হঠাৎ করে একটি সূত্রের
আবিষ্কার নিয়ে বেশ তোলপাড় শুরু হয়েছে। সূত্রটি হল আল-কুরআনের সূরার সংখ্যা অর্থাৎ
১১৪ সংখ্যাটি ব্যবহার করে যে কোন লোকের বয়স নির্ণয় করা সংক্রান্ত। সূত্রটির বর্ণনাঃ জন্মসালের শেষের দুই সংখ্যা নিতে হবে। এবার সূরার
সংখ্যা
অর্থাৎ ১১৪ হতে উক্ত দুই সংখ্যা বিয়োগ করতে হবে। প্রাপ্ত বিয়োগফলের সাথে দুই যোগ করতে হবে। তাহলেই বয়সের সংখ্যাটি বের হয়ে আসবে। (বয়সটি পাওয়া যাবে ২০১৬ সালের হিসাবে)। উদাহরণঃ কারো
জন্ম ১৯৮৭ সালে হলে বর্ণিত সুত্রমতে তার বয়স = (১১৪ – ৮৭) + ২ = ২৯ বৎসর।
আসলেও ২০১৬ সালে তার বয়স ২৯ বৎসর হয়েছিল।
এই
সূত্রটিকে কেহ কেহ আল-কুরআনের একটি সাংখ্যিক অলৌকিকত্ব (মুযিযা) হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে লিখতে বাধ্য হচ্ছি যে, এই অদ্ভুত
সূত্রটির মাধ্যমে আল-কুরআনের মর্যাদা
ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। যেমন, কারো জন্ম ২০১০ সালে হলে তার বয়স ২০১৬ সালে হয় ৬ বৎসর। অথচ ঐ
সূত্রটি
ব্যবহার করলে তার বয়স হয় (১১৪-১০) + ২ = ১০৬ বৎসর ! আবার তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা
হযরত ইলিয়াস(রঃ) (জন্ম ১৮৮৫ খ্রিঃ) বেঁচে থাকলে ২০১৬ সালে ১৩১ বৎসর পুরো করতেন।
কিন্তু সূত্রমতে মরহুম হযরতযির বয়স (১১৪-৮৫)+ ২ = ৩১ বৎসর হয়! অতএব, উহা যে একটি হাস্যকর সূত্র এতে কোন
সন্দেহ নাই। সুতরাং সকল দোষত্রুটি মুক্ত আল-কুরআনের সাথে এমন একটি অর্থহীন সূত্রকে
জড়ানো চরম নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক।
এবারে আলোচনা করব সূত্রটি কেমন
করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রথমেই ধরে নেয়া
হয়েছে যে ব্যক্তির জন্ম ১৯০১-২০০০ সময়কালে হয়েছে।
অতঃপর মনেকরি, কমলের জন্ম ‘১৯পস’ সালে। অতএব, ২০১৬ সালে তার বয়স : (২০১৬-১৯পস) বৎসর। এখন
(১১৪-পস) সংখ্যাটি (২০১৬-১৯পস) এর সমান হতেও
পারে, নাও পারে।
ধরা
যাক, (২০১৬-১৯পস) = ১১৪-পস + ম
... ... (*)
এখন ম-এর মান নির্ণয় করতে হবে।যেহেতু ১০-ভিত্তিক সংখ্যামালা ব্যবহৃত হয়, সেহেতু (*)-কে নিচের নিয়মে লেখা যায়।
এখন ম-এর মান নির্ণয় করতে হবে।যেহেতু ১০-ভিত্তিক সংখ্যামালা ব্যবহৃত হয়, সেহেতু (*)-কে নিচের নিয়মে লেখা যায়।
২০ x ১০২ +
১০ x ১০১ + ৬ x ১০০
– (১৯ x ১০২
+ প x ১০১ + স x ১০০
)
= ১ x ১০২ + ১ x ১০১ + ৪
x ১০০ – (প x ১০১ + স x ১০০
) + ম
বা, ৬ x ১০০ – ৪ x ১০০ = ম
বা, ম = ২
বা, ম = ২
অতএব,
বুঝা গেল যে ব্যাপারটি একটি সাধারণ মানের গাণিতিক ধাঁধাঁ। যদি ২০১৮ সালে এই
হিসাবটি করতে হয়, তখন ম=৪ হবে এবং সূত্রটিকে এভাবে বর্ণনা করতে হবে: জন্মসালের শেষের সংখ্যা দুটো নিতে হবে। এবার সূরার
সংখ্যা
অর্থাৎ ১১৪ হতে উক্ত দুই সংখ্যা বিয়োগ করতে হবে। প্রাপ্ত বিয়োগফলের সাথে চার যোগ করতে হবে। তাহলেই বয়সের সংখ্যাটি বের হয়ে আসবে। ( তাহলে বয়সটি পাওয়া যাবে ২০১৮ সালের হিসাবে)। অধিকন্তু ১১৪ সংখ্যাটিরও এখানে কোন বিশেষত্ব নেই। ১১৪-এর
বদলে ১১০ (বা ১২০) ব্যবহার করলে (*) থেকে ম = ৬ (বা -৪) হবে।
সুতরাং কোন ব্যক্তি
১১০টি (বা ১২০টি) অধ্যায় বিশিষ্ট একটি বই লিখে দাবী করতে পারেঃ এই বইয়ের একটি অলৌকিকত্ব এই যে ইহার
অধ্যায়ের সংখ্যার সাহায্যে ১৯০১-২০০০ সময়কালে জন্মগ্রহণকারী যে কোন ব্যক্তির বয়স
২০১৬ সালে কত হবে নিম্নোক্ত সূত্রের সাহায্যে বের করা যাবেঃ
বয়স = {(১১০-জন্মসালের শেষ দুই
সংখ্যা) + ৬ } বৎসর।
অথবা, বয়স = {(১২০-জন্মসালের
শেষ দুই সংখ্যা) - ৪ } বৎসর।
অতএব, অনুধাবন করা উচিত যে, যারা
বয়স নির্ণয়ের তথাকথিত সূত্রটি আবিষ্কার করল, তারা আসলে কুরআনের সম্মানহানিই করেছে।
এর মাধ্যমে কুরআনকে খেল-তামাশার বিষয় বানানো হয়েছে।
নিঃসন্দেহে মহাগ্রন্থ আল-কুরআন
একটি মুযিযা। তবে প্রথমে বুঝতে হবে মুযিযা কী [সহজে বুঝার জন্য পড়তে পারেনঃ মিরাজ, মুযিযা ও বিজ্ঞান]! বর্তমান নিবন্ধে আলোচিত সূত্রটি মুযিযা হতে পারে না। বরঞ্চ
এ সকল বালখিল্য বিষয় নিতে মাতামাতি করে আমরা পবিত্র কুরআনের উপর জুলুম করছি। আমাদের
ভয় করা উচিত এই সতর্কবাণীকেঃ ‘ আর (কিয়ামতে) রাসূল বলবেন, হে
আমার রব, নিশ্চয় আমার জাতি এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে ’(২৫:৩০)।
==============
লেখাটি সঠিকভাবে পড়তে নিচের ছবিতে বা লিঙ্কে
ক্লিক করে PDF ফরম্যাটে পড়তে পারেন এবং ডাউনলোড করতে পারেন।
লেখকঃ
শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইল
: sparvez@daffodilvarsity.edu.bd শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক
মোহাম্মদ সালেক পারভেজ
সহকারী অধ্যাপক,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, ঢাকা ১২০৭
প্রথম প্রকাশঃ বাংলাটপনিউজ২৪ডটকম ওয়েবসাইটে ৫ মার্চ, ২০১৭ এ প্রকাশিত হয়েছে।
আর সেই হাস্যকর সুত্রটির লিঙ্কঃ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন