-->

একটি ফতোয়া: প্রতিক্রিয়া এবং প্রত্যাশা



দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে বসেছি যে বিষয়ে আমি একজন আনাড়ি। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় না লিখেও পারছি না। অতি সম্প্রতি ইফাবার তরফ থেকে একটি ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে যার মুখ্য বিষয় ‘চেয়ারে বসে নামাজ পড়া’।



কথা অনস্বীকার্য যে গত এক দশকে চেয়ারে বসে নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা লক্ষ্যণীয় হারে বেড়ে গেছে। এমন কী এদের ক্ষেত্রে ‘চেয়ারম্যান’ শব্দটি প্রচলিত পরিভাষার রূপ ধারণ করেছে। ঢাকা শহরে এমন মসজিদ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে কাতারের কোণায় অনেকগুলো চেয়ার সাজিয়ে রাখা নেই। অথচ ১৫-২০ বৎসর আগে কোথাও এ দৃশ্য দেখা যেত না। সকল মুসলমান নিদেনপক্ষে এটুকু জানে যে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া ফরজ। সুতরাং বসে নামাজ পড়লে এই ফরজটি আদায় হচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন আসে মাজুর হওয়ার শর্ত নিয়ে।



শ্রুতিকটু হলেও এটা সত্য যে ইদানিং প্রায় প্রত্যেকে নিজকে মুজতাহিদ মনে করে। তাই বলা-কওয়া নেই, হঠাৎ করে এক এক জনকে দেখা যায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়া শুরু করতে। অথচ সে এ ব্যাপারে কোন বিজ্ঞ আলেমের সাথে পরামর্শ করেনি। আমার অভিজ্ঞতায় আমি এই ধরনের ‘চেয়ারম্যানদেরকে’ ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করেছি: (ক)এমন অক্ষম যে কারো সাহায্য ব্যতীত দাঁড়াতেও পারে না। (খ) হাঁটাচলা সবই করতে পারে, তবে বয়সের কারণে গতি ধীর। এদের অনেকেই প্রতিদিন রুটিন মত ৪০-৫০ মিনিট ডায়বেটিসের জন্য হেঁটে থাকেন। কিন্তু মসজিদে প্রবেশ করা মাত্র উনারা চেয়ারে বসার জন্য ব্যস্ত হয়ে যান। (গ) একটু মাথা ধরল কিম্বা পেট বা গলা ব্যথা করল, ব্যস চেয়ারে নামাজ পড়া শুরু করল। (ঘ) স্যুট-কোট এর ভাঁজ ভেঙে যাবে অথবা পরনের কাপড়ের পরিপাটি নষ্ট হয়ে যাবে এই আশঙ্কায় চেয়ারে বসে নামাজ আদায় করে থাকেন।


এহেন পরিস্থিতিতে ইফাবার ফতোয়াটি একটি স্পষ্ট আলোকবর্তিকা। এর কল্যাণে অনেকেই তাদের ভুল শুধরে নেবে এবং কাউকে ভুল করতে দেখলে তাকে নসিহত করা যাবে। আসলে এই ফতোয়াটি আরও অনেক আগেই দেয়া উচিত ছিল। তারপরেও বলব যে দেরিতে হলেও এটি একটি অতি উত্তম কাজ হয়েছে। কিন্তু আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম যখন দেখলাম এদেশের সর্বজনমান্য ও নির্ভরযোগ্য কিছু আলেম এই ফতোয়ার বিপক্ষে বিবৃতি দিলেন (দ্র: জুন ০২, ২০১৫; দৈ. নয়া দিগন্ত, ২য় পৃষ্ঠা)

মাসলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতের পার্থক্য ছিল, আছে এবং থাকবে। এমনকি এই পার্থক্যকে ততক্ষণ রহমত হিসেবে গণ্য করা হয় যতক্ষণ দ্বীনের সহিহ বুঝ একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু যে বিরোধীতার উল্লেখ করলাম সেখানে যুক্তিগ্রাহ্য এবং বস্তুনিষ্ঠ কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। আমার কাছে মনে হল- এ যেন বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা! যেহেতু উল্লেখিত বিরোধী আলেমগণ সকলে দেওবন্দি ঘরানার, তাই কৌতুহল হওয়াতে দেওবন্দ মাদ্রাসার website –এ কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করি । সেখানে প্রাপ্ত কয়েকটি তথ্য উদ্ধৃত করছি (সূত্রঃwww.darulifta-deoband.org/ )

Question: 23774 2-if someone is not able to offer namaz on janamz can he do it on chair with using a table for sajda in front of chair..... Answer: 23774 ; Jul 24,2010 (Fatwa: 1153/1153/M=1431)(2) If you mean that a person is not able to offer salah standing but he can offer salah with rukuh and sajdah sitting on earth, in this case it is not lawful for him to offer salah sitting in a chair, he should offer salah sitting on earth with ruku and sajdah.

Question: 13629 1. How is it to offer Salaat on a chair? 2. If someone can offer Salaat on a Chair as well as on the ground; which is preferable? 3. If someone could have offered Salaat standing but offered on chair, will he have to repeat the Salaats he performed on a chair? 4. Under what circumstances is performing Salaat on a chair permissible? Answer: 13629 ; Jul 01,2009 (Fatwa: 1044/1044=M/1430) One who cannot perform salah standing and can perform ruku and sajdah, it is better for him to perform salah sitting. As the salah is performed sitting on ground with ruku and sajdah, in the same way it will be performed on chair as well. (2) In this case, performing salah sitting on ground is better. (3) Yes, the salah must be performed again. (4) If someone is unable to stand up, he can perform salah on chair.

Question: 13721 Assalamu alaikum, We have few elderly and disabled people and also young men using chairs to pray as they cannot perform sajda. Few brothers are saying that there in no mention of praying using chairs in any hadiths and their prayers are not valid. Could you please advice. Jazakamullah khairu Answer: 13721; Jun 13,2009 (Fatwa: 1082/924=D1430)If someone is unable to perform salah with ruku and sajdah standing, he should perform salah sitting whether ruku and sajdah are performed in proper way or with isharah (gesture). So, in case of being able to perform sitting at ground, it is not correct to perform salah sitting in chair. If one is unable to perform salah sitting at ground with proper ruku and sajdah, his salah at chair with isharah is unlawful and the salah will be invalid. Those who perform salah at chair, what excuse they offer, they should explain the same and ask the questions themselves.
 

অতএব, দেখা যাচ্ছে যে ইফাবা নতুন করে এমন কিছুই বলেনি যাতে বিতর্কের সূত্রপাত হতে পারে। বরঞ্চ তিক্ত হলেও সত্য যে দেওবন্দের অনুসারী বলে দাবিদার এদেশের কওমি মাদরাসাগুলো এই ব্যাপারে গাফালতি করেছে। তাদের উচিত ছিল অনেক আগেই এই ফতোয়াটি প্রচার করা (নতুবা দেওবন্দ কর্তৃপক্ষ যে ভুল করছে তা দেখিয়ে দেয়া )। তাহলে মসজিদে মসজিদে চেয়ারম্যানের সংখ্যা এত বাড়ত না এবং এত হুলস্থূল হত না। এদেশের ৭০% এর বেশি মসজিদের ইমামগণ দেওবন্দি ধারার। এদেশে দ্বীন টিকে আছে তাদের উসিলায়। সময়ে-অসময়ে দ্বীনের উপরে কোন আঘাত আসলে ঠেকানোর জন্য তারাই সর্বাগ্রে এগিয়ে যান। কিন্তু শরয়ী ওজর ব্যতিরেকে চেয়ারে নামাজ পড়ার কারণে বহু লোকের নামাজ নষ্ট হয়ে যাবার যে এই বিষয়টি, সেদিকে তারা নজর দেননি।

তাই মহান আল্লাহ্ পাক তার চিরন্তন নীতি অনুযায়ী ইফাবা’র মাধ্যমে এই দ্বীনি খিদমতটুকু নিলেন। আমরা আম-জনতা সর্বদা এই প্রত্যাশা করি যে গুরুত্বপূর্ণ দ্বীনি ইস্যুতে এই দেশের আলেমসমাজ এক থাকবেন, পরস্পরের সাহায্যকারী হবেন। দ্বীনের খাতিরে তারা ভুলে যাবেন কে কওমি, কে আলিয়া, কে এটা-কে ওটা। উনাদের কাছেই তো আমরা শুনেছি মহান আল্লাহ্ পাক তার দ্বীনের হেফাজতের জন্য কারো মুখাপেক্ষী নন। আল্লাহ্ পাক যদি ইচ্ছা করেন তো ক্ষুদ্র পিপীলিকার দ্বারা সেই খিদমত নিতে পারেন, যে খিদমত অতিকায় হাতিও করতে অক্ষম।

লেখক:  
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক ও কলামিস্ট
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭  
ই-মেইল : sparvez@daffodilvarsity.edu.bd

প্রথম প্রকাশঃ ৭ জুন ২০১৫ ধারাবাহিকভাবে দুই পর্বে breakingnews.com.bd ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
লিঙ্কঃ 
              একটি ফতোয়া: প্রতিক্রিয়া এবংপ্রত্যাশা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন