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের পরিণাম – মাওলানা ইমদাদুল হক, শায়খুল হিন্দ ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র, সেক্টর ৩, উত্তরা, ঢাকা ১২৩০ ; (২) হুকূকুল মোস্তফা (সা) – মুফতি মাহমুদ হাসান ,দারুল কিতাব, ৫০ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০]
এখানে এটা উল্লেখ করা
প্রয়োজন যে যদি কেহ এই হক সমূহ পালন না করে কিংবা অন্যকে পালনে বাঁধা দেয় তবে
ক্ষতি কার ? এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআন শরীফ থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি : “ অবশ্যই যারা
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের বিরোধীতা করবে তারা অনেক অপমানিত হবে।”(৫৮ : ২০)
অনেক সময়ে রাসুল-ভক্তরা ঐ সকল বিরোধীদের আস্ফালন দেখে শোকে-দুঃখে হতাশ হয়ে পরে। ভাবতে থাকে আল্লাহ্ পাকের শাস্তি আসে না কেন !
কিন্তু নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহ্ পাকের বিচারের কাঠি এত আস্তে নড়ে যে আওয়াজ হয় না! আসলে আল্লাহ্ পাক ওদেরকে ঢিল দেন। অতঃপর তাঁর ইচ্ছামত সময় পাকড়াও করে থাকেন। ইতিহাসে এমন ঘটনার নজীর অনেক! আমি শুধু দুটো ঘটনা উল্লেখ করছি।
১৯৬৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে লিবিয়ায় ক্ষমতায় আসে কর্নেল গাদ্দাফি। দোষে-গুনে মিলে মানুষ। সে হিসাবে বলা যায় যে অনেক উন্নয়নমূলক ও জনহিতকর কাজ গাদ্দাফি করেছিল। কিন্তু তাঁর সবচে বড় দোষ ছিল এটা যে, সে নবীজির নাম পর্যন্ত শুনতে পারত না। জুম্মার খুতবাতে সে নবীজির নাম উল্লেখ করা নিষিদ্ধ করে। এই গাদ্দাফির পরিণতি আমরা দেখেছি, বিশ্ব দেখেছে। যাদের জ্ঞান চক্ষু উন্মীলিত হয় নি, তারা ভাবে আমেরিকার কারসাজীতে এসব হয়েছে। কিন্তু এমন চিন্তাধারা চরম পর্যায়ের মূর্খতা বৈ আর কিছু নয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আমাদের এই দেশের অর্থাৎ বাংলাদেশের এবং সাম্প্রতিক । বছর দুয়েক আগে এদেশের কিছু নবী বিদ্বেষী কোন এক ছুতায় ঢাকার শাহবাগে জড় হয়। ঐ সকল কুলাঙ্গাররা নবীর শানে এমন এমন ভাষা ব্যবহার করেছিল যা মানব সভ্যতার ইতিহাসে কেহ কোনদিন করে নাই। কিন্তু ওরা বুঝে নি যে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ পাক তাদেরকে ঢিল দিচ্ছেন। ওদের বাড় এতদূর বেড়েছিল যে সংসদে ওদের কথা আলোচিত হত, ওদের জন্য মুফতে বিরিয়ানির ব্যবস্থা হত, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ওদেরকে VIP Protection দিত। কিন্তু আজ! এখনো দুই বৎসর হয় নি। ওদের অস্তিত্ব নিভু নিভু, হারিকেন দিয়ে খুঁজেও ওদেরকে পাওয়া যায় না। অথচ সেই একই সরকার, একই আইন শৃঙ্খলা-বাহিনী ! সমাজে ওরা চরমভাবে অপাংক্তেয়। শুধু কি তাই ? ওদের দুষ্কর্মের জন্য মানুষের মুখে মুখে চরম ঘৃণা ব্যঞ্জক নতুন একটি শব্দ ‘শাহবাগি’ চালু হয়েছে।
অতএব, বিবেকবান মাত্রই নবীর হক আদায়ের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা একান্ত জরুরী। অন্যথায় আসমানি গযব অবশ্যম্ভাবী যদিও তাঁর সূরত এবং ক্ষণ অনিশ্চিত।
লেখক:
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন